Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চোখধাঁধানো প্রশান্ত-ভবন দেখে তাজ্জব ইডি

ঝাঁ-চকচকে মার্বেল। দামি আসবাবপত্র। ঝকমকে পর্দা। সবুজ রঙের দোতলা বাড়িতে ঢুকেই চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল চার ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) অফিসারের। কার বাড়ি এটা? শিল্পপতি না-হোক, নিশ্চয়ই কোনও বড় ব্যবসায়ীর! দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেন্সের ওই দোতলা বাড়ির মালিক প্রশান্ত নস্কর কিন্তু কেউ-কেটা ব্যবসায়ী নন। প্রথম জীবনে সারদা গোষ্ঠীর সাদামাঠা নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। পরে জমিজমা আর ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা শুরু করেন ঠিকই। কিন্তু তাতে এমন পেল্লাই মাপের বাড়ি করা যায় কি না, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। ইডি অফিসারদের সন্দেহ, ওই বাড়ি তৈরি হয়েছে সারদার টাকায়। সারদার টাকায় প্রশান্ত আরও কিছু সম্পত্তি কিনেছেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

প্রশান্তকে (মুখ চাপা) নিয়ে সারদা গার্ডেন্সে তদন্তকারীরা। ছবি: অরুণ লোধ

প্রশান্তকে (মুখ চাপা) নিয়ে সারদা গার্ডেন্সে তদন্তকারীরা। ছবি: অরুণ লোধ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

ঝাঁ-চকচকে মার্বেল। দামি আসবাবপত্র। ঝকমকে পর্দা। সবুজ রঙের দোতলা বাড়িতে ঢুকেই চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল চার ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) অফিসারের। কার বাড়ি এটা? শিল্পপতি না-হোক, নিশ্চয়ই কোনও বড় ব্যবসায়ীর!

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেন্সের ওই দোতলা বাড়ির মালিক প্রশান্ত নস্কর কিন্তু কেউ-কেটা ব্যবসায়ী নন। প্রথম জীবনে সারদা গোষ্ঠীর সাদামাঠা নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। পরে জমিজমা আর ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা শুরু করেন ঠিকই। কিন্তু তাতে এমন পেল্লাই মাপের বাড়ি করা যায় কি না, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। ইডি অফিসারদের সন্দেহ, ওই বাড়ি তৈরি হয়েছে সারদার টাকায়। সারদার টাকায় প্রশান্ত আরও কিছু সম্পত্তি কিনেছেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

সারদার প্রাক্তন কর্মী এবং পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ প্রশান্তকে শুক্রবার সল্টলেকে ইডি-র দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাঁকে তোলা হয় আদালতে। রবিবার ওই অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে ইডি। তদন্তকারীরা জানান, জমি-বাড়ি কিনতে প্রশান্তকে ১২ কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। জমি-বাড়ি কেনাবেচার পরেও প্রচুর টাকা ছিল প্রশান্তের কাছে। সেই টাকা তিনি প্রথমে ডলারে এবং পরে বাংলাদেশি মুদ্রায় বদলে ফেলেছিলেন।

প্রশান্তের উত্থান কী ভাবে?

সুদীপ্ত এবং অন্য কয়েক জনকে জেরা করে ইডি জেনেছে, ২০০৫ সাল নাগাদ প্রশান্ত সারদা গার্ডেন্সে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে যোগ দেন। তখন সারদা গার্ডেন্সের জমি দেখিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলছিলেন সুদীপ্ত। সেই কাজে সঙ্গী ছিলেন প্রশান্ত। ধীরে ধীরে নিরাপত্তারক্ষী থেকে জমি কেনাবেচায় সুদীপ্তের ডানহাত হয়ে ওঠেন তিনি। সিবিআই সূত্রের খবর, ২০০৮ সাল থেকে প্রশান্ত ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের (বিষ্ণুপুরের তৎকালীন বিধায়ক) ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এতটাই যে, পালাবদলের পরে প্রশান্ত কার্যত সুদীপ্তের নাগালের বাইরে চলে যান। তদন্তকারীরা জানান, মন্ত্রী-সংসর্গে প্রশান্ত এমনই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন যে, সারদা গার্ডেন্সে বাড়ি করতে গেলে লোকজনকে তাঁর কাছ থেকেই যাবতীয় ইমারতি দ্রব্য কিনতে হত।

ইডি সূত্রের দাবি, ২০০৭-’০৮ সাল থেকেই সারদার জমির কারবারে প্রশান্ত হয়ে উঠেছিলেন মূল চাঁই। অনেক ক্ষেত্রে সুদীপ্তের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরেও সেই জমি নিজে দখল করে নিতেন। শনিবার প্রশান্তের গ্রেফতারির খবর পেয়ে এক মহিলা কলকাতার নগর দায়রা আদালতের সামনে হাজির হন। ওই মহিলার অভিযোগ, টাকা না-দিয়ে তাঁর চার কাঠা জমি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রশান্ত। ইডি অফিসারেরা বলছেন, ওই এলাকায় এমন অভিযোগ করেছেন অনেকেই। অনেক জমি কেনার ক্ষেত্রে প্রশান্ত ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের একাংশের সঙ্গে মিলে কারচুপি করেছেন বলেও অভিযোগ এসেছে।

খোদ সারদা-প্রধানের অভিযোগ, অনেক সময় জমির টাকা অগ্রিম দিয়েও তিনি জমি পাননি। ইডি সূত্রের খবর, ওই সব জমি সুদীপ্তের টাকায় কিনলেও ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নিজের নামে রেখেছিলেন প্রশান্ত। ইডি সারদার বেশ কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরেও প্রশান্ত সেগুলো বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ।

তদন্তকারীদের সন্দেহ, জমি বিক্রি এবং সারদার প্রচুর টাকা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন ওই অভিযুক্ত। প্রশান্ত এবং তাঁর মেয়ের নামে তিন-তিনটি সংস্থার হদিসও পেয়েছে ইডি। সেই সব সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সুদীপ্তের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের যোগসূত্র ধরা পড়েছে।

রবিবার বেলা ১টা ২০ মিনিট নাগাদ প্রশান্তকে নিয়ে ইডি-র চার অফিসার সারদা গার্ডেন্সে হাজির হন। প্রথমে প্রশান্তের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই এলাকায় সারদার কী কী জমি প্রশান্তের মাধ্যমে কেনা হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় প্রশান্তের স্ত্রী মিতু, দাদা পীযূষ এবং কয়েক জন শাগরেদকেও। বিকেল ৫টা নাগাদ তল্লাশি শেষ করে সারদা গার্ডেন্স থেকে বেরোন তাঁরা।

ইডি-র একাংশের অভিযোগ, সুদীপ্ত গ্রেফতার এবং সারদা গার্ডেন্স বন্ধ হওয়ার পরে ভিতরের কিছু পরিত্যক্ত বাড়ি এবং সারদার অফিস থেকে বাতানুকূল যন্ত্র, আসবাবপত্র, আলমারি উধাও হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গেও প্রশান্তের যোগসাজশ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিনই দুপুরে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার স্ত্রী রিঙ্কু ভুঁইয়াশর্মা। সিবিআই সূত্রের খবর, সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে হিমন্তের বিরুদ্ধেও। এ দিন তাঁর স্ত্রী এসে বেশ কিছু নথিপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই মহিলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE