আনন্দplus দফতর। আইফোনের রেকর্ডার অন, কিন্তু সে দিকে মনই নেই তাঁর। প্রথমে হাত, তার পর চামচ দিয়ে খেয়েই চলেছেন একটার পর একটা বেকড রসগোল্লা।
পাশ থেকে একজন আম সন্দেশ এগিয়ে দেওয়াতে বললেন, ‘‘নো, থ্যাঙ্কস। ওটা আমি মুম্বইতেও পাই। কিন্তু এই বেকড রসগোল্লা জাস্ট টু গুড।’’ বুঝলাম খাওয়া পর্ব চট করে থামবে না। তার মধ্যেই শুরু হল আড্ডা...
ফিল্মস্টাররা কবে থেকে এত মিষ্টি খান?
আমি খাই। আই হ্যাভ আ বিগ সুইট টুথ। মিষ্টি দেখলে আমি থামতে পারি না। রাতে ফ্রিজ খুলে চকোলেট খোঁজা আমার রেগুলার রুটিনের মধ্যেই পড়ে। আর এই বেকড রসগোল্লার সামনে কোথায় লাগে সুইস চকোলেট...
একটু সিরিয়াস আলোচনায় আসি...
নিশ্চয়ই...
কার সঙ্গে কথা বলছি বলুন তো?
আমার সঙ্গে... ফারহান...
সে কে? বলিউডের অন্যতম প্রতিভাবান পরিচালক? না, ভীষণ স্টাইলিশ একজন অভিনেতা?
দু’টোই। আমি দু’টো কাজই মন দিয়ে করতে চাই। অভিনেতা হিসেবে ‘দিল ধড়কনে দো’ রয়েছে। তার পর অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ‘ওয়াজির’। সেপ্টেম্বর থেকে ‘রক অন টু’ শুরু। পরিচালক হিসেবে তার পর একটা ছবি ডিরেক্ট করব।
আপনি নাকি অরুণিমা সিংহ-র জীবন নিয়ে ছবি করবেন ভাবছেন?
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গিয়েছে অরুণিমার সঙ্গে। আমি জীবনে এত ইন্সপিরেশনাল গল্প শুনিনি।
পাঠকদের অনেকেই হয়তো জানেন না অরুণিমা সিংহর জীবনটা। পরিচালক ফারহান আখতার কেন করতে চাইছেন তাঁকে নিয়ে ছবি, সেটা কি আনন্দplus-এর পাঠকদের বলবেন একটু...
শিওর। এর আগে আমি অরুণিমার কথা বলিনি। অরুণিমা সিংহ একজন জাতীয় ভলিবল এবং ফুটবল প্লেয়ার। ২০১১ সালে তিনি লখনউ থেকে ট্রেন ধরেন দিল্লিতে এসে সিআইএসএফ-এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।
সে দিন রাতে কিছু দুষ্কৃতী ট্রেনে তাঁকে আক্রমণ করে। শ্লীলতাহানি ছাড়াও তাঁর পয়সার ব্যাগ এবং সোনার চেন কেড়ে নেয়। প্রতিবাদ করতে গেলে সেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। অন্য দিক থেকে ঠিক সেই সময়ই একটা ট্রেন এসে পড়ায় তাঁর দু’টি পা-ই কাটা যায়। শি লস্ট হার টু লেগস।
তার পর?
তার পর এইমসে ভর্তি। দুটি পা-ই অ্যাম্পিউট করা হয়। তাঁকে নিয়ে তার পর শুরু হয় কেচ্ছা। কেউ বলে তিনি নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। কেউ বলে, প্রশাসন এ রকম বলছে কারণ তারা অরুণিমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না।
এর মধ্যেই অরুণিমা ঠিক করেন, শি ক্যাননট ওয়েস্ট হার লাইফ। যুবরাজ সিংহ কী ভাবে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছে, সেই খবর পৌঁছে যায় ওঁর কাছে। অরুণিমা ঠিক করেন কাটা পা নিয়েই তিনি এভারেস্টে উঠবেন।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাচেন্দ্রি পালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এবং ২০১৩-র মে মাসে দু’টো অ্যাম্পিউট করা পা নিয়ে তিনি মাউন্ট এভারেস্টে চড়েন। পুরো ঘটনাটা জানার পর আমি সঙ্গে সঙ্গে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। এবং ঠিক করি অরুণিমার গল্পটাকে নিয়ে আমি ছবি করবই।
এই সাবজেক্টগুলো ফারহান আখতারের চোখে পড়ে কী করে?
প্রধানত নিউজপেপার আর টুইটার পড়ে। এ ছাড়া অবশ্যই বন্ধুবান্ধবেরা জানায়। আমার কাছে ইন্সপিরেশনাল গল্প বড্ড অ্যাপিলিং...
আপনার নিজের জীবনের প্রথম দিকটা এতটা এলোমেলো ছিল বলেই কি আজকে এই ইন্সপিরেশনাল গল্পগুলো আপনাকে এত টানে?
অবশ্যই হতে পারে। আমার জীবনে প্রথম দিকটার কথা ভাবতেও চাই না। অসম্ভব খারাপ ছিল সেটা। পড়াশোনা করতাম না একেবারেই...
থামবেন না। বলুন পুরোটা। অনেক সতেরো-আঠারো বছরের ছেলেমেয়েরা ইন্সপায়ার্ড হতে পারে...
ইফ ইউ ইনসিস্ট... আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় শুরু হয়, কলেজের সেকেন্ড ইয়ার থেকে। আমি স্কুলে আর্টসে খুব ভাল ছিলাম। সোশিওলজি, লিটারেচার আমার খুব ভাল লাগত।
কিন্তু দেখলাম বন্ধুবান্ধবরা আর্টস নিচ্ছে না কেউ কলেজে। সবাই কমার্স পড়ছে। শুধুমাত্র বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে পারব ভেবে কমার্সে ভর্তি হয়ে গেলাম।
উফ কী সাঙ্ঘাতিক সে দিনগুলো। ইকনমিক্স, অঙ্ক আমার ভালই লাগত না। সেকেন্ড ইয়ার থেকে কলেজে যাওয়াই ছেড়ে দিলাম। এ রকম একটা চরিত্রই আমি ‘লক্ষ্য’ ছবিতে হৃতিক রোশনের জন্য রেখেছিলাম। ওটা আমার লাইফস্টোরি।
তার পর?
তার পর এক বছর কলেজের টাইমে বেরোতাম আর ঠিক কলেজ শেষ হওয়ার সময়ে ফিরে আসতাম। একদিন বাড়ি ফিরে দেখি মা গম্ভীর মুখে ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন। আমাকে বললেন, ‘‘এত কষ্ট আমাকে না দিলেও পারতে তুমি। ইয়োর প্রিন্সিপাল হ্যাজ সেন্ট আ লেটার। তোমাকে কলেজ থেকে রাস্টিকেট করে দেওয়া হয়েছে।’’
সেই সময় আপনার মা, হানি ইরানিও তো প্রচুর স্ট্রাগল করছিলেন...
হ্যাঁ, মা আবার করে জীবনটা শুরু করতে চাইছিল সেই সময়। বাবার সঙ্গে সেপারেশনের পর মা নতুন ভাবে কাজ করতে চাইছিল। সেই সময় আমায় নিয়ে ঝামেলা...
আজ রিগ্রেট করেন নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ, করি। মাকে সেই সময় ওই কষ্টটা না দিলেই হত। মা-ও সেই সময় আমায় আর বোনকে মানুষ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। সব কিছু নিয়েই একটা ফ্রাস্ট্রেশনও ছিল। ইট ওয়াজ আ ভেরি ভেরি টাফ টাইম।
তার পর মা কী বললেন?
মা কলেজের চিঠি হাতে নিয়েই বললেন আর তোমাকে আমি সামলাতে পারছি না। তুমি তোমার বাবার সঙ্গে গিয়ে থাকো। ব্যস, এটা শোনা মাত্রই সাঙ্ঘাতিক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
কেন?
দেখুন, বাবা (জাভেদ আখতার)-র সঙ্গে মায়ের ছাড়াছাড়ি যখন হয় তখন আমার বয়স আট বছর । তার পর আমার কাছে পুরো জীবনটাই ছিল আমার মা আর বোন জোয়া। হঠাৎ করে ওই কমফর্ট ছেড়ে বাবার কাছে থাকাটা আমার কাছে পানিশমেন্ট মনে হচ্ছিল। বাবার সঙ্গে একটা দূরত্বই ছিল।
তার পর ‘দিল চাহতা হ্যয়’?
তার কিছু দিন পরেই ‘দিল চাহতা হ্যয়’। মাঝখানে অনেকটাই স্ট্রাগল।
কিন্তু আপনি তো জাভেদ আখতারের ছেলে। বাবা সকালে বলে দিলে তো শাহরুখ খান বিকেলে দেখা করতেন আপনার সঙ্গে!
সেই ভাবে বোধ হয় চলে না ইন্ডাস্ট্রি। ‘স্টার কিড’দের কিন্তু ঝামেলা কম পোয়াতে হয় না। তবে কয়েকজন অবশ্যই হেল্প করেছিলেন। যাঁরা হেল্প করেছিলেন সেই সময় তাঁদের ছেলেরা আমার ছোটবেলার বন্ধু ছিল।
কারা ছিলেন আপনার ছোটবেলার বন্ধু?
আদিত্য (চোপড়া) ছিল, অভিষেক (বচ্চন) ছিল, হৃতিক (রোশন) ছিল। ওদের মা-বাবা মানে যশ আঙ্কল, প্যাম আন্টি, অমিত আঙ্কল, জয়া আন্টি কী রাকেশ আঙ্কল খুব ভাল করে কথা বলতেন। কিন্তু বাকিরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এবং সেটাই স্বাভাবিক। তাঁরাও আমাকে চিনতেন না, আমিও তাঁদের চিনতাম না।
শাহরুখ বা আমিরকে চিনতেন না?
শাহরুখকে অল্পস্বল্প চিনতাম। আমিরকে চিনতামই না। আর আপনি শাহরুখের কথা বললেন না, শাহরুখকে একবার জিজ্ঞেস করবেন তো আমার কত বছর লেগেছিল ওকে আমার স্ক্রিপ্ট শোনাতে। আজকে ফিরে তাকালে মনে হয়, সেটা ভালই হয়েছে। কলেজের ওই ফাঁকিবাজির পর এই স্ট্রাগলটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে জীবনে।
এটা কি সত্যি ‘দিল চাহতা হ্যয়’ ছবিতে সমীরের চরিত্রটা আপনি হৃতিক রোশনকে ভেবে লিখেছিলেন?
একদম তাই। পরে সমীরের চরিত্রটা করে সইফ।
আর আকাশের চরিত্রটা লিখেছিলাম অক্ষয় খন্নার জন্য। যেটা পরে আমির করে। সিদ্ধার্থ চরিত্রটা লিখেছিলাম অভিষেক বচ্চনকে মাথায় রেখে, যেটা করে অক্ষয় খন্না। অরিজিনাল প্ল্যান থেকে অনেকটা আলাদা হয়ে গিয়েছিল ফাইনাল প্রোডাক্টটা।
আপনি জাভেদ আখতারের ছেলে। আপনার বাবা আর সলমন খানের বাবা দু’জনে মিলে ‘শোলে’ লিখেছিলেন। সেলিম খানের ছেলের হিট অ্যান্ড রান কেস নিয়ে জাভেদ আখতারের ছেলের কী বক্তব্য?
আমার বক্তব্য কি ম্যাটার করে? পুরো ব্যাপারটার জন্যই তো কোর্ট রয়েছে। সলমনের নিশ্চয়ই কিছু বলার আছে, প্রোসিকিউশন ল’ইয়ার নিশ্চয়ই তার কাজ করছে। আমার ওপিনিয়ন নিয়ে কোনও লাভ নেই...
আপনি আমির, শাহরুখের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেলিম খানের ছেলের সঙ্গে কিন্তু কাজ করেননি...
অনেকবার দেখা হয়েছে আমাদের। কিন্তু আনফরচুনেটলি আমাদের কাজ করা হয়ে ওঠেনি। নিশ্চয়ই কোনও দিন কাজ করব।
কাজ করলে তো সেটা মিডিয়ার বড় খবর... সেলিম-জাভেদের ছেলেরা একসঙ্গে কাজ করছেন...
(হাসি) হ্যাঁ, জানি। মিডিয়ার কাছে বিগ নিউজ হবে সেটা। কিন্তু বাবাকে দেখেছি, সেলিম আঙ্কলকেও দেখেছি। তাঁরা কিন্তু পিছনে ফিরে তাকাতে চান না। বাবার অ্যাটিটিউড হচ্ছে, কী হয়েছে ‘শোলে’ লিখেছি তো! আগামী কাল কী লিখব সেটাই আসল। সেলিম আঙ্কলেরও একই মত। আর সেলিম-জাভেদকে নিয়ে অনেক গল্প আছে, যেটা মিডিয়া তৈরি করেছে...
‘দিল ধড়কনে দো’ ছবিতে তো আপনিও মিডিয়া...
হ্যাঁ, আমি একজন জার্নালিস্টের চরিত্রে যে ‘আরব স্প্রিং’ নিয়ে রিপোর্ট করছে ইজিপ্টে। তবে গল্পটা সেটা নিয়ে নয়।
আজকে কোনও রিপোর্টার ফারহান আখতারের ইন্টারভিউ করতে বসলে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ নিয়ে প্রশ্ন না করলে সম্পাদক রেগে যাবেনই...
ওটা আমার জীবনের সবচেয়ে ফুলফিলিং ফিল্ম। ওটা অ্যানাদার এক্সট্রিম! যে ছেলেটাকে কলেজে না যাওয়ার জন্য নানা কথা শুনতে হয়েছে, যে ছেলেটার জন্য তার বাবা-মা টেনশন করেছে প্রচুর— সেই ছেলেটা তার মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’য়ে তার অভিনয় আর অধ্যবসায় দিয়ে। শুধু এই একটা কারণেই আমার কাছে ছবিটা এত স্পেশাল।
এটা কি সত্যি আপনি একশো মিটার বারো সেকেন্ডে দৌড়তেন ছবির শেষ দিকে?
বারো নয় তো। ১১.৪ সেকেন্ড ছিল আমার টাইম। আসলে একটা ব্যাপার নিয়ে ক্লিয়ার ছিলাম। আমি যখন অ্যাথলিটের চরিত্রে অভিনয় করছি, আমাকে অ্যাথলিট হতে হবে। ডান্সার, অ্যাথলিট— এ সবের অভিনয় করা যায় না। এগুলো ট্রেনিং নিয়ে তৈরি করতে হয়। না হলে ক্যামেরার সামনে ধরা পড়ে যাবেন আপনি।
আপনার সঙ্গে কথা বলে মনে হল, আপনি এখনও সেই বান্দ্রার ছেলেটাই রয়ে গিয়েছেন। টিনএজে বিন্দাস, যৌবনে ওয়াকি সেন্স অব হিউমর, কিন্তু আজকে মধ্য বয়সে এসে সিরিয়াস...
একদমই তাই। লোকে আমার সেন্স অব হিউমরের কথা বলে। ওটা পুরোই বান্দ্রার সেন্স অব হিউমর। ওই ক্যাথলিক মানুষগুলো নানা অসুবিধার মধ্যে ঠিক হাসতে পারে। ওদের কাছ থেকেই পেয়েছি সেটা। সারা জীবন যদি আমি ‘বান্দ্রা বয়’ থাকতে পারি, আমি ভীষণ খুশি হব।
শেষ প্রশ্ন, ‘কালি বিল্লি’ আর ‘ডন’ কবে ফিরছে এটা তো বলে যান...
হা হা হা হা। এখনও তো ঠিক করিনি ‘ডন টু’য়ের সিকুয়েল। খুব শিগগির মনে হয় না ‘ডন’ আর ‘কালি বিল্লি’ ফিরবে।
অভিনেতা না পরিচালক, কোন ফারহান আখতারকে আপনার সেরা মনে হয়? কেন?
আপনার ছবি-সহ মেল পাঠান anandaplus@abp.in-এ
আমাদের বিচারে সেরা পাঁচজনের নাম প্রকাশ করা হবে আনন্দplus-এর নেট এডিশনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy