নেতাই দিবসে পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী ও মুকুল রায়।—নিজস্ব চিত্র।
কখনও শীতল, কখনও নাতিশীতোষ্ণ! ঘটনাপ্রবাহের ধাক্কায় তৃণমূলের অন্দরে চোরা স্রোত যত এ দিক-ও দিক হচ্ছে, তেমন ভাবেই বদলে বদলে যাচ্ছে দলের প্রথম সারির নেতাদের পারস্পরিক সমীকরণ!
মুকুল রায় আর শুভেন্দু অধিকারী যেমন! দলের অন্দরে একে অপরের সঙ্গে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে চলতেন এক কালে। মুকুল-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক শিউলি সাহাকে নিয়ে যেমন পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অধিকারী শিবিরের অস্বাচ্ছন্দ্য ছিল, তেমনই আবার যুব তৃণমূলে মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের বাড়তি দায়িত্ব চাপে ফেলেছিল শুভেন্দুকে। এখন আবার সে সব অতীত! সংগঠনে মুকুল-শুভেন্দু, দু’জনেরই গুরুত্ব খর্ব হয়েছে। যুবরাজ হিসাবে উত্থান হয়েছে তৃণমূল নেত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সারদা-কাণ্ডের তদন্তে শুভেন্দুকে এক বার তলব করেছে সিবিআই। মুকুলও সিবিআইয়ের আতস কাচের নীচে! ঘটনাপ্রবাহই এখন আবার কাছাকাছি এনে ফেলেছে দু’জনকে। বুধবারই যার নমুনা দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাইয়ে।
লালগড়ের নেতাই গ্রামে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলির ঘটনায় চার মহিলা-সহ নিহত হয়েছিলেন ৯ গ্রামবাসী। আহত হন ২৯ জন। তারই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এ দিন একই গাড়িতে নেতাই পৌঁছেছেন মুকুল ও শুভেন্দু! অথচ ‘নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি’ আয়োজিত এ দিনের স্মরণসভার প্রধান বক্তা ছিলেন শুভেন্দুই। মুকুলের আগমনের খবর আগাম প্রচারিত ছিল না, সভামঞ্চে তাঁর নাম বা ছবিও ছিল না। পরে মুকুল জানিয়েছেন, পথে শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা হওয়ায় একই গাড়িতে গল্প করতে করতে এসেছেন! গ্রামে পৌঁছে ‘শহিদ বেদি’তে পুষ্পস্তবক দিয়েছেন দু’জনে। নিহতদের পরিজনদের হাতে পুষ্পস্তবক ও কম্বলও তুলে দিয়েছেন একই সঙ্গে। সারদা-সহ একের পর এক ঘটনায় বিধ্বস্ত শাসক দলের এই দুই নেতাই এখন দলের বাইরেও নানা ঘাটের জল মাপছেন বলে গুঞ্জন চলছে। নিজেদের দলে ‘আপাত-ব্রাত্য’ দুই সাংসদ পরিস্থিতির চাপেই স্বচ্ছন্দে এক মঞ্চে এলেন কি না, সেই জল্পনা স্বভাবতই তীব্র হয়েছে।
এমনিতে নেতাই দিবসে দু’জনকে এক সঙ্গেই দেখা যায়। কিন্তু এখনকার পরিপ্রেক্ষিতই আলাদা। পরস্পরের উপস্থিতিতে পুরনো সেই আড়ষ্টতাও এ দিন সে ভাবে চোখে পড়েনি। বরং স্বচ্ছন্দেই শুভেন্দুকে ‘জঙ্গলমহল আন্দোলনের অগ্রণী সেনাপতি’ হিসেবে সম্বোধন করতেও শোনা গিয়েছে মুকুলকে।
গত সেপ্টেম্বরে পাঁশকুড়ায় যখন একই সভায় হাত ধরাধরি করে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু-মুকুলকে, তার দু’দিন আগেই তমলুকের সাংসদকে তলব করেছিল সিবিআই। সে দিন মুকুল-শুভেন্দু সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। নেতাই প্রসঙ্গেও এ দিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু এবং সাংসদ শুভেন্দু সিবিআইকে দুষেছেন। তবে কেউই সারদা প্রসঙ্গ মুখে আনেননি।
শুভেন্দু বলেন, “নেতাই-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অনুজ-ডালিমদের সিবিআই ধরতে পারেনি। রাজ্য সরকারের সিআইডি দফতর কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে।” তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে মুকুল পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নাম না করেই বলেন, “সিবিআই যখন মূল আততায়ীদের ধরতে পারছে না, তখন সুদূর দক্ষিণ ভারত থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আনার মূল কাণ্ডারী যিনি ছিলেন, তাঁকে স্যালুট জানিয়ে আপনাদের বলব, তিনি আপনাদেরই জেলার পুলিশ সুপার। আগে তিনি ছিলেন সিআইডি অফিসার।” ক’দিন আগে এই পুলিশ সুপারই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন! উল্লেখযোগ্য তথ্য, নেতাইয়ের ঘটনা নিয়ে এক সময় কিন্তু সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছিলেন মুকুলেরাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy