প্রথম ছবির মিঠে স্বাদ তাঁর দ্বিতীয় ছবিতেও। ছোট শহরের সাদামাঠা লোকেদের স্বপ্ন উড়ানের গল্প বলতে ভালবাসেন অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি।
‘নীল বাটে সন্নাটা’ লোকমুখে প্রচার পেয়ে ভাল চলেছিল। অশ্বিনীর দ্বিতীয় ছবি ‘বরেলী কী বরফি’ সদ্য মুক্তি পেয়েছে। যা বক্স অফিসে আশাব্যঞ্জক। আপনি কি ছোট পরিসরে সম্পর্কের গল্প বলতে ভালবাসেন? ‘‘হ্যাঁ, আমাদের রোজকার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ছোটখাটো জিনিসগুলো খুব অদ্ভুত। নস্ট্যালজিক। এগুলো ছবিতে ফুটিয়ে তুলতেও ভাল লাগে,’’ বললেন অশ্বিনী। একটু থেমে নিজেই যোগ করলেন, ‘‘বাড়িতে সকলে একসঙ্গে বসে খাওয়া, টিভি দেখা... একটা নিটোল পরিবার। এই জিনিসটা এখন শহরে খুব বেশি দেখা যায় না। ছেলেমেয়ে বড় হলেই সব আলগা হয়ে যায়। আপনি নিজের ছেলেবেলাটাই ভেবে দেখুন, মা-বাবার সঙ্গে তখন কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন! এই সময়গুলো ফিরে দেখতে আমার ভাল লাগে।’’ তাঁর নিজের পছন্দ উডি অ্যালেন, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ঘরানার ছবি। যেখানে সম্পর্কের নোনতা-মিষ্টি স্বাদ থাকে। অশ্বিনীর মতে, ‘‘এখন কনটেন্টই সব। তাই বড় স্টার, বিশাল ক্যানভাস যে সব সময়েই সফল হচ্ছে, এমন নয়। মনের কাছাকাছি খুব সাধারণ গল্পও চলছে। মানুষ বিনোদন চান। সেটা যে কোনও ফর্মে হতে পারে।’’
‘নীল বাটে সন্নাটা’তে তিনি মা-মেয়ের গল্প বলেছিলেন। সেখানে তাঁর নিজের জীবনের প্রেরণাও ছিল। জানালেন, ‘বরেলী কী বরফি’তেও তাই। ‘‘মা-মেয়ের মধ্যে যে খুনসুটি চলে, সেটা একদম শাশ্বত। আমার সঙ্গে মায়ের দিনরাত কথা কাটাকাটি হতো। এ দিকে দু’জনের দু’জনকে ছাড়া চলবেও না,’’ হেসে বললেন পরিচালক।
তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবেন শুনে প্রথমে আঁতকে উঠেছিলেন তাঁর মা। আর এখন তিনি মেয়ের সব ইন্টারভিউয়ের কাটিং জমিয়ে রাখেন। টেলিভিশনের কোনও অনুষ্ঠান মিস করেন না। আসলে অশ্বিনীর পরিবারের সঙ্গে ফিল্মি দুনিয়ার কোনও সম্পর্ক ছিল না। মা স্কুলের প্রিন্সিপাল আর বাবা কলেজের অধ্যাপক। তাঁরা চেয়েছিলেন মেয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট হোক। ‘‘বাড়িতে বোঝালাম, আমার দ্বারা অঙ্ক কোনও মতেই হবে না। তার চেয়ে আর্ট নিয়ে প়ড়াশোনা করতে দেওয়া হোক। তার পরই কমার্শিয়াল আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করি।’’ ছবি তৈরির আগে বিজ্ঞাপনের এজেন্সিতে অনেক দিন কাজ করেছেন অশ্বিনী। অল্প পরিসরে মনের কথা বলার স্টাইল তখনই রপ্ত করে ফেলেছিলেন।
বলিউডে মহিলা পরিচালকের সংখ্যা এখনও বেশ কম। প্রশ্নটা করতেই দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে জবাব দিলেন, ‘‘এখন তো তাও অনেক মহিলা পরিচালকই কাজ করছেন। আর ছেলেমেয়ের বিভাজন না করে ছবিটা কেমন হচ্ছে, সেটা নিয়েই ভাবা উচিত।’’ কিন্তু মহিলা পরিচালক হিসেবে কি কখনও সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে? একটু থেমে জবাব দিলেন, ‘‘ঠিক সমস্যা বলব না। আউটডোর শ্যুট হলে একটু ঝামেলা হয়। কোনও মহিলা এত ব়ড় একটা ইউনিটকে নির্দেশ দিচ্ছে, এটা সকলে মানতে পারে না। লোকে অভ্যস্তও নয় দেখতে। তবে মুম্বইয়ের স্টুডিয়োয় এটা কোনও সমস্যা নয়।’’
অশ্বিনী যেমন সেট সামলান, তেমনই বাড়িও। সাক্ষাৎকারের সময় সমানে পিছিয়ে দিচ্ছিলেন। পরে ক্ষমা চেয়ে নিজেই বললেন, ছেলেকে নিয়ে চুল কাটাতে গিয়েছিলেন। তাই দেরি। অশ্বিনীর আর একটা পরিচয় তিনি ‘দঙ্গল’-এর পরিচালক নীতীশ তিওয়ারির স্ত্রী। পরিবারে দু’জন পরিচালক মানে তো ক্রিয়েটিভিটির বিস্ফোরণ! হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘অনেকে ভাবেন, আমি আর নীতীশ সিনেমা ছাড়া আর কিছু নিয়েই কথা বলি না। একে অপরের মতামত হয়তো নিই, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিজস্বই।’’ নীতীশ ‘বরেলী কী বরফি’র চিত্রনাট্য লিখেছেন। অশ্বিনীর কথায়, ‘‘নীতীশ ভাল লিখতে পারে। এ দিকটায় ওর দখল আছে। আমার আর্ট, সেট ডিজাইনের দিকটা ভাল। তবে কেউ কারও কাজে জোর করে মতামত দিই না। আমাদের কাজের ধরনও আলাদা।’’
অশ্বিনী তাঁর তৃতীয় ছবিরও পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। তবে ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই’ ধারণায় বিশ্বাসী, তাই সব ঠিক না হলে কিছু বলতে রাজি নন। যদিও জানালেন, নতুন ছবিতেও তিনি সম্পর্কের গল্পই বলতে চান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy