Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলেজে ভাতা ছাঁটাই কেন, হলফনামা তলব

খোদ শিক্ষামন্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও অনেক সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়িভাড়া ভাতা কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের হলফনামা তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থে কোপ মারা হচ্ছে কোন যুক্তিতে, সরকারকে তাদের হলফনামায় তা জানাতে হবে। সেই সঙ্গে কোর্টের নির্দেশ, বাড়িভাড়া বাবদ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইতিমধ্যেই যে-অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা আর ফেরত নেওয়া যাবে না। সম্প্রতি আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান আইনজীবী এক্রামুল বারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

খোদ শিক্ষামন্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও অনেক সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়িভাড়া ভাতা কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের হলফনামা তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।

স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থে কোপ মারা হচ্ছে কোন যুক্তিতে, সরকারকে তাদের হলফনামায় তা জানাতে হবে। সেই সঙ্গে কোর্টের নির্দেশ, বাড়িভাড়া বাবদ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইতিমধ্যেই যে-অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা আর ফেরত নেওয়া যাবে না। সম্প্রতি আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান আইনজীবী এক্রামুল বারি।

২০১২ সালে অর্থ দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, কোনও সরকারি কর্মচারীর স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বাড়িভাড়া বাবদ মিলিত ভাবে তাঁদের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ছ’হাজার ছাড়াতে পারবে না। ২০১৪-র শেষ থেকে ওই নির্দেশিকা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বেশ কিছু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। আগে এই খাতে যে-অর্থ দেওয়া হয়েছে, অনেক শিক্ষককে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

স্কুলশিক্ষকদের ক্ষেত্রে তারও আগে থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। এ ব্যাপারে স্কুলশিক্ষা দফতর অবশ্য একটি লিখিত নির্দেশিকা জারি করেছিল। উচ্চশিক্ষা দফতর কিন্তু সে-সবের ধার ধারেনি। অর্থ দফতরের নির্দেশিকার ভিত্তিতেই আচমকা তাঁদের বেতন কাটা শুরু হয়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ।

এই নিয়মের বিরোধিতা করেই মামলা করেছেন স্কুল-কলেজের কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এক্রামুল বারি মঙ্গলবার জানান, সোমবার এই সংক্রান্ত একটি মামলায় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাজ্য সরকারকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী মাসে মামলাটির শুনানি হবে। ইতিমধ্যে বাড়িভাড়া বাবদ যে-অর্থ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেওয়া হয়েছে, তা আর ফেরত নেওয়া যাবে না বলেও বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিস্থিতি যে-দিকে এগোচ্ছে, তাতে নিজেদের বেতন ও ভাতা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের প্রশ্ন, এখন বেতন কাটার এই পদক্ষেপ কেন? তা ছাড়া সকলেরই তো বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থ কাটা হচ্ছে না। কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন কাটার কারণ কী?

শিয়ালদহের কাছে একটি কলেজের অনেক শিক্ষকেরই বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থ কেটে নেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। যদিও ভিক্টোরিয়া কলেজ-কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই কলেজের কোষাগার থেকে শিক্ষকদের পূর্ণ বেতন দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে, সেখানকার শিক্ষকেরা তা বুঝতে পারছেন না। কেবল ওই কলেজ নয়। এমন অবস্থা রাজ্যের বহু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তাঁরা যে-চুক্তিতে চাকরিতে ঢুকেছেন, সরকার এখন আচমকা কী ভাবে তার অন্যথা করছে, তা-ও বোধগম্য হচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, সরকারি কোষাগার থেকে যাঁদের বেতন দেওয়া হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অর্থ দফতরের নির্দেশিকাই চূড়ান্ত। তাই বেআইনি কিছু হচ্ছে না বলেই দফতরের কর্তাদের দাবি।

কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো বারবার এ ভাবে বেতনে কোপ মারার বিরোধিতা করেছেন। এমনকী অর্থ দফতরের ওই নির্দেশিকা রূপায়ণ করা যাবে না বলে মৌখিক ভাবে শিক্ষা দফতরের এক কর্তাকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তা হলে ব্যাপারটা এত দূর গড়াল কী ভাবে?

শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, “বিষয়টি দেখতে হবে। দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা না-বলে কিছু বলতে পারব না।”

শিক্ষক-পদের দাবিদারদের পাশে খোদ ইমামও

বিরোধী শিবিরের অনেক নেতানেত্রীরই সমর্থন পেয়েছেন তাঁরা। স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মপ্রার্থীরা এ বার পাশে পেলেন নাখোদা মসজিদের ইমাম মহম্মদ সফিক কাসমিকে। নাখোদা মসজিদে মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ইমাম অভিযোগ করেন, “প্যানেলে নাম থাকা সত্ত্বেও প্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। অথচ বাইরে থেকে অন্যায় ভাবে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি হুমকির সুরে ইমাম জানিয়ে দেন, এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা না-করলে পরের ভোটে (পুরসভা) এবং বিধানসভা ভোটেও সরকারের ক্ষতি হবে। জানুয়ারি থেকে সল্টলেকের এসএসসি ভবনে অনশন আন্দোলনে বসেন এক দল প্রার্থী। প্রথমে ভবনের ভিতরে, পরে ভবনের বাইরে আন্দোলনে বসেন তাঁরা। ওই তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে বলেছে, ৩৫ হাজার জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পথে নামা প্রার্থীদের দাবি, তাঁরা ওই ৩৫ হাজারের মধ্যেই রয়েছেন। কিন্তু চাকরি পাননি। এ দিন একই কথা বলেন ইমাম। তিনি বলেন, “সরকার দাবি করেছে, ৩৫ হাজার চাকরি হয়েছে। অথচ এখনও যাঁরা প্যানেলে রয়েছেন, তাঁদের চাকরি হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE