Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল ছাড়ার ফায়দা তুলছে কংগ্রেসও

পুরভোটের আগে তৃণমূল ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত। এবং শাসকের চিন্তা বাড়িয়ে সেই মিছিলে এ বার পা মেলালেন শহরের সংখ্যালঘুরাও। তবে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার যে হিড়িক দেখা যাচ্ছিল, এ বার তাতে বদল ঘটিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলা কংগ্রেসের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল! শনিবার বিধান ভবনে কলকাতার বিভিন্ন এলাকার একাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মী কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সেই দলে কয়েক জন সিপিএম নেতা-কর্মীও রয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

পুরভোটের আগে তৃণমূল ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত। এবং শাসকের চিন্তা বাড়িয়ে সেই মিছিলে এ বার পা মেলালেন শহরের সংখ্যালঘুরাও।

তবে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার যে হিড়িক দেখা যাচ্ছিল, এ বার তাতে বদল ঘটিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলা কংগ্রেসের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল! শনিবার বিধান ভবনে কলকাতার বিভিন্ন এলাকার একাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মী কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সেই দলে কয়েক জন সিপিএম নেতা-কর্মীও রয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, এ দিন তাঁদের দলে প্রায় ন’শো জন যোগ দিয়েছেন। এ দিন যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ১৩৫ ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর মৈনুদ্দিন শাহজাদার পুত্র তথা তৃণমূল নেতা সাকিবউদ্দিন (ববি) যেমন আছেন, তেমনই আছেন ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা তনভীর ইকবাল। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম নেতা মনোজ সিংহও দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

রাজ্যে পালাবদলের বছর দুয়েক আগে থেকেই সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ বাম শিবিরে ছেড়ে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রথমে রেলমন্ত্রী এবং পরে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতাও সংখ্যালঘুদের জন্য বিপুল উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। যদিও সংখ্যালঘু নেতাদের একটা বড় অংশের দাবি, সে সব প্রতিশ্রুতি কাগজে-কলমেই রয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একবার রেড রোডে ইদের নমাজে মমতার উপস্থিতিতেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূল সরকারের দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন ইদেন ইমাম ক্বারি ফজলুর রহমান। পরবর্তী সময়ে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকিও সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে ছাড়েননি। এ সবের পরেও অবশ্য সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশের সমর্থন পাশে থাকায় পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল।

সেই ছবিটাতেই এ বারে বদল দেখতে শুরু করেছেন বিরোধী নেতারা। তৃণমূলেরও একটা অংশের কপালে ভাঁজ ফেলেছে সংখ্যালঘুদের দল ছাড়ার এই প্রবণতা। কারণ, রাজ্যে বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেরও পরিবর্তন হয়েছে। গত লোকসভা ভোটের

পর থেকেই ধর্মীয় মেরুকরণের জোরালো প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নানা জায়গায়। এই অবস্থায় সংখ্যালঘুরা পাশ থেকে সরে দাঁড়ালে সারদা-জর্জরিত তৃণমূলের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিমও মনে করছেন “মমতা যে নীতি নিয়ে এই রাজ্য চালাচ্ছেন, তাতে এক দিকে যেমন বিজেপির সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের সুবিধা হচ্ছে, অন্য দিকে সংখ্যালঘুদের মোহভঙ্গ হচ্ছে।” তাঁর বক্তব্য, মমতা নানা সময়ে সংখ্যালঘুদের জন্য যে সব ঘোষণা করেছেন, তার সিংহভাগই যে ভাঁওতা, তা এখন স্পষ্ট হচ্ছে। তাই সংখ্যালঘুরা তৃণমূল ছাড়ছেন। বাম শিবিরের এক নেতার রসিকতা, “তৃণমূলের এ বার আম ও ছালা দু’টোই যাচ্ছে!”

তৃণমূলের নেতাদেরও একাংশ বলছেন, যে মুসলিমরা তাঁদের দলের তুরুপের তাস, তাঁরাই দল ছেড়ে অন্য দলে চলে গেলে চিন্তার বাড়বে। যদিও তৃণমূলের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, মুসলিমদের যাঁরা কংগ্রেস যোগ দিলেন, তাঁরা ভোট কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেটা দেখা দরকার। দলের অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনের দলত্যাগকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। তাঁর কথায়, “মুসলিমরা জানেন, রাজ্যে সবচেয়ে বেশি মোদী-বিরোধী দল হল তৃণমূল। ফলে কংগ্রেসে কারা গেল, তা নিয়ে আমাদের চিন্তার কারণ নেই।”

অধীর-সহ কংগ্রেস নেতারা অবশ্য এই সব অঙ্ক, তত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। পুরভোটের আগে একাধিক নেতা-কর্মীর দলে আসা তাঁদের দলকে অক্সিজেন যোগাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। অধীর বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এক দিকে জাতীয় রাজনীতির পরিস্থিতি যেমন বিবেচনা করেন, অন্য দিকে দেখেন, কোন দলে বিশ্বাস বা আস্থা অর্জনকারী নেতা আছেন। সব দিক বিচার করেই তাঁরা কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছেন।” কিন্তু বাংলায় প্রায় প্রাসঙ্গিকতা হারানো কংগ্রেসে কেন আসছেন সংখ্যালঘুরা? অধীরের কথায়, “যাঁরা তৃণমূলে হাঁফিয়ে উঠেছেন, সিপিএমে থেকে হতাশ, তাঁরাই কংগ্রেসে আসছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE