Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অরূপের মৃত্যুর প্রতিবাদে বন্‌ধ, নাজেহাল হাওড়া

সালকিয়ার প্রতিবাদী যুবকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে তিন রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্‌ধে বিপর্যস্ত হল হাওড়া শহরের জনজীবন। বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রান্তে দোকানপাট বন্ধ ছিল। যানবাহনও তেমন চোখে পড়েনি। যেটুকু ছিল তা-ও দফায় দফায় অবরোধের জেরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়ে। যার জেরে দিনভর নাকাল হতে হয়েছে যাত্রীদের।

সুনসান রাজপথ। বুধবার, হাওড়ায়।  —নিজস্ব চিত্র

সুনসান রাজপথ। বুধবার, হাওড়ায়। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

সালকিয়ার প্রতিবাদী যুবকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে তিন রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্‌ধে বিপর্যস্ত হল হাওড়া শহরের জনজীবন। বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রান্তে দোকানপাট বন্ধ ছিল। যানবাহনও তেমন চোখে পড়েনি। যেটুকু ছিল তা-ও দফায় দফায় অবরোধের জেরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়ে। যার জেরে দিনভর নাকাল হতে হয়েছে যাত্রীদের।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিপিএম, কংগ্রেস ও এসইউসিআই-এর এই প্রতিবাদ কর্মসূচি রুখতে পথে নেমে পড়ে তৃণমূল-বাহিনী। বালি থেকে শিবপুর— সর্বত্রই বাসস্ট্যান্ডে হাজির হন স্থানীয় তৃণমূলকর্মী ও সমর্থকেরা। তাঁরাই কার্যত জোর খাটিয়ে বাস চলাচল শুরু করান। তবে কোথাও কোথাও তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে মারধর করে অবরোধ তুলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। প্রতিবাদ আটকানোর চেষ্টা শুধু স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। হাওড়া পুরসভার কাউন্সিলর সহ পুরকর্মীরাও বন্‌ধ ব্যর্থ করতে রাস্তায় নেমে পড়েন।

কেমন ছিল এ দিনের বন্‌ধ-চিত্র?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সালকিয়ার যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর খুনের প্রতিবাদে এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় সিপিএম ও এসএউসিআই এর ১২ ঘণ্টা এবং কংগ্রেসের ২৪ ঘণ্টার বন্‌ধ কর্মসূচি। প্রথম অবরোধ হয় দাশনগর স্টেশনে। অংশ নেন প্রায় জনা পঞ্চাশ কংগ্রেস কর্মী। প্রায় এক ঘণ্টার এই অবরোধে হাওড়া দক্ষিণ-পূর্ব শাখার বেশ কয়েকটি লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন আটকে যায়। পরে বিশাল রেলপুলিশ বাহিনী গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। এর পরে অবরোধকারীরা পৌঁছন শানপুর মোড়ে। সেখানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এসইউসিআই কর্মীরাও। দু’দলের কর্মীরা মিলে প্রায় ঘণ্টাখানেক হাওড়া-আমতা রোড অবরোধ করে রাখেন।

বেলা বাড়ার সঙ্গেই অবরোধ শুরু হয় হাওড়া শহরের বিভিন্ন দিকে। সকাল সাড়ে আটটায় কদমতলা পাওয়ার হাউসের সামনে রাস্তায় বেঞ্চ পেতে বসে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা। একই ভাবে পঞ্চাননতলা মোড়েও তাঁদের অবরোধ হয়। হাওড়া ও ধর্মতলামুখী বাস আটকে পড়ায় ভোগান্তির শিকার হন অফিসযাত্রীরা। অনেকেই পায়ে হেঁটে হাওড়া স্টেশনের দিকে রওনা হন। আমতার বাসিন্দা রাহুল শর্মা বলেন, “ঘটনাটি ন্যক্কারজনক ঠিকই। কিন্তু তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আর পাঁচ জনকে সমস্যায় ফেলা ঠিক নয়।”

সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হাওড়া ব্রিজ অবরোধ করেন কলকাতার কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক-সহ জনা পঞ্চাশ কংগ্রেসকর্মী। দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রায় ৪০ মিনিট পথ আটকে থাকায় নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি তথা হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী ও অন্য তৃণমূল সমর্থকেরা।

বেলা বাড়ার সঙ্গেই একে একে অবরোধ হতে থাকে হাওড়া ময়দানের বঙ্গবাসী মোড়, ফোরশোর রোড, আন্দুল রোড-সহ সালকিয়ার বাঁধাঘাট এলাকায়। অভিযোগ, বাঁধাঘাটে হাওড়া রোডে অবরোধ চলাকালীন স্থানীয় তৃণমূলকর্মীরা অবরোধকারী কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে তুলে দেন। নিহত প্রতিবাদী যুবক অরূপের পাড়া বিবিবাগান এলাকা-সহ সালকিয়া চৌরাস্তা, বেনারস রোডেও যান চলাচল ছিল না থাকারই মতো। বন্ধ ছিল দোকানপাট। এ ছাড়া, হাওড়ার অন্যান্য প্রান্তের বাজার, স্কুল-কলেজও বন্ধ ছিল এ দিন।

কংগ্রেসের হাওড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক শুভজ্যোতি দাস এ দিন বলেন, “শুধু হাওড়া ব্রিজ নয়। বিভিন্ন জায়গা থেকেই তৃণমূল আমাদের কর্মীদের মারধর করে তুলে দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের এই প্রতিবাদী বন্‌ধ সফল।” যদিও তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “মানুষই বন্‌ধ ব্যর্থ করেছেন। আমরা কাউকে মারধর করিনি, বাধাও দিইনি। যে সে বন্‌ধ ডাকলে মানুষ তা মেনে নেবে, এটা ভাবা ঠিক নয়।”

এ দিনই সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ গোলাবাড়ি থানা ও ডবসন রোডে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠন। সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “বন্‌ধ সফল হয়েছে। শাসক দলের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষই রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arup bhandari arup death howrah srtike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE