ঠিক যেন ব্যস্ত সময়ের হাওড়া কিংবা শিয়ালদহ স্টেশন। টিকিট পরীক্ষকের নজর এড়িয়ে শনশনিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন বহু বিনা টিকিটের যাত্রী। উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তাদের সন্দেহ, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার সমুদ্রে নজরদারির ফাঁক গলে এ ভাবেই পালাচ্ছে বহু নৌকা, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি জঙ্গি কর্মকাণ্ডেও ব্যবহার হচ্ছে।
শনিবার উপকূলরক্ষী বাহিনীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ডারের কথায় স্পষ্ট পেল্লায় জাহাজ নয়, মাছধরা ট্রলারের মতো ছোটখাটো জলযানই উপকূলে বিপদের উৎস। কম্যান্ডার ভিএসআর মূর্তি এ দিন সাংবাদিকদের বলেন, “উপকূলে মাছ ধরার নৌকোয় নজর রাখতে উন্নত প্রযুক্তির দরকার। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মৎস্য দফতরের সাহায্যও চাওয়া হয়েছে।”
আজ, রবিবার উপকূলরক্ষী বাহিনীর ৩৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস। তার আগের দিন বাহিনীর নতুন কিছু উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। বাহিনীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জানান, ফ্রেজারগঞ্জ, গোপালপুরে নতুন ঘাঁটি খোলা হয়েছে। ভুবনেশ্বরে বাহিনীর বিমানঘাঁটি তৈরি হয়েছে। সাগরদ্বীপে নতুন রেডার বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
সমুদ্রে হাজার হাজার নৌকার মধ্যে কোনটা সন্দেহজনক, তা দূর থেকে দেখে চেনা প্রায় অসম্ভব। তাই মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ছে বিপদ। সম্প্রতি পোরবন্দরের কাছে এমনই একটি ট্রলারকে আটকায় উপকূলরক্ষী বাহিনী। বাহিনীর জওয়ানদের গুলিতে ট্রলারটিতে আগুন লেগে যায়। বাহিনীর দাবি, ওই ট্রলারে চাপিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচার করা হচ্ছিল। মুম্বইয়ের ২৬/১১-র নেপথ্যেও জলপথে আসা ছোট নৌকাই ছিল বলে দাবি গোয়েন্দাদের। উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তাদের মতে, বড় জাহাজগুলির ক্ষেত্রে যে নিয়মের কড়াকড়ি রয়েছে, মাছধরা ট্রলার বা ছোট মাপের জলযানের জন্য সে-সবের বালাই নেই। তার ফলে কখন কোথা থেকে কোন জলযান ঢুকে পড়ছে, তার নজরদারিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে।
উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা বলছেন, এ রাজ্যে মাছ ধরার কাজে প্রায় ন’হাজার জলযান ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় রয়েছে আরও ১৬ হাজার নৌকা। এই নৌকাগুলির বেশির ভাগকেই চিহ্নিত করার কোনও উপায় নেই। উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তা বলছেন, কোনও নৌকাকে সন্দেহ হলে সরাসরি সেটিকে আটকানো হয়। কিন্তু হাজারো নৌকার মধ্যে এই ব্যবস্থা আদৌ নিশ্ছিদ্র নয়। কম্যান্ডার মূর্তির মতে, এই নৌকাগুলিকে নজরদারির আওতায় আনতে হলে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বছর কয়েক ধরেই মাছধরা নৌকোয় জিপিএস প্রযুক্তি-সহ ট্রান্সপন্ডার বসানোর কথা বলা হচ্ছে। তাতে নৌকোগুলির অবস্থান জরিপ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। মূর্তি বলেন, “বহু ক্ষেত্রে মৎস্যজীবীরাই যন্ত্র বসাতে নারাজ। মাছধরা ট্রলারগুলোকে পথে আনতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মৎস্য দফতরের মাধ্যমেই চেষ্টা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy