Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
মোবাইল চুরির ফাঁদে

মাসমাইনে ১২ হাজারে মিলত চোরের চাকরি

মাস গেলে নগদে মাইনের নিরাপত্তা। সঙ্গে মুফতে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা। আর পেশাদারি দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে তো উপরি ‘উত্‌সাহ-ভাতা’ দিতেও ‘বস্‌’-এর কার্পণ্য নেই। রীতিমতো কর্পোরেট ধাঁচেই চলছিল অফিস। শুধু কিছু একটা নাম দিয়ে কোম্পানি হিসেবে নথিভুক্তকরণটাই যা বাকি ছিল। তবে তার আগেই সল্টলেকের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল মোবাইল চুরির একটি বড়সড় চক্র।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৯
Share: Save:

মাস গেলে নগদে মাইনের নিরাপত্তা। সঙ্গে মুফতে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা। আর পেশাদারি দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে তো উপরি ‘উত্‌সাহ-ভাতা’ দিতেও ‘বস্‌’-এর কার্পণ্য নেই। রীতিমতো কর্পোরেট ধাঁচেই চলছিল অফিস। শুধু কিছু একটা নাম দিয়ে কোম্পানি হিসেবে নথিভুক্তকরণটাই যা বাকি ছিল। তবে তার আগেই সল্টলেকের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল মোবাইল চুরির একটি বড়সড় চক্র।

পুলিশ জানায়, গত কয়েক বছরে রমরমিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল তারা। কারবারের শুরুটা ঝাড়খণ্ডে হলেও তারা আসানসোল পেরিয়ে এ রাজ্যে ঢুকে পড়তে দেরি করেনি। বছরখানেক আগে নৌকা ভিড়ে যায় কলকাতার ঘাটেও। এ শহরের রাজপথে, শপিং মলে, মেট্রো রেলে ঘুরে ঘুরে মোবাইল-শিকারেও হাত পাকিয়ে ফেলে চুরির কারবারিরা। তত দিনে আবার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চোরাই মোবাইল পাচারের কাজেও রীতিমতো হাত পাকিয়ে ফেলেছে তারা। চুরি-চক্র, থুড়ি সংস্থার সদর দফতর ঘাঁটি গাড়ে কলকাতার কাছেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার আক্রায়। শুক্রবার রাতে সেখানে হানা দিয়েই চুরি কোম্পানির ‘বস্‌’ ও কর্মচারীকে বমাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, ধৃতদের নাম মুকেশ মাহাতো, পরেশ মাহাতো, শঙ্কর দাস ও মহম্মদ জিয়াউর রহমান। পরেশ আসানসোল, শঙ্কর জলপাইগুড়ি ও জিয়াউর মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা। এই চক্রের চাঁই বছর ছাব্বিশের মুকেশ। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক অল্প বয়স থেকেই চুরিতে হাত পাকিয়েছিল। শুক্রবার বিধাননগর আদালতে হাজির করানোর পরে ধৃতেরা এখন পুলিশি হেফাজতে। ধৃতদের কাছ থেকে ৬৬টি চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ড থেকে আসানসোলে এসে দুই ‘গুরু’র কাছে নাড়া বেঁধেছিল মুকেশ। তার পরে এক সময়ে দল পাকিয়ে শুরু করে পকেটমারি। তদন্তকারীদের দাবি, ইদানীং মুকেশ নিজে হাতে আর চুরি করত না। বরং ‘দক্ষ চোর’ তৈরি করাই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। কার্যত অফিস খুলে বসে কর্মচারীদের দিয়ে মোবাইল চুরি করিয়ে তা পাচার করার কাজেই সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, পরেশ-সহ তিন জনকে মাসিক ১২ হাজার টাকায় নিয়োগ করেছিল মুকেশ। বছরখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আক্রায় দু’টি ঘরও ভাড়া করেছিল সে। একটিতে স্ত্রীকে নিয়ে নিজে থাকত। অন্যটিতে থাকত বাকি তিন জন। তারা সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করায় আশপাশের লোকজন ভাবতেন, এরা একই পরিবারের সদস্য।

পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল চুরির ক্ষেত্রে রীতিমতো নাক উঁচু মুকেশ। কর্মচারীদের প্রতি তার নির্দেশ ছিল, বেছে বেছে দামি মোবাইলই চুরি করতে হবে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ভুল করে কর্মচারীরা কখনও কম দামি মোবাইল নিয়ে এলে তা ছুঁয়েও দেখত না মুকেশ। বলত, যা রাস্তায় ফেলে দিয়ে আয়।” উদ্ধার হওয়া ফোনের বেশির ভাগই আই-ফোন বা গ্যালাক্সির মতো দামি মোবাইল।

সম্প্রতি ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় এক সঙ্গে পাঁচটি মোবাইল চুরির অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছিল পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ দেখে, সেগুলির মধ্যে কয়েকটি মোবাইল কাজ করছে। এর পরেই আক্রায় হানা দিয়ে মুকেশদের পাকড়াও করা হয়।

বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন, জিয়াউর সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় চোরাকারবারিদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। জেরায় মুকেশ জানিয়েছে, জিয়াউরের সূত্র ধরেই চোরাই মোবাইল বাংলাদেশে পাচার করত সে। মূলত হিলি সীমান্ত দিয়েই এই পাচারের কাজ করা হত। পুলিশের দাবি, এই চক্রে আসানসোল ও উত্তরবঙ্গের আরও কয়েক জন জড়িত রয়েছে। তাদের খোঁজেও এ বার তল্লাশি শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mobile thief salaried thief job for thief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE