হলদিয়া বন্দরে জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
হলদিয়া-সঙ্কট নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজি-র সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে চলেছেন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্থির হয়েছে, আগামী ১২ জানুয়ারি দু’পক্ষ মুখোমুখি বসে সমাধান-সূত্র বার করার চেষ্টা করবে। কেন্দ্রের তরফেও জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বুধবার হলদিয়া বন্দরে গিয়ে যন্ত্রনির্ভর পণ্য খালাসের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার উপরে জোর দিয়েছেন, যে প্রক্রিয়ায় এবিজি কাজটা করত।
ফরাসি যৌথ উদ্যোগের সংস্থাটি নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে দু’বছর আগে হলদিয়া তথা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পাততাড়ি গুটিয়েছে। সেই ইস্তক হলদিয়া বন্দরের ২ ও ৮ নম্বর বার্থে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য খালাস বন্ধ। শ্রমিকদের হাতে-হাতে মাল ওঠাতে-নামাতে বিস্তর সময় লাগছে, ফলে জাহাজকে বেশি দিন নোঙর ফেলে থাকতে হচ্ছে। এর জেরে জাহাজ কোম্পানিগুলোকে গুণাগার দিতে হচ্ছে বেশি। নিট ফল: হলদিয়া বন্দরে কম জাহাজ ভিড়ছে। অনেক বিদেশি জাহাজ হলদিয়ার বদলে অন্য বন্দরে গিয়ে মাল খালাস করছে। বন্দরের আয় মার খাচ্ছে।
এবং এবিজি যে আবার হলদিয়ামুখো হবে, এ যাবৎ তেমন সম্ভাবনাও দেখা যায়নি। সংস্থাটির বক্তব্য ছিল, রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি তাদের কাজ করার পক্ষে অনুকূল নয়। তবে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবিজি’কে ফেরানোয় ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। এই উদ্দেশ্যে সব প্রয়াস চালাতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীকে। উদ্যোগে ফলও মিলেছে। এত দিন দিল্লির আহ্বানে সাড়া না-দিলেও এ বার বরফ কিছুটা গলেছে বলে বন্দর-সূত্রের খবর। আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় এবিজি-ও এখন আগ্রহী।
তাতেই তৈরি হয়েছে আশাজনক পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের মর্যাদা দিতে কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষও চাইছেন, হলদিয়ায় পণ্য খালাসের কাজে এবিজি-ই ফিরে আসুক। কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁ এ দিন বলেন, “আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। ১২ তারিখে এবিজি ও তাদের ফরাসি সহযোগীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসছে। হলদিয়ার দুই বার্থে কাজ শুরুর ব্যাপারে কোনও সমাধান সূত্র বেরোলে মন্ত্রককে জানিয়ে অনুমোদন চাইব।” পাশাপাশি গডকড়ী নিজেও এ দিন হলদিয়া বন্দর ঘুরে দেখেন। তাঁর আশ্বাস, এবিজি-র ছেড়ে যাওয়া দু’টি বার্থে যাতে যন্ত্রনির্ভর পণ্য খালাস আবার চালু হয়, সে জন্য কেন্দ্রের তরফে সহযোগিতার কোনও অভাব হবে না।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে গডকড়ী এ দিন কলকাতায় আসেন। সম্মেলনে যাওয়ার আগে সকালে তিনি হেলিকপ্টারে হলদিয়ায় যান। সেখানে জাহাজ থেকে কয়লা ওঠানো-নামানোর নতুন একটি টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। তার পরে বৈঠকে বসেন বন্দর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বৈঠক শেষে জাহাজমন্ত্রী বলেন, “তিন-চার বছরে হলদিয়ায় বড় মাপের সম্প্রসারণ হবে। বন্দরের কর্মকাণ্ডে জড়িত কিছু সংস্থাকে ব্যবসা বাড়ানোর জমি দেওয়া হবে।” তাঁর আশা, ওই সব সংস্থার হাত ধরে আগামী কয়েক বছরে হলদিয়ায় অন্তত দু’হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে।
মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ দিন হলদিয়া বন্দরের তরফে ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে ৪৫ একর জমি দেওয়াও হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাটি ওখানে এলপিজি মজুতের প্রকল্প গড়বে। গডকড়ী এ দিন জানিয়েছেন, হলদিয়া বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি ভোজ্য তেল সংস্থা মায়ানমার, তাইলান্ড থেকে তেল আমদানি করে থাকে। হলদিয়ায় জাহাজ ভেড়ার পরে সেখান থেকেই যাতে পাইপ মারফত কারখানায় তেল পঠিয়ে দেওয়া যায়, সে সম্পর্কে বন্দর-কর্তৃপক্ষকে নতুন পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে হলদিয়া বন্দরে পণ্য পরিবহণের পরিকাঠামোগত ক্ষমতা বাড়াতে চাইছে দিল্লি। গডকড়ীর কথায়, “আমরা চাই, আগামী দিনে হলদিয়া বন্দর আন্তর্জাতিক বন্দরের তকমা পাক। যাতে বড়-বড় জাহাজ হলদিয়ায় পণ্য নিয়ে আসতে পারে। বাড়তে পারে বন্দরের আমদানি-রফতানি ব্যবসা। এতে রাজ্যের আর্থিক বিকাশও গতি পাবে।”
নাব্যতার যে সমস্যায় হলদিয়া বন্দর জর্জরিত, সে বিষয়ে দিল্লি কী ভাবছে? এ নিয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনার ইঙ্গিত এ দিন মন্ত্রীর কথায় মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy