উদ্বেগ বাড়িয়েছে পুরুলিয়া। সেখানে এক কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করেছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। আর এক কলেজে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
কলেজ রাজনীতিতে গেরুয়া শিবিরের উত্থান ঠেকাতে তাই মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। এসএফআই কার্যত নেই। প্রতিপক্ষ বলতে এখন শুধুই এবিভিপি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস প্রভাবিত এই ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতাও তেমন বলার মতো নয়। তবু, সিঁদুরে মেঘ দেখছে শাসকদল। আর তাই শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার সময় বাধা পেলেন এবিভিপি প্রার্থীরা। অভিযোগ, শুধুই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নয়, যুব তৃণমূল এবং তৃণমূলের লোকজনও কোথাও ভয় দেখিয়ে, কোথাও মারধর করে এবিভিপি-র প্রার্থীদের আটকেছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠেছে। তবে, শুধুই এবিভিপি নয়, বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়নপত্র তুলতে এ দিন বাধা পেয়েছেন এসএফআইয়ের প্রার্থীরাও।
তাঁরা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছেন বলে এ দিন জানিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “বেশির ভাগ কলেজেই শান্তিপূর্ণ ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর পেয়েছি। সেটাও অনভিপ্রেত। যাতে এমন না হয়, নিশ্চয়ই দেখব।” তাঁর সংযোজন, “যারা গত বছর পর্যন্ত এ রাজ্যের কোনও কলেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, তারা হঠাৎ বড় বড় অভিযোগ করছে। শুধু অভিযোগ করলেই তো হবে না। তার সারবত্তা আছে কি না, দেখতে হবে।”
শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বললেও শুক্রবারের ঘটনাবলি কিন্তু অন্য কিছুই বলছে।
এ দিন টিএমসিপি-এবিভিপি গোলমাল ছড়িয়েছে মূলত বাঁকুড়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলায়। এ দিন বাঁকুড়া সদর মহকুমার কলেজগুলিতে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমার শেষ দিন ছিল। কলেজ দখলে রাখতে টিএমসিপি-র সঙ্গে কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমেছিলেন তৃণমূল নেতারা। অধিকাংশ কলেজেই বহিরাগতদের দিয়ে টিএমসিপি ও যুব তৃণমূল তাদের প্রার্থীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ এবিভিপি-র। দিনের শেষে যে ছ’টি কলেজে মনোনয়নপত্র তোলা চলছিল, সেই সব ক’টিকেই ‘বিরোধী-শূন্য’ করতে সক্ষম হয়েছে শাসকদল। আর বুক বাজিয়ে বাঁকুড়া জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, “এই জেলার জঙ্গলমহলের কলেজেও এবিভিপিকে রুখতে আমি ফিল্ডার সাজিয়ে এসেছি! কোনও সাম্প্রদায়িক দলকে কলেজে আমরা ঢুকতে দেব না।”
প্রায় একই ছবি বীরভূমে। এ দিন সিউড়ি ও বোলপুর মহকুমার সাতটি কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার দিন ছিল। একটিতেও বিরোধী ছাত্র সংগঠন মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি। প্রতিবাদে পথ অবরোধ করে এবিভিপি। হুগলির আরামবাগ মহকুমাতেও ছ’টি কলেজকেই বিরোধী-শূন্য রাখতে পেরেছে টিএমসিপি। এসএফআই আগেই ভোট বয়কটের ঘোষণা করেছিল। আর এবিভিপি-র অভিযোগ, তারা প্রার্থী দিতে প্রস্তুত থাকলেও টিএমসিপি এবং তৃণমূল একযোগে তাদের আটকে দিয়েছে। গণ্ডগোল হয়েছে বর্ধমানের কালনা কলেজেও। সেখানে বিজেপি-র পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চলে। এবিভিপি আর ওই কলেজে প্রার্থী দিতে পারেনি। দুর্গাপুর মহকুমার একাধিক কলেজেও এবিভিপি প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্র ভোটে সংঘর্ষ লাগামছাড়া হয়ে ওঠায় এর আগে এক বার রাজ্য সরকার ছাত্র-ভোট বন্ধ রেখেছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, “কলেজ ভোটে হানাহানি ঠেকাতে আবারও ওই ভোট বন্ধ রাখুন। না হলে সুস্থ ভাবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করুন।” এবিভিপি-র উপর তৃণমূলের হামলা-সহ শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ, শনিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা মিছিল করবে বিজেপি-র যুব মোর্চা।
বর্ধমানের অন্ডালের খান্দরা কলেজে আবার এ দিন এসএফআই-টিএমসিপি সংঘর্ষ হয়েছে। এসএফআইয়ের অভিযোগ, মনোনয়ন তুলতে গেলে কলেজে থেকে অনেকটা আগেই তাদের প্রার্থীদের আটকে মারধর শুরু করে। আট জন জখম হন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছলে এসএফআই তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। সেখান থেকে এসএফআইয়ের তিন জনকে আটক করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী আগে বলেছিলেন, কোথাও গায়ের জোরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করা চলবে না। এসএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেনরায়ের কটাক্ষ, “শিক্ষামন্ত্রী মুখে বলছেন এক কথা। আর তাঁরই দলের ছাত্র সংগঠন মাঠে নেমে করছে আর এক!” প্রতিবাদে আজ, শনিবার রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে এসএফআই। পার্থবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “শিক্ষামন্ত্রীর হাতে কোনও জাদুদণ্ড নেই! যাতে কোথাও অশান্তি না হয়, তা দেখার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু রাতারাতি সর্বত্র সব সমস্যা মিটে যাবে, এমন ধরে নেওয়া যায় না!”
এমনিতে কলেজ ভোটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ রাজনীতির ফারাক আছে অনেক। তবু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ছাপ কলেজ ভোটেও পড়ে বলে তাকে ইঙ্গিতবাহী হিসাবে ধরা হয়। বিশেষ করে, কলেজ ভোটের মধ্যে দিয়ে তরুণ প্রজন্ম কোন দিকে ঝুঁকে আছে, তা বোঝা যায়। একটা সময়ে এসএফআইকে পর্যুদস্ত করে একের পর এক কলেজে টিএমসিপি-র জয় এ রাজ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিতকে স্পষ্ট করে তুলেছিল। এবিভিপি-র ক্ষেত্রে এখনও তেমনটা হয়নি। তা হলে কেন এত ভয় শাসকদলের?
এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদারের বক্তব্য, “গোটা রাজ্যে তৃণমূল এবং কলেজে কলেজে টিএমসিপি-র পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। পুরুলিয়ার দু’টো কলেজে আমরা জিতেছি। ওরা বুঝেছে আমাদের লড়তে দিলেই ওরা ভিটেছাড়া হবে। সে জন্যই ওদের মরিয়া আক্রমণ।
সেই জন্যই আমাদের রুখতে টিএমসিপি-র সঙ্গে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীও পথে নেমেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy