Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
অরূপ-হত্যা

তদন্তে নেমেই ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ সূত্র খুঁজতে তত্‌পর সিআইডি

অরূপ ভাণ্ডারীর খুনের তদন্তভার হাতে নিয়েই শনিবার সালকিয়ার বিবিবাগানে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল সিআইডি। এই খুনের পিছনে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল কি না, খতিয়ে দেখলেন তদন্তকারীরা। শুক্রবার হাওড়া সিটি পুলিশের থেকে দায়িত্বভার হাতে নেওয়ার পরে শনিবার তদন্ত শুরু করে ছ’সদস্যের ওই গোয়েন্দা দল। তদন্তকারীদের দলটি এ দিন প্রথমেই যায় হৃষিকেশ ঘোষ লেনে মৃত যুবকের বাড়িতে। সেখানে মৃতের বাবা প্রতাপ ভাণ্ডারী, মা মেনকা ভাণ্ডারী ও ভাই অমরকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা।

অভিজিতের সঙ্গে সিআইডি অফিসারেরা। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র

অভিজিতের সঙ্গে সিআইডি অফিসারেরা। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

অরূপ ভাণ্ডারীর খুনের তদন্তভার হাতে নিয়েই শনিবার সালকিয়ার বিবিবাগানে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল সিআইডি। এই খুনের পিছনে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল কি না, খতিয়ে দেখলেন তদন্তকারীরা।

শুক্রবার হাওড়া সিটি পুলিশের থেকে দায়িত্বভার হাতে নেওয়ার পরে শনিবার তদন্ত শুরু করে ছ’সদস্যের ওই গোয়েন্দা দল। তদন্তকারীদের দলটি এ দিন প্রথমেই যায় হৃষিকেশ ঘোষ লেনে মৃত যুবকের বাড়িতে। সেখানে মৃতের বাবা প্রতাপ ভাণ্ডারী, মা মেনকা ভাণ্ডারী ও ভাই অমরকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। সে সময়েই ডেকে পাঠানো হয় ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী, অরূপের বন্ধু অভিজিত্‌কে। এ দিন অভিজিতের থেকে প্রথমে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা শোনেন গোয়েন্দারা। এর পরে তাঁকে নিয়ে অরূপের বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দূরের ঘটনাস্থলে যান তদন্তকারীরা। দুপুর ১২টা থেকে শুরু করে তদন্ত চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

যে জায়গায় অরূপকে ফেলে পেটানো হয়েছিল, সেখানে দাঁড়িয়েই ঘটনার বিবরণ চাওয়া হয় অভিজিতের কাছে। ওই রাতে কী ঘটেছিল, কী ভাবে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, সিআইডি অফিসারদের বলেন অভিজিত্‌। গত ২৮ জানুয়ারি সরস্বতী ঠাকুর বিসর্জন করে আসার পরে পাড়ার মধ্যে প্রথমে কোন চায়ের দোকানের সামনে তাঁরা আক্রান্ত হন, সেটিও দেখান তিনি। শানু দাস নামে এক ব্যক্তির চায়ের দোকানটি সে রাতে বন্ধ ছিল। দোকানের সবুজ দরজায় তিন-চার জন মিলে কী ভাবে তাঁর গলা চেপে ধরে সজোরে মাথা ঠুকে দিয়েছিল, তা দেখান অভিজিত্‌। এর পরে দেখান ঠিক কোন জায়গায় দুষ্কৃতীরা লাথি মেরে পাশের বড় নর্দমায় তাঁকে ফেলে দিয়েছিল আর কোথায় অরূপকে রাস্তায় ফেলে বাঁশ-লাঠি-রড-লোহার চেয়ার দিয়ে মারা হচ্ছিল।

তদন্তকারীদের অভিজিত্‌ জানিয়েছেন, আক্রমণকারীরা একই পাড়ার ছেলে। বয়সে সকলে তাঁদের থেকে ছোট। বিসর্জনের দিন রাস্তায় পথচলতি মহিলাদের লক্ষ করে নানা অশ্লীল মন্তব্যের প্রতিবাদ থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। ওই ঘটনার প্রথম প্রতিবাদ অরূপ করায় এবং অরূপের উপরে পুরানো রাগ থাকায় ওঁকে হামলা করে অভিযুক্তেরা।

ঘটনার পিছনে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্ধ রয়েছে কি না, অরূপের পরিজন ও স্থানীয়দের থেকে এ দিন দফায় দফায় তা জানতে চান তদন্তকারীরা। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ ও একটি রাজনৈতিক দলের একাংশ তেমনটা ভাবাতে চাইলেও এলাকার মানুষ তা মনে করেন না। তদন্তকারীদের কাছেও সে বার্তা পৌঁছনো হয় এ দিন।

বিসর্জনের পরে জিটি রোডের উপরে প্রথম যেখানে গোলমাল বাধে, এ দিন সেখানেও যান তদন্তকারীরা। সেখানে দাঁড়িয়ে অভিজিত্‌ জানান, মহিলাদের উদ্দেশে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় অরূপের সঙ্গে মূল অভিযুক্ত আনন্দ প্রসাদের বচসা বাধে। সেখানেই আনন্দ ওঁকে শাসায়। পরে পাড়ায় ঢুকে আনন্দ নিজের দলবল নিয়ে তাঁদের উপরে হামলা করে।

পাঁচ অভিযুক্তের বিষয়ে খোঁজ নিতে তাদের বাড়িও যান তদন্তকারীরা। খবর নেওয়া হয় প্রতিবেশীদের থেকেও। তবে পড়শিদের থেকে তেমন কোনও তথ্য মেলেনি বলেই খবর। তদন্তের স্বার্থে ওই এলাকায় একাধিক বার যেতে হতে পারে বলে সিআইডি অফিসারেরা অরূপের পরিবারকে জানিয়ে গিয়েছেন।

এ দিকে, বৃহস্পতিবার রাজু তিওয়ারির পরে আর কোনও অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি বলে জানায় পুলিশ। অরূপ-হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে হাওড়ার পুলিশ কমিশনারেটের দফতর ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arup bhandary investigation cid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE