Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোটে কাঁটা হাজিরাই, অনশন প্রেসিডেন্সিতে

যাদবপুরে আন্দোলন-অনশনের রেশ কাটতে না-কাটতে একই পথ নিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া। আন্দোলন এবং অনশন। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দাবির মধ্যে তফাত আছে। উপাচার্যের ইস্তফা চেয়ে পথে নেমেছিলেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা। আর ক্লাসে ন্যূনতম হাজিরা ৬০ শতাংশ না-থাকা সত্ত্বেও ছাত্র সংসদের নির্বাচনে যুক্ত হতে দেওয়ার দাবিতে প্রেসিডেন্সির এক দল ছাত্রছাত্রী সোমবার রাত থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন।

প্রেসিডেন্সিতে অনশনরত পড়ুয়ারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

প্রেসিডেন্সিতে অনশনরত পড়ুয়ারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

যাদবপুরে আন্দোলন-অনশনের রেশ কাটতে না-কাটতে একই পথ নিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া। আন্দোলন এবং অনশন।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দাবির মধ্যে তফাত আছে। উপাচার্যের ইস্তফা চেয়ে পথে নেমেছিলেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা। আর ক্লাসে ন্যূনতম হাজিরা ৬০ শতাংশ না-থাকা সত্ত্বেও ছাত্র সংসদের নির্বাচনে যুক্ত হতে দেওয়ার দাবিতে প্রেসিডেন্সির এক দল ছাত্রছাত্রী সোমবার রাত থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন।

আমরণ অনশনের হাতিয়ারেই উপাচার্য-পদে অভিজিৎ চক্রবর্তীর ইস্তফা কার্যত নিশ্চিত করেছিলেন যাদবপুরের আন্দোলনকারীরা। কিন্তু ন্যূনতম হাজিরা ছাড়াই ছাত্রভোটে যুক্ত হতে দেওয়ার দাবিতে প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের আন্দোলন নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে হাজিরা-বিধি শিথিল করার প্রশ্নই নেই।

এ দিন বিকেলে প্রেসিডেন্সির এসএফআই, আইসি, আইসা-সহ সব ছাত্র সংগঠনই সাধারণ সভার বৈঠক করে। সেখানে ‘প্রেসিডেন্সিয়ানস ইউনাইটেড ফর ডেমোক্র্যাসি’ নামে একটি মঞ্চ গড়ে অনশন-আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। প্রায় সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিই অনশনে আছেন বলে ছাত্রছাত্রীরা জানান। তাঁদের আবেদন, প্রাক্তনীরা চাইলে এই আন্দোলনে যোগ দিতে পারেন। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদ অবশ্য এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে চিহ্নিত করেছে। সংসদের তরফে বিভাস চৌধুরী বলেন, “এই বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করব না।” তবে প্রেসিডেন্সির প্রতিষ্ঠা দিবস (আজ, মঙ্গলবার)-এর প্রাক্কালে এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে বলে কোনও কোনও প্রাক্তনী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ভোটের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নিয়ম তৈরি করেছেন অগণতান্ত্রিক ভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি অমরদীপ সিংহ বলেন, “ন্যূনতম হাজিরা না-থাকলে সেই পড়ুয়ার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে, এমন নিয়ম তৈরির আগে তো কর্তৃপক্ষ এক বারও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেননি! তাই গণতন্ত্রের দাবিতেই আমাদের আন্দোলন।” তাঁর দাবি, অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই ন্যূনতম হাজিরা নিয়ে এই নিয়ম মানা হয় না।

ছাত্রনেতার এই দাবি মানতে চাননি প্রেসিডেন্সির পরিচালন সংসদের এক সদস্য। তিনি বলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ৫৫ শতাংশ হাজিরা লাগে। যাদবপুরে যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারেন, শুধু তাঁদেরই ভোটাধিকার আছে। পরীক্ষায় বসার জন্য তাঁদের লাগে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ হাজিরা। যদিও সব সময় নিয়ম মানা হয় না। শৃঙ্খলারক্ষার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্সির এই ভূমিকায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বড় অংশের সমর্থন রয়েছে বলে জানান পরিচালন সংসদের ওই সদস্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তার কথায়, “যাদবপুরের পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরে মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করেছেন। সেই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে প্রেসিডেন্সির ছেলেমেয়েরাও দাবি আদায়ের পথে হাঁটছে। কিন্তু নিয়ম মানতেই হবে।” আন্দোলনকারীরা জানান, যাদবপুরের আন্দোলনের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই। সেই দৃষ্টান্তও সামনে রাখছেন না তাঁরা।

ঠিক কী নিয়ম এ বার চালু করতে চাইছেন প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ?

কর্তৃপক্ষ সূত্রে বলা হয়, যে-সব পড়ুয়ার ক্লাসে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ উপস্থিতি নেই, তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে অন্তত ৭৫ শতাংশ হাজিরা না-থাকলে নির্বাচনে যুক্ত হওয়া যাবে না। তবে এ বছর পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে ন্যূনতম হাজিরার হার কমানো হয়েছিল। তাই ভোটে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও তা ৭৫ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও প্রায় ১৮০ জনের নাম ভোটার তালিকায় নেই। এই নিয়ে কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি, দাবিপত্র পেশ করেছেন ছাত্রছাত্রীরা।

গত সপ্তাহে ডিন অব স্টুডেন্টস দেবশ্রুতি রায়চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার পরে পড়ুয়ারা এ দিন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার কাছে একই দাবি জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অনড়। অনশন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিন অব স্টুডেন্টস এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর উপাচার্য অনুরাধাদেবী ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারেননি।

কর্তৃপক্ষের অনমনীয় মনোভাবের প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন। কারণ সব জিনিসেরই একটা নিয়ম আছে। আমি দুঃখিত যে, ছাত্রছাত্রীরা অনশন করছে। কিন্তু সেটা তারা অন্যায় দাবিতে করছে।” প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু অবশ্য এই বিতর্কে ঢুকতে চাননি। তিনি বলেন, “যা করার কর্তৃপক্ষকেই ঠিক করতে হবে। আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করব না।”

রাত পর্যন্ত কথা বলা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা অনশন তুলে নেওয়ার আবেদনে সাড়া দেননি বলে জানান প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার। তিনি বলেন, “আলোচনার জন্য মঙ্গলবার ফের ছাত্রদের ডাকা হয়েছে। তবে নিয়ম মানতেই হবে।” ছাত্রনেতা অমরদীপ জানান, আলোচনায় যোগ দেওয়া হবে কি না, মঙ্গলবার সকালে পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE