Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘হিপহপ নাচতে খুব ভাল লাগে’

ধারাবাহিকের ‘লোকনাথ’ অরণ্য রায়চৌধুরীর মুখোমুখি আনন্দ প্লাসস্বামী প্রণবানন্দ বিদ্যাপীঠের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অরণ্য রায়চৌধুরী। যদিও সে নদিয়ার বেথুয়াডহরির ছেলে, তবে এখন সে টালিগঞ্জের বাড়িতেই থাকে। সেখান থেকে রোজ সকালে উঠে স্কুল, তার পরে সেট।

অরণ্য। ছবি: তন্ময় সেন

অরণ্য। ছবি: তন্ময় সেন

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০০:১৫
Share: Save:

শুটিং চলছে। খুদে লোকনাথ বসে আছে বাড়ির দাওয়ায়। পরনে তার একটেরে অঙ্গবস্ত্র, মাথায় চুড়ো বাঁধা। চোখে-মুখে তখন আধ্যাত্মিক প্রশান্তি। মনে মনে ভাবছি, শিশুটি হয়তো শান্ত, তাই এত ধীরস্থির ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে বাবা লোকনাথের চরিত্র। কিন্তু দৃশ্য শেষ হতেই সেট থেকে বেরিয়ে তিড়িংবিড়িং লাফ দিয়ে ছোট্ট লোকনাথ একটা গাছের তলায় এসে থামল। পিছনে অন্যরা। আমরাও ছুটলাম পিছু পিছু! হঠাৎ দৌড় মারলে কেন? আশ্চর্য হয়ে গেলাম। সে কথা শুধোতেই ভুরু কুঁচকে চোখ ছোট করে বলল, ‘‘কী রোদ দেখতে পাচ্ছ না? পা যে পুড়ে যাচ্ছে। আমি তো লোকনাথ, জুতো পরিনি। তাই তো একছুটে ছায়ায় চলে এলাম।’’

স্বামী প্রণবানন্দ বিদ্যাপীঠের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অরণ্য রায়চৌধুরী। যদিও সে নদিয়ার বেথুয়াডহরির ছেলে, তবে এখন সে টালিগঞ্জের বাড়িতেই থাকে। সেখান থেকে রোজ সকালে উঠে স্কুল, তার পরে সেট। অভিনয়ের ফাঁকেই চলে পড়াশোনা। এত ছোট বয়সে অভিনয়ে এলে কী ভাবে? চটজলদি জবাব, ‘‘সকলকে অভিনয় করতে দেখে আমারও ইচ্ছে হল। আর তার পরই তো অডিশন দিয়ে ‘জয় বাবা লোকনাথ’-এ সুযোগ পেলাম। প্রথম প্রথম খুব ভয় করত যদি ডায়লগ ভুলে যাই। কিন্তু এখন বেশ মজা হয়। আর এখানে বেণী (লোকনাথের বন্ধু) আছে না? ওর সঙ্গে তো শুটিংয়ের ফাঁকে খেলাও করি। মাঝেমাঝে গোপাল দাদাও (আর এক চরিত্র) আসে, তখন বাইরে ক্রিকেট, ফুটবলও খেলি।’’

কাজের ফাঁকে মন পড়ে থাকে খেলাধুলো, দুষ্টুমিতে। তাই বলে পড়াশোনা অপছন্দ নয়। বরং বিজ্ঞান আর ভূগোলে বেশ আগ্রহী ছেলে। ‘‘বড় হয়ে তো আমার বিজ্ঞানী হওয়ারই ইচ্ছে। আর তার সঙ্গে যদি অভিনেতা হয়ে যাই! তা হলে তো ডাব্‌ল প্রোমোশন! ইচ্ছে তো করে আইপিএস অফিসার হতেও,’’ বলেই হাতের আঙুল বেঁকিয়ে বন্দুক চালানোর ভঙ্গিতে ঢিসুম ঢিসুম করে উঠল। রোজই নাকি সে সেটে আসার সময়ে তার কাল্পনিক বন্দুক হাতে নিশানা অভ্যেস করতে থাকে।

এইটুকু বয়সে লোকনাথের চরিত্রে অভিনয়! তাঁর সম্পর্কে অরণ্য জানল কী করে? খুদে অভিনেতার সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘আগে জানতাম না তো। অভিনয় করতে এসে জানলাম, তিনি এক জন সাধক। তাঁর সম্পর্কে আমার সবচেয়ে ভাল লাগে কী, বলো তো? তিনি ১৬০ বছর বেঁচেছিলেন। ইস! আমিও যদি অত বছর বাঁচতে পারি,’’ বলেই পায়ের উপরে পা তুলে বাবা লোকনাথের মতো বসার চেষ্টা করতে লাগল সে।

ধারাবাহিকে অরণ্য স্বাভাবিক ভাবেই বসে অভিনয় করে। কিন্তু সে ক্যালেন্ডারে লোকনাথের ছবি দেখে পা মুড়ে বাবু হয়ে বসার চেষ্টা করে রোজ। কী করে পারফেকশন আনা যায়, সেটাই এখন তার পাখির চোখ।

তবে এই ধারাবাহিকে অভিনয় অরণ্যর ব্যক্তিজীবনকেও স্পর্শ করেছে। বেথুয়াডহরিতে সে যখন বাবার বাইকে করে বাজারে যায়, তখন অনেকেই ছুটে আসে তার আশীর্বাদ নিতে। বাইক থামিয়ে তাকে প্রণাম করে। অনেকে আবার হাতে গুঁজে দিয়ে যায় কুড়ি টাকা, একশো টাকার নোট। হাজার নিষেধেও কেউ কথা শোনে না। অরণ্য সে টাকা দান করে দেয়।

শুধু অভিনয় আর পড়াশোনাই নয়। সে ছবি আঁকতে ও নাচতেও ভালবাসে। ‘‘আমি তো আগে হিপহপ শিখতাম। হিপহপ খুব ভাল লাগে। আর ভাল লাগে ঘুরতে। শুটিংয়ের জন্য বোলপুরে গিয়েছিলাম। সেখানে সবচেয়ে ভাল লেগেছে ছাতিমতলা। মা-বাবার সঙ্গেও আমি বেড়াতে যাই। এক বার তো জ়িরো পয়েন্ট পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম, পুরো বরফের মাঝে।’’ আর খাবার ব্যাপারে মা-ই ভরসা। মায়ের হাতের পোলাও, বার্গার তার প্রিয়। বাংলা ছবি থেকে শুরু করে হিন্দি ছবি প্রায় সবই দেখে অরণ্য। সলমন খানের ‘সুলতান’ আর দেবের ‘আমাজন অভিযান’ দেখে সে অভিভূত। ও রকম ছবিতে কোনও এক দিন অভিনয় করার স্বপ্ন দেখে সে।

সাক্ষাৎকার শেষে ছবি তোলার জন্য এক গাছতলায় এসে বসল অরণ্য। ছবির ফ্রেমে যাতে স্পটবয়রা এসে না পড়ে, নিজেই তাদের ডেকেডেকে সরে দাঁড়াতে বলল। তার পরে মাথা চুলকে বলল, ‘‘উইগটা এ বার পাল্টাতে হবে।’’ হেসে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নিজের চুল কেমন? টুক করে মাথার উইগটা ফাঁক করে তার খোঁচা খোঁচা চুল দেখিয়ে দিল। সপ্রতিভ ও দীপ্ত চোখের বছর আটেকের এই খুদে অভিনেতার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি সর্বক্ষণ। আর ফাঁক পেলেই দে ছুট...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Television Actor Aranya Roy Chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE