Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কাঁচরাপাড়ার কর্মীরা ম্রিয়মাণ, শেষ দেখতে চান

খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই সোমবার দুপুর থেকে থমথমে কাঁচড়াপাড়া।তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের খাসতালুক এই শহরের পাড়ার মোড়ে মোড়ে দিনভর চোখে পড়ল ছোট ছোট জটলা। এ দিক ও দিক থেকে ভেসে আসছে ফিসফাস। কিন্তু অচেনা মুখ দেখলেই সব চুপ। তৃণমূলের পার্টি অফিসে কর্মীদের হাজিরা অন্য দিনের মতোই। কিন্তু হাবেভাবে তাঁরা কিছুটা যেন ম্রিয়মান। মুখে অবশ্য বলছেন, “সিবিআই তো দাদাকে শুধু ডেকেছে। সে তো তদন্তের স্বার্থে যে কাউকেই ডাকা হতে পারে। শেষপর্যন্ত দেখুন।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
বীজপুর শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই সোমবার দুপুর থেকে থমথমে কাঁচড়াপাড়া।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের খাসতালুক এই শহরের পাড়ার মোড়ে মোড়ে দিনভর চোখে পড়ল ছোট ছোট জটলা। এ দিক ও দিক থেকে ভেসে আসছে ফিসফাস। কিন্তু অচেনা মুখ দেখলেই সব চুপ। তৃণমূলের পার্টি অফিসে কর্মীদের হাজিরা অন্য দিনের মতোই। কিন্তু হাবেভাবে তাঁরা কিছুটা যেন ম্রিয়মান। মুখে অবশ্য বলছেন, “সিবিআই তো দাদাকে শুধু ডেকেছে। সে তো তদন্তের স্বার্থে যে কাউকেই ডাকা হতে পারে। শেষপর্যন্ত দেখুন।”

শেষ তো দেখতে চাইছেন এ রাজ্যের মানুষও। এ নিয়ে সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইট থেকে শুরু করে গলি-মহল্লায় ভেসে বেরিয়েছে নানা বাঁকা মন্তব্য, টিপ্পনি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। কিন্তু কাঁচরাপড়া এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। স্থানীয় এক দোকানির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা গিয়েছিল। বিষয়টা বুঝেই দু’কানে হাত দিয়ে বললেন, “মাফ করবেন দাদা, ব্যবসা করে খাই। কথা বললে কাল দোকান খুলতে পারব কি না জানি না।”

মুখে কুলুপ মুকুলের পরিবারেরও। এই শহরের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা মুকুল রায়। কাঁচরাপাড়ায় তৃণমূলের দাপটে বিরোধীদের অস্তিত্বই প্রায় নেই বললে চলে। পুরসভায় তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ। সিপিএম টিমটিম করে জ্বলছে। বিজেপির নামগন্ধও নেই।

মুকুলবাবুর বাড়ির একতলার বসার ঘরে এ দিন সন্ধ্যায় টিভিতে খবর চলছিল। শুকনো মুখে কয়েক জন দলীয় কর্মী বসেছিলেন। একজন জানিয়ে দিলেন, “দাদা এখানে নেই। শুভ্রাংশুও (মুকুলবাবুর ছেলে, বীজপুরের বিধায়ক) বাড়িতে নেই।” বাড়ির লোকজনের সঙ্গে একটু ভাব জমানোর চেষ্টা করা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দিলেন, বৌদি (মুকুল-জায়া কৃষ্ণা) কোনও কথা বলবেন না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু’এক জন পড়শিকে ডেকে “ও দাদা, শুনছেন” বলতে না বলতেই হনহন করে উল্টো দিকে এগিয়ে গেলেন তাঁরা।

সারদা-কাণ্ডের তদন্তে নেমে সিবিআই যে মুকুলবাবুকে ডাকবে, তা হয় তো এক রকম অনুমান করছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বীজপুরে দলের কর্মীদের অন্দরের কানাঘুষো থেকে সে কথা বোঝা গেল। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও বললেন, “এটা যে চক্রান্ত, তা তো জানা কথাই। বিজেপি আমাদের দলের সর্বভারতীয় সম্পাদককে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে সিবিআইকে দিয়ে। কিন্তু এটা ওদের জেনে রাখা উচিত, বিষয়টি বুমেরাং হয়ে ২০১৯-এ (আগামী লোকসভা) ফিরে আসবে।” তবে পরিস্থিতি আপাতত যা দাঁড়িয়েছে, তাতে টিপন্নি করার সুযোগ ছাড়ছেন না অন্য দলের নেতারা। বিজেপির রাজ্য যুব সভাপতি অমিতাভ রায়ের কটাক্ষ, “সব সত্যি প্রকাশিত হচ্ছে। তৃণমূল সেটা সহ্য করতে পারছে না।” সিপিএমের কাঁচরাপাড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক শম্ভু চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এটা শহরবাসীর কাছে অত্যন্ত লজ্জার, যে শাসক দলের এমন এক জন নেতা এখানকার বাসিন্দা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam mukul roy cbi ed kanchpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE