Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সাগর ঘোষ হত্যা মামলা

চার্জগঠন ঘিরে সিউড়ির এজলাসে একপ্রস্ত নাটক

পর পর দু’বার শুনানির দিন পড়ার পরেও এজলাসে উপস্থিত হননি অভিযুক্ত। ক্ষুব্ধ সরকারি আইনজীবী বিচারকের কাছে অভিযোগ করেন, মামলার চার্জগঠন বিলম্বিত করতেই এমনটা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে বৃহস্পতিবার ওই অভিযুক্তের খোঁজে সিউড়ির জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্ত সংশোধনাগারে পাঠালেন সরকারি আইনজীবীকেই। তার পরেই এজলাসে পুলিশ হাজির করল পাড়ুইয়ের সাগর ঘোষ হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সুব্রত রায়কে। নানা টালবাহানার পরে শেষমেশ এ দিনই মামলার চার্জ গঠন করা গিয়েছে।

সংশোধনাগারে অভিযুক্তের খোঁজে সরকারি আইনজীবী। —নিজস্ব চিত্র।

সংশোধনাগারে অভিযুক্তের খোঁজে সরকারি আইনজীবী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩১
Share: Save:

পর পর দু’বার শুনানির দিন পড়ার পরেও এজলাসে উপস্থিত হননি অভিযুক্ত। ক্ষুব্ধ সরকারি আইনজীবী বিচারকের কাছে অভিযোগ করেন, মামলার চার্জগঠন বিলম্বিত করতেই এমনটা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে বৃহস্পতিবার ওই অভিযুক্তের খোঁজে সিউড়ির জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্ত সংশোধনাগারে পাঠালেন সরকারি আইনজীবীকেই। তার পরেই এজলাসে পুলিশ হাজির করল পাড়ুইয়ের সাগর ঘোষ হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সুব্রত রায়কে। নানা টালবাহানার পরে শেষমেশ এ দিনই মামলার চার্জ গঠন করা গিয়েছে।

এ দিন মামলার সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এর আগেও দু’দিন মামলার চার্জগঠনের দিন ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণেই শুনানি ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছিল। এ দিনই চার্জশিটে নাম থাকা সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৮ (মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হওয়া), ৪৪৮ (অনধিকার প্রবেশ বা হাঙ্গামা করা), ৩০২/১৪৯ (খুন করা এবং একই উদ্দেশ্য নিয়ে) ২৭ ধারায় (অস্ত্র আইন) চার্জগঠিত হয়েছে।” আগামী ৯-২১ ফেব্রুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সওয়াল-জবাবের জন্য দিন ধার্য হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় খুন হন পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতের (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা, স্থানীয় বাঁধনবগ্রামের বাসিন্দা সাগর ঘোষ। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত ওই হত্যা মামলার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গত ১৬ জুলাই সিউড়ি আদালতে আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করেছিল। তাতে অবশ্য নাম ছিল না ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরই। যাঁদের নাম চার্জশিটে রয়েছে, তাঁরা হলেন তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তফা, কসবা অঞ্চল সভাপতি শেখ ইউনুস, জলধর দাস, জগন্নাথ দাস, প্রিয় মুখোপাধ্যায়, ভগীরথ ঘোষ, সুব্রত রায় এবং শেখ আসগর (মুস্তফার ছেলে)। শেখ আসগর ছাড়া সাত জনই পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। ভগীরথ এবং সুব্রত ছাড়া বাকিরা জামিনে মুক্ত।

জানা গিয়েছে, এ দিন চার্জ গঠন হলেও তাঁর আগে এজলাসে একপ্রস্ত নাটক হয়। এর আগে মামলার চার্জগঠনের জন্য গত ২২ ডিসেম্বের দিন ধার্য হয়েছিল। কিন্তু, সে দিন জেল হাজতে থাকা দুই অভিযুক্ত ভগীরথ ঘোষ এবং সুব্রত রায় নিজেদের আইনজীবী নিয়োগের জন্য আদালতের কাছে কিছু দিন সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিচারক ফের ৩ জানুয়ারি চার্জগঠনের নির্দেশ দেন। এরই মাঝে সুব্রত অসুস্থ হয়ে প্রথমে সিউড়ি হাসপাতাল ও পরে বধর্মান মেডিক্যালে ভর্তি থাকায় উক্ত দিনেও ওই হত্যা মামলার চার্জ গঠিন হয়নি। তার পরেই চার্জ গঠনের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক। কিন্তু এ দিনও দেখা যায়, বাকি সকলে উপস্থিত থাকলেও সুব্রত রায়কে পুলিশ এজলাসে হাজির করেনি। কেন অভিযুক্তকে সংশোধনাগার থেকে হাজির করানো হয়নি, বিচারক তা নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেন। রণজিৎবাবু তখন অভিযোগ করেন, “চার্জগঠনে বিলম্ব করতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটা করা হচ্ছে।” বিচারক তখন তাঁকে বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখুন, কেন অভিযুক্ত হাজির হননি। পারলে তাঁকে হাজির করান। আমি ২টোর সময় ফের মামলার শুনানি শুনব।”

ওই নির্দেশের পরেই সিউড়ি সংশোধনারে যান রণজিৎবাবু। তাঁর সঙ্গী হন আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায়। বেলা দেড়টা নাগাদ দেখা যায়, সুব্রতকে এজলাসে হাজির করানোর জন্য আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রকাশ্যে রণজিৎবাবু অবশ্য বলছেন, “বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকেই সুব্রতকে হাজির করানো হয়েছে।” তবে, পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সুব্রত সিউড়ি সংশোধনাগারেই ছিলেন। বিচারকের নির্দেশে আইনজীবীরা খোঁজ করতেই তড়িঘড়ি তাঁকে আদালতে উপস্থিত করানো হয়। কিন্তু, সংশোধনাগারে থাকলেও কেন তাঁকে প্রথমে হাজির করা হয়নি, তার সদুত্তর মেলেনি।

এ দিকে, ভগীরথ ও সুব্রতর আইনজীবী এ দিন এজলাসে উপস্থিত ছিলেন না। আদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায় নামে ওই আইনজীবীকে বিচারকের নির্দেশে ডেকে পাঠানোর পরে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে তাঁকে কিছুই বলা হয়নি। বিচারক তখন জানতে চান চার্জগঠনের ক্ষেত্রে কোনও আপত্তি আছে কিনা। চার্জ গঠিত হলে আপত্তি নেই বলে জানান অন্য পাঁচ অভিযুক্তের আইনজীবী নুরুল আলম। তার পরেই মামলার চার্জ গঠিত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sagar ghosh murder case suri chargesheet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE