Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উচ্চ প্রাথমিকে কাজ চালাতে অতিথি শিক্ষক

স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে টানাপড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এই অবস্থায় পঠনপাঠন অব্যাহত রাখার তাগিদে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি)-র শূন্য পদে অতিথি শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। স্কুলশিক্ষা দফতর সম্প্রতি একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছে, যে-সব উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে চার জন শিক্ষক নেই, সেখানে শ্রেণি-প্রতি এক জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০৪:০০
Share: Save:

স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে টানাপড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এই অবস্থায় পঠনপাঠন অব্যাহত রাখার তাগিদে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি)-র শূন্য পদে অতিথি শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। স্কুলশিক্ষা দফতর সম্প্রতি একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছে, যে-সব উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে চার জন শিক্ষক নেই, সেখানে শ্রেণি-প্রতি এক জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে।

বাম জমানায় পার্থ দে স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী থাকাকালীন হাজার চারেক উচ্চ প্রাথমিক স্কুল গড়ে তোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, “প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেই অনেক ছেলেমেয়ে স্কুল ছেড়ে দিত। দূরত্বই ছিল এর অন্যতম কারণ। সেটা মাথায় রেখেই উচ্চ প্রাথমিক স্কুল খোলা হয়েছিল ২০০৯-’১০ নাগাদ।” এখন সেই স্কুলের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি বলে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। শূন্য শিক্ষকপদ প্রায় ছ’হাজার। স্কুলগুলিতে ছ’টি করে শিক্ষকপদ থাকলেও আপাতত শ্রেণি-প্রতি এক জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর।

নিয়োগ হবে কী ভাবে? স্কুলে অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেবেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। তাঁর অফিসের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ, ব্লক এবং পঞ্চায়েত অফিসেও ওই বিজ্ঞপ্তি ঝোলানো হবে। জেলা স্কুল পরিদর্শকের অনুমোদন সাপেক্ষে স্কুল অতিথি শিক্ষকদের নিয়োগ করবে। সংশ্লিষ্ট স্কুল বা সেই অঞ্চলের কোনও স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরাই এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলেও জানানো হয়েছে।

নিয়োগের বিভিন্ন শর্তের মধ্যে আছে:

অবসরপ্রাপ্ত যে-সব শিক্ষকের বয়স ৬৪-র নীচে, তাঁরাই অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

নিয়োগ হবে সাময়িক ভাবে, ছ’মাসের জন্য।

ওই সময়সীমা পেরোনোর আগে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) মারফত পূর্ণ সময়ের শিক্ষক বাছাই হয়ে গেলে অতিথি শিক্ষকদের ইস্তফা দিতে হবে।

ছ’মাসের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও স্থায়ী শিক্ষক না-এলে শিক্ষকেরা চাইলে পুনর্নিয়োগ পেতে পারেন। তবে ৬৫-র বেশি বয়সিরা আর নিয়োগের সুযোগ পাবেন না।

অতিথি শিক্ষকেরা বেতন পাবেন শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। সাধারণ স্নাতক শিক্ষকেরা পাবেন মাসে পাঁচ হাজার টাকা। অনার্স ও স্নাতকোত্তর শিক্ষকেরা পাবেন সাত হাজার। পড়ানো তো আছেই। সেই সঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা, ফলপ্রকাশ-সহ সংশ্লিষ্ট সব কাজই করতে হবে অতিথি শিক্ষকদের।

কেন অতিথি শিক্ষক নেওয়া হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, এসএসসি-র বর্তমান মেধা-তালিকা থেকে রাজ্য জুড়ে শীঘ্রই ৩২২ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। তবে তার আগে যাতে শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন মার না-খায়, সেই জন্যই অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।

তবে এ ভাবে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে পঠনপাঠনের কত দূর সুরাহা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। প্রাক্তন স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী পার্থ দে এমন জোড়াতালি দিয়ে পড়াশোনা চালানোর সিদ্ধান্তের সাফল্য সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন। “স্থায়ী শিক্ষকের কাজকর্ম অবসরপ্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক দিয়ে চালালে হবে কী করে? রাজ্য সরকার তো শিক্ষক নিয়োগই করছে না,” বলেন তিনি।

বাম জমানার স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী এখন সংশয়ী হয়ে উঠলেও তথ্য বলছে, অবসরপ্রাপ্তদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে পড়াশোনা চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তাঁদের আমলেই। তবে তখন নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হত। তাই অতিথি শিক্ষক দিয়ে সাময়িক ভাবে কাজ চালালে তেমন সমস্যা হত না বলে প্রবীণ শিক্ষকদের অভিমত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। আদালতের স্থগিতাদেশ না-উঠলে এবং প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের বিষয়ে কেন্দ্রের ছাড়পত্র না-পেলে এসএসসি মারফত শিক্ষক বাছাইয়ের প্রক্রিয়া থমকেই থাকবে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে স্কুলগুলিকে পঠনপাঠন চালাতে হবে অতিথি শিক্ষকদের দিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE