মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আরও চাপ বাড়াতে বড় চমকের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। দলের বক্তব্য, মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের পথ ধরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সারিতে অপেক্ষায় রয়েছেন তৃণমূলের আরও বিধায়ক ও সাংসদ। আগামী মঙ্গলবার বর্ধমানে খাগড়াগড়ের কাছে অমিত শাহের জনসভায় ফাঁস হবে সেই চমক। বিজেপি নেতৃত্বের এই ঘোষণা রক্তচাপ আরও বাড়িয়েছে তৃণমূলে।
এমনিতেই নানা ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরে অস্থিরতা চরমে। মাঝেমধ্যেই বেসুরো গাইছেন দলের সাংসদ ও মন্ত্রীরা। সারদা তদন্তের ধাক্কায় বেসামাল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বও। গত কালই দলের বৈঠকে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, এ বার তো অভিষেককেও ‘চোর’ বলা হবে। সন্দেহ নেই মমতার ওই মন্তব্য বিজেপির হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তবে এ নিয়ে শুধু কটাক্ষ বা রাজনৈতিক আক্রমণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না বিজেপি। বাংলার মাটিতে তৃণমূলকে আরও দুর্বল করে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য।
দু’দিন আগে রাজ্যের শাসক দলে ভাঙনের সূচনা হয়েছে মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে দিয়ে। দলে অবশ্য তিনি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ। তবু বিজেপির সাফল্য তৃণমূলের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভারপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের ঘোষণা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাদের। সিদ্ধার্থনাথের কথায়, “তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক ও সাংসদ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সারিতে অপেক্ষা করছেন।” তাঁরা কারা বা সংখ্যায় কত জন, এই প্রশ্নে সিদ্ধার্থনাথের জবাব, “একটু অপেক্ষা করুন। দেখুন না কেমন চমক দিই।”
দলে যে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী, মমতা নিজেও তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন। গত কাল পুরভোট নিয়ে দলের বৈঠকেই তার আঁচ মিলেছে। মমতাকে সেখানে বলতে শোনা গিয়েছে, যাঁরা দল ছাড়তে চান, তাঁরা যেতে পারেন। তাঁদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে।
সারদা কাণ্ডে জেরবার তৃণমূলকে চাপে রাখার কোনও সুযোগই বিজেপি হাতছাড়া করতে চাইছে না। কারণ তৃণমূলে ভাঙন ধরানোর পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের যোগাযোগ নিয়েও রাজনৈতিক আক্রমণ শানাতে চান অমিত। সভা করার জন্য তাই বর্ধমানের খাগড়াগড় লাগোয়া এলাকাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের যোগ নিয়েও সরব হবে বিজেপি শিবির, সেটাও অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।
কিন্তু এরই মধ্যে বিজেপিকে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে মমতার অভিষেক সংক্রান্ত মন্তব্য। মমতা কাল দলের বৈঠকে ভাইপোর উপস্থিতিতেই ‘চোর বলা হবে’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। এতে তৃণমূল শিবিরেই অভিষেকের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যা দেখে সিদ্ধার্থনাথ সিংহের তির্যক মন্তব্য, “মমতা তো পিসি। উনি অভিষেকের বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। যদি মমতা এই কথা বলে থাকেন তা হলে তা আগের ভবিষ্যৎবাণীগুলির মতোই ঠিক হতে পারে।” বিরোধী দলগুলি মনে করছে, তদন্তের আঁচ নিজের পরিবারে ঢুকে আসতে পারে বুঝেই আগাম সাফাই গেয়ে রাখলেন তৃণমূল নেত্রী।
অমিতের সভার প্রস্তুতিকে ঘিরে এ দিন কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয় বর্ধমানের বড়নীলপুর এলাকায়। ওখানে চৌরঙ্গি মাঠে সভা করার কথা অমিতের। ওই মাঠের আশপাশে আজ পোস্টার মারছিলেন বিজেপি কর্মীরা। অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকরা গিয়ে তাঁদের মারধর করে। এ বিষয়ে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেছে বিজেপি। যদিও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy