Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উপাচার্যকে কড়া বার্তা দিলেন আচার্য

শিক্ষামন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন ইতিমধ্যেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের উষ্মা প্রশমন করতে এ বার আসরে নেমে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে কড়া বার্তা দিলেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও। শনিবার রাজভবনের তরফে সংবাদমাধ্যমে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, অনশনকারী পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন আচার্য তাঁদের অনশন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে কেন দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে তিনি সতর্ক করেছেন বলেও ওই ফ্যাক্স-বার্তায় জানানো হয়েছে।

অনশনে অসুস্থ ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় প্রতিবাদের মুখে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

অনশনে অসুস্থ ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় প্রতিবাদের মুখে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

শিক্ষামন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন ইতিমধ্যেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের উষ্মা প্রশমন করতে এ বার আসরে নেমে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে কড়া বার্তা দিলেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও।

শনিবার রাজভবনের তরফে সংবাদমাধ্যমে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, অনশনকারী পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন আচার্য তাঁদের অনশন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে কেন দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে তিনি সতর্ক করেছেন বলেও ওই ফ্যাক্স-বার্তায় জানানো হয়েছে। রাজ্যপালের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, এখন তাঁদের প্রথম ও প্রধান দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ। তাই সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত না হলে অনশন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজ্য সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ না থাকলেও জটিলতা কাটাতে নানা ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গত শুক্রবার উপাচার্য, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পৃথক ভাবে কথা বলেন তিনি। সেখানেও তিনি উপাচার্যের মুখোমুখি হয়ে নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি। শনিবার হাসপাতালে ভর্তি অনশনকারীদের দেখতে যান পার্থবাবু। অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ দিন সকালেই আরও এক অনশনকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে গিয়েও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি নিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পার্থবাবুকে। কিন্তু মন্ত্রী সে সব বিশেষ গায়ে মাখেননি। বরং বলেন, “আমার খারাপ লাগছে। এরা আমার পুত্রসম। যে কারণেই হোক, এরা অসুস্থ হওয়ায় খুশি হতে পারছি না।” তিনি জানান, পরিস্থিতি বিচার করে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কথা বলবেন। সংশ্লিষ্ট মহল বলতে পার্থবাবু আসলে মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।

এ সবের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় উপাচার্যের বিকল্প কি, তা নিয়ে প্রাথমিক ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বলে সরকারের একটি সূত্রের ইঙ্গিত। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কোনও ধারায় অভিজিৎবাবুকে অপসারিত করা যেতে পারে কি না, তা-ও সরকারের পরিকল্পনায় আছে বলে জানাচ্ছেন সূত্রটি। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি। নীরব থেকেছেন উপাচার্যও।

তবে উপাচার্যের ব্যাপারে রাজ্যপাল এই প্রথম কিছুটা কড়া বার্তা দেওয়ায় অভিজিৎবাবুর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এ দিন ফ্যাক্স-বার্তায় কী বলেছেন রাজ্যপাল? সেখানে জানানো হয়েছে, অনশনকারী ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় রাজ্যপাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতে শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন তিনি। খোদ শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের ক্ষোভের কথা শুনে গুরুত্ব দিয়ে সেগুলি বিচার করে দেখছেন, এ কথা মাথায় রেখে ফের অনশনকারীদের অনশন প্রত্যাহার করার আবেদনও জানিয়েছেন ত্রিপাঠী। পাশাপাশি এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হওয়ায় রাজ্যপাল উপাচার্যকে সতর্ক করেছেন বলেও ওই বার্তায় জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইন মেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপাচার্যকে।

গত ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁরই এগিয়ে দেওয়া মেডেল-শংসাপত্র নিতে এক ছাত্রী অস্বীকার করায় আঙুল তুলে ওই পড়ুয়াকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন রাজ্যপাল। এ নিয়ে বিতর্কও হয়। ওই ছাত্রী আচার্যকে অসম্মান করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। পরে অবশ্য রাজ্যপাল নিজেই জানান, ছাত্রীটি তাঁকে কোনও ভাবেই অপমান করেননি। এর পরে তিনি ফের বিতর্কে জড়ান গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন অনশনকারীদের প্রতি তাঁর বার্তা ছিল, “ওদের অনশন তুলতে বাধা দিচ্ছে কে? নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধে ওদের গর্ববোধ করা উচিত। অনশনেও ইতি টানা উচিত।” আচার্যের এই মন্তব্যে হতাশ হন আন্দোলনকারীরা। প্রবীণ শিক্ষকদেরও অনেকে এই মন্তব্যে আন্তরিকতা ও সহানুভূতির অভাব আছে বলে মনে করেন। একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েই রাজ্যপাল শনিবার ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন কি না, সেই প্রশ্নও এ দিন উঠেছে।

বিরোধী কংগ্রেস রাজ্যপালের এ দিনের বার্তাকে সরকারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে সময় নেয়নি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “রাজ্যপালকে এ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে, এতেই বোঝা যায়, রাজ্য সরকারের উপরে তাঁর কোনও আস্থা নেই।” পাল্টা জবাবে পার্থবাবু বলেন, “রাজ্যপালের অনাস্থার প্রশ্নই নেই। রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকার সমস্যা সমাধানেরই চেষ্টা করছেন।”

আন্দোলনকারীরা অবশ্য এখনও অনড়। আন্দোলনকারী ছাত্র হিন্দোল মজুমদারের বক্তব্য, “আমরা ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় দোষীদের শাস্তি অবশ্যই চাই। কিন্তু তা জানাতে গিয়ে রাতের অন্ধকারে পুলিশের হাতে যে ভাবে মার খেয়েছি, তার পরে উপাচার্যের পদত্যাগই আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবি। এ নিয়ে কোনও বার্তাই তো রাজ্যপাল দেননি। তা হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে কী করে?”

গত ২৮ অগস্ট যাদবপুরের হস্টেলে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়ার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নাল কমপ্লেন্টস কমিটি (আইসিসি)-কে। শ্লীলতাহানির ঘটনাটি বিস্তারিত জানতে তিন সদস্যের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গড়ে রাজ্য সরকার। তারা তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই ছাত্রকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। মাসখানেকের বেশি সময় জেলে কাটিয়ে পুজোর ছুটির পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ওই দু’জন। কিন্তু আইসিসি-র রিপোর্টে ফের তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। গত মাসে আইসিসি রিপোর্ট দিয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। উপাচার্য রিপোর্টটি রাজভবনে পাঠালেও কোনও ব্যবস্থা নেননি।

শীতের ছুটির পরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আরও জোরদার আন্দোলন করা হবে বলে গত ডিসেম্বরেই জানিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। এর পরে গত সোমবার রাত থেকে অনশনে বসেছেন একদল পড়ুয়া। রক্তে শর্করার মাত্রা আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাওয়ায় শুক্রবারই শিবম ঘোষ নামে এক অনশনকারীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শনিবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্য এক ছাত্র অভীক ঘোষ। চ

এ দিন বেলা ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ ওই হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষামন্ত্রী। হাসপাতালে তাঁর সামনে ‘আমরা ভিসি’র পদত্যাগ চাই’ লেখা ব্যানার-পোস্টার তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। মন্ত্রীর গাড়ির কাছে গিয়েও ছাত্রছাত্রীরা কথা বলেন। পার্থবাবু জানান, সরকার সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করবে। যদিও মন্ত্রীর আশ্বাসে খুব একটা সন্তুষ্ট নন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের প্রশ্ন, চার মাস ধরে আন্দোলন চলছে। মন্ত্রী এখন কী দেখবেন? অনশনকারীরা মারা গেলে তবে কি তাঁদের হুঁশ হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jadavpur university abhijit chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE