Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেমেয়েদের মুখে ‘চিকনি চামেলি’ শুনলে ডিপ্রেশন হয়

‘লুটেরা’, ‘কুইন’, ‘শানদার’ খ্যাত সঙ্গীত পরিচালক অমিত ত্রিবেদী বললেন। ‘লুটেরা’, ‘কুইন’, ‘শানদার’ খ্যাত সঙ্গীত পরিচালক অমিত ত্রিবেদী বললেন। শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী

শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

• গুজরাতি মানেই তা হলে আর ব্যবসায়ী নয়...

হা হা হা... না, কেউ কেউ সঙ্গীত পরিচালকও হয় (হাসি)। গুজরাতে বেড়ে উঠলে কী হত জানি না। তবে সান্টাক্রুজের মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়ায় ব্যবসা করার ঝুঁকিটা আর নিতে পারিনি।

• টুইটার বায়োতে তাই শুধু একটাই শব্দ, কম্পোজার?

একদম তাই।

• তা হলে প্রথমেই অভিযোগ দিয়ে শুরু করি। ‘দেব ডি’, ‘লুটেরা’, ‘কুইন’য়‌ের মতো ছবির সঙ্গীত পরিচালক কেন বছরে একটা করে ছবিতে কাজ করবেন?

(একটু ভেবে) আমি একটু চুজি বলে।

• এ তো এড়িয়ে যাওয়া উত্তর...

না, না, সত্যি বলছি। কোনও প্রোজেক্টের সঙ্গে যদি একাত্ম না হতে পারি, সে কাজটা নিতে আমার আপত্তি আছে। মনের মতো কাজ যেগুলো পাই একটাও ছাড়ি না। কিন্তু ইঁদুর দৌড়ে নেমেছি বলে, যে কাজ পাব সেটাই করব — তেমনটা আমি করতে পারব না। ইতনা ভাগনা নেহি হ্যায় ভাই। টেক ইট ইজি। আর বলিউডে মিউজিক করার তো এমনিই একটা অসুবিধা আছে। সিনেমাটা যদি না চলে, তা হলে মিউজিক ডিরেক্টরও গুরুত্ব পাবে না। যে-যে সিনেমার কথা বললেন, সেগুলো কিন্তু হিট ছিল বলেই আমাকে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে লোকে মনে রেখেছে। ছবিগুলো হিট না হলে, আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাত না। ‘বোম্বে ভেলভেট’‌য়ের কথাই ধরুন না। আমার তো মনে হয়, ওটা আমার জীবনের সেরা কাজ। কিন্তু কেউ ওটার কথা বলে? বলে না। আপনিও এড়িয়ে গেলেন...

• আমি ইচ্ছে করেই বলিনি। কারণ শুনেছিলাম ‘বোম্বে ভেলভেট’ বক্স অফিসে তেমন না চলায় আপনি ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলেন। তাই...

হুমম... ঠিকই শুনেছেন। খুব খারাপ লেগেছিল। খুব ডিপ্রেসড লাগত। এত মন দিয়ে কাজ করেছিলাম। ছবিটা কিন্তু খারাপ ছিল না। কেন যে চলল না, জানি না। আর ওই যে বললাম, ছবি হিট না করলে মিউজিক ডিরেক্টরকে কেউ মনে রাখে না।


ইকতারা (ওয়েক আপ সিড)

• জানেনই যখন, তখন সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনায় এলেন কেন। বেশ তো ছিলেন জিঙ্গল মেকার হিসেবে। ‘হ্যালো হানি বানি’ বানিয়েছেন, লোকের মুখে মুখে ঘুরছে সে টিউন...

ধুর! অত কেরিয়ার প্ল্যানিং আমার নেই। কখনও ভাবিইনি সঙ্গীত পরিচালক হব। ছোটবেলায় তো স্বপ্ন ছিল জিমন্যাস্ট হওয়ার। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে ও রকম ভাবাটা বেশ চাপের। পড়াশোনা করে একটা চাকরি পাওয়াটাই প্রয়োরিটি। গানবাজনার পরিবেশও তেমন ছিল না বাড়িতে। গান বলতে ভজন, কীর্তন আর গরবা। হঠাৎ একদিন শুনলাম ‘রোজা’, ‘হাম সে হ্যায় মুকাবিলা’... ব্যস, সে দিন থেকে জিমন্যাস্ট ভুলে গান। ষাট সেকেন্ড কী তিরিশ সেকেন্ডের জিঙ্গল তৈরির একটা চ্যালেঞ্জ আছে ঠিকই। সেটা এনজয়ও করছিলাম। কিন্তু অনুরাগ (কাশ্যপ) একদিন বলল সিনেমার গান নয় কেন। ‘দেব ডি’র মতো একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট শোনাল আমাকে। মিউজিক করতে বলল। ব্যস, ভাল করে ঢুকে পড়লাম বলিউডে।

• নব্বইয়ের রোম্যান্টিক গান থেকে এখনকার টেক-নির্ভর গান। বলিউডের এই পরিবর্তনটা কেমন লাগে?

ভালই তো। অন্য সব আর্ট ফর্মের যেমন ইভোলিউশন হয়, গানেরই বা হবে না কেন।

নিজের সুরে সেরা পাঁচ

• আজাদিয়া (উড়ান)

• পায়েলিয়া (দেব ডি)

• সাওয়ার লু (লুটেরা)

• মহব্বত বুরি বিমারি (বোম্বে ভেলভেট)

• ইকতারা (ওয়েক আপ সিড)

• তার মানে আপনি গানে টেকনোলজি ব্যবহার সমর্থন করেন? আপনার গানে তো দেখা যায় না...

আমি ব্যবহার করি না মানেই যে আমি তার বিরোধী তা তো নয়। এই তো ‘শানদার’‌য়ে একদম অন্য রকম সুর করলাম। এটা তো দু’বছর আগেও করব বলে ভাবিনি। দেখুন, সব জিনিসের একটা ভাল দিক, একটা খারাপ দিক থাকবে। রহমানস্যরকেই দেখুন না! ‘ওকে কানমানি’তে কী সুন্দর ইলেট্রো ট্র্যাক ব্যবহার করলেন। সবার তো ভালই লেগেছে। কিন্তু কেউ যদি গলার ত্রুটি ঢাকতে সফটওয়্যারের পায়ে আছাড় খেয়ে পড়ে, তা হলে সে নিজের ক্ষতি নিজেই ডেকে আনবে। আর সে উদাহরণ তো ভূরি ভূরি। তবে আমার কোনটা খারাপ লাগে জানেন?

• কোনটা?

উল্টোপাল্টা লিরিক্স। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মুখে যখন ‘চিকনি চামেলি’ বা ‘শীলা কি জওয়ানি’ শুনি, আমার ডিপ্রেশন হয়। এ রকম লিরিক্সের কি সত্যিই দরকার আছে!

• এ রকম অনেক গানের কথা তো আপনার বন্ধু অমিতাভ ভট্টাচার্যও লেখেন। বলেন না ওঁকে?

কে বলেছে বলি না! সব সময় ঝগড়া হয় ওর সঙ্গে এ সব নিয়ে। বলি, কী সব লিখছিস এগুলো। নিজের বাচ্চার মুখে এগুলো শুনলে ভাল লাগবে?

• কিন্তু ওঁকে ছাড়া আর কারও লিরিক্সে তো তেমন কাজও করলেন না!

কী করব! বন্ধু তো। বেচারি মুম্বই এসেছিল গায়ক হবে বলে, আমিই তো গীতিকার বানিয়ে দিলাম (হাসি)। আমার খূব ইচ্ছে গুলজারসাবের সঙ্গে কাজ করার। কিন্তু নিজে গিয়ে বলতে আসলে খুব লজ্জা করে। দেখি কবে বলতে পারি।

• আপনার গানে নানা প্রাদেশিক প্রভাব দেখা যায়। ‘লুটেরা’তে বাংলা, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’য়‌ মরাঠি, ‘কাই পো ছে’তে গুজরাতি। এই ট্রানজিশনটা কী করে করেন?

আমি ইচ্ছে করে যে সব করি, তা নয়। আমার একটা শর্ত থাকে। যে ছবিতে আমি মিউজিক করব, তার চিত্রনাট্যটা মোটামুটি আমাকে বলতে হবে। সেটা থেকে দেখি কোন ধরনের সুর ছবির থিমের সঙ্গে যাবে। ব্যস, সেই ধরনের গান শুনতে লেগে পড়ি।

পছন্দের সেরা পাঁচ

• রেহনা তু, হ্যয় জয়সা তু (এ আর রহমান, ‘দিল্লি সিক্স’)

• তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি (আর ডি বর্মন, ‘মাসুম’)

• দিওয়ানা হুয়ে বাদল (ও পি নায়ার, ‘কাশ্মীর কি কলি’)

• সাচ মেরা ইয়ার হ্যয় (আর ডি বর্মন, ‘সাগর’)

• ইয়ে জো দেশ হ্যয় তেরা (এ আর রহমান, ‘স্বদেশ’)

• আর মিস্টার বচ্চনকে দিয়ে ‘আজ কি রাত হ্যয় জিন্দেগি’র টাইটেল ট্র্যাক গাওয়ানোর সময়?

উফ্, আর বলবেন না। আমি তো শোনা থেকে ভয়ে সিঁটিয়ে আছি। ওই রকম একটা পার্সোনালিটির সামনে দাঁড়ানোটাই তো চাপের। কিন্তু রেকর্ডিং স্টুডিয়োতে দেখলাম বচ্চনসাবের মতো অমায়িক লোক আর হয় না! অনেকের সামনে গান গাইতে উনি লজ্জা পান। এখনও সে কথা বলতে গিয়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। ভাবা যায়, মিস্টার বচ্চন আমার সুর দেওয়া গানে ওঁর ব্যারিটোন গলা দিয়েছেন!

• আর একটা অভিযোগ আছে আপনার বিরুদ্ধে।

বলুন।

• এই যে, ছবির সেরা গানটা নিজের জন্য রেখে দেন।

এই রে! একদম না। সব গানই আমি নিজের গলায় রেকর্ড করি। তারপর সেটা প্রোডিউসরকে শোনাই। বেশির ভাগ সময় প্রযোজকের আমার গলাটাই ভাল লেগে যায়। তাই ওটা আমার ভাগ্যেই জোটে। আরে! আমি খুব একটা খারাপও গাই না (হাসি)। না, হলে ‘ওয়েক আপ সিড’‌য়ের ‘ইকতারা’ গানটা আমায় দেবে কেন?

• কিছু দিন আগে আপনার টুইটারে দেখছিলাম লিখেছেন: যারা তোমাকে কোনও দিন পাত্তা দেয়নি, পরে তারাই বলবে কেমন করে তাদের সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছিল। এটা কি অভিজ্ঞতা থেকে?

হা হা হা। একদম তাই। আরে, কিছু দিন আগে কোন একটা কাগজে দেখলাম, আমার ছোটবেলা নিয়ে বলছে আমার ছোটবেলার এক ‘বন্ধু’। যাকে আমি চিনিই না। এটাই লাইফ ভাই! তোমাকে তোমার কাজ করে যেতে হবে। লোকে কী বলল, সে সব শুনতে যাবে কী মরবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE