মানালি দে।
বাঙালির ড্রয়িংরুমে তাঁদের নিত্য যাওয়া-আসা। ছোট পর্দার জনপ্রিয় তারকাদের অনেক সময়েই দর্শক মনে রাখেন তাঁদের চরিত্রের নাম দিয়ে। ব্যক্তির চেয়েও চরিত্র বড় কি না, তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। তবে আনকোরা মুখকে দর্শকের নয়নের মণি করে তুলতে কোনও কসুর বাকি রাখেন না সংশ্লিষ্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
যে চ্যানেলের সৌজন্যে শিল্পীর এত নামযশ, সেই চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের কতটা মেনে চলতে হয়? লিখিত চুক্তি ছাড়া মৌখিক ভাবেও শিল্পীরা চুক্তিবদ্ধ থাকেন। তবে সে নিয়ন্ত্রণ কি কখনও শিল্পীর ব্যক্তিপরিসরে হস্তক্ষেপ করে? সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেওয়া, সংবাদমাধ্যমে বাইট দেওয়া বা ব্যক্তিজীবন নিয়ে কোথায় কতটুকু কথা বলতে হবে, তা নিয়ে কি চ্যানেলের অলিখিত নির্দেশ থাকে? সেই নির্দেশ না মানলে কি শিল্পীকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়? ছোট পর্দার সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পীদের অভিজ্ঞতার রকমফের উস্কে দিচ্ছে এমনই কিছু প্রশ্ন...
পরিচিতি চরিত্রের নামে
টেলিভিশনের সিনিয়র শিল্পী অপরাজিতা আঢ্য ও জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় একমত যে, দর্শক তাঁদের নামেই চেনেন। অপরাজিতা বললেন, ‘‘যখন সিরিয়ালে এসেছিলাম, তখন এমন ছিল না। পাঁচটা সিরিয়ালে পাঁচটা ভিন্ন চরিত্র করেছি। দিনের শেষে লোকে চিনেছে ‘অপরাজিতা’ নামেই।’’ জয়জিৎ বললেন, ‘‘আমাদের নাম তৈরি হতে অনেকটা সময় লেগেছে। কিন্তু এখন চ্যানেল অনেক টাকা খরচ করে। আগেই দর্শক শিল্পীর মুখ চিনে যায়।’’
ব্যক্তিজীবনে হস্তক্ষেপ ?
‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র ঐন্দ্রিলা সেন বললেন, ‘‘চ্যানেলকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম, ব্যক্তিজীবন নিয়ে কোথায় কতটা কথা বলব তা নিয়ে ওরা কিছু বলবে না। চ্যানেল সে কথা শুনেছে।’’ সময় নিয়েই চ্যানেলের কাছে বেশি অভিযোগ করেন শিল্পীরা, মত মধুমিতা সরকারের। ‘‘সিরিয়ালের কনট্র্যাক্টে থাকলে মনে রাখতে হবে, ঠিক সময়ে এপিসোড টেলিকাস্ট হওয়ার জন্য চ্যানেল যতটা সময় চাইবে, শিল্পীকে তা দিতে হবে। সিরিয়ালের লিড চরিত্রদের বাড়তি দায়িত্ব থাকে। তাঁরা যদি বেশি দাবিদাওয়া করেন, তা হলে সিরিয়ালের মান পড়ে যায়। তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কখনও সমস্যা হয়নি।’’
ঐন্দ্রিলার মতে, ‘‘অনেককে বলা হয়, সিরিয়ালের লুকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিতে। পুরো ব্যাপারটাই বোকা বোকা! একটা ধারাবাহিকে শাড়ি, অন্যটায় হয়তো হটপ্যান্টস পরব। আফটার অল, আমার নিজের পরিচিতিটা সকলের আগে।’’
আরও পড়ুন: ১১০০ ছবিতে অভিনয়, দৈনিক পাঁচ লক্ষ পারিশ্রমিক, চেনেন এঁকে?
চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি
‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ধারাবাহিকে রাসমণির স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় গাজী আব্দুন নূর। তাঁর মতে, ‘‘ছোট পর্দায় যেমন প্রত্যেক দিন শিল্পীদের দেখা যায়, তেমনই সহজে লোকে তাঁদের ভুলেও যায়। চরিত্রদের ঘিরে শহর-মফস্সল নির্বিশেষে মানুষের মনে আবেগ তৈরি হয়। শিল্পী হিসেবে আমরা এমন কিছু করব না, যাতে সেই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। তাতে চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ থাকলে খারাপ কী!’’
একটি জনপ্রিয় চ্যানেলের ক্লাস্টার্ড বিজ়নেস হেড সম্রাট ঘোষের মতে, ‘‘কোনও শিল্পীর ব্যক্তিজীবনে চ্যানেল হস্তক্ষেপ করে না। নতুনরা যখন চরিত্র হয়ে অনুষ্ঠানে যান, তাঁদের গাইড করার জন্য চ্যানেল নির্দেশ দেয় মাত্র।’’
সমস্যাও কম নয়...
চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ না মানলে ক্ষতিই বা কতটুকু? ‘ভজগোবিন্দ’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত সিরিয়াল চলাকালীন একটি পত্রিকার জন্য ফোটোশুট করেছিলেন। তার জন্য চ্যানেলকে জবাবদিহি করতে হয়েছিল। ‘‘কনট্র্যাক্ট পেপারে লেখা অনেক কিছুরই মানে ঠিক মতো বোঝানো হয় না। আমি ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরে সব কিছু জেনে বুঝেই কনট্র্যাক্ট সই করেছি,’’ বললেন স্বস্তিকা। ছোট পর্দার এক সিনিয়র অভিনেত্রী বললেন, ‘‘চ্যানেল ব্যক্তিজীবনেও হস্তক্ষেপ করে। তবে সিনিয়র শিল্পীদের সমস্যা হয় না। নতুনদের উপরই বেশি নজরদারি করে। কনট্র্যাক্টে থাকলে নিয়ন্ত্রণের সুযোগও বাড়ে।’’
নতুন শিল্পীদের চারপাশের জীবনটাই বদলে যায় একটা ধারাবাহিক হিট করলে। রাতারাতি পরিচিতি, বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, শোয়ের প্রস্তাব, সবটাই চ্যানেলের কল্যাণে। আবার রুপোলি জগতের চমকে অনেক সময়ে বিভ্রান্তও হন নতুনরা। তাঁরা যেন পথভ্রষ্ট না হন, তার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই চ্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে। অভিনেত্রী মানালি দে বললেন, ‘‘আমি বাধ্য মেয়ের মতো চ্যানেলের সব কথা মেনেছি বলেই আমার সঙ্গে তাদের ঝামেলা নেই। সিরিয়াল ছেড়ে বেরিয়েও আসতে হয়নি।’’
চ্যানেলের বিধিনিষেধ আছে ঠিকই, তবে বিনোদন জগতে পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিকল্প নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy