Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সূচে সুতো গলল না

বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছবি-করিয়েরা অতিনায়কের বদলে চেনা জীবনের গল্পে বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য-সংলাপে দর্শককে মাত করার চেষ্টা করছেন।

ছবির দৃশ্য

ছবির দৃশ্য

সোমেশ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ছোট ছোট ইচ্ছে, ছোট ছোট সুখ, ছোট ছোট মনখারাপ।
সাদা ফ্যাটফ্যাটে চুনকাম করা বাড়ির ছাদে খাটিয়ার উপরে টাঙানো মশারি। সিঁড়ি দিয়ে কোলপাঁজা করে নামিয়ে আনা সাইকেল। শহরতলির ময়লা দিগন্ত। ডাবল ক্যারি।আর সেলাই মেশিনের ঘরঘর।
ক্যানভাসটা মন্দ ছিল না। দর্শকের অভ্যেস নেই, এমনটাও নয়। বরং বড় বাজেটের আঙুলের ফাঁক গলে চুঁইয়ে পড়া নয়া বলিউ়ড ইদানীং এই ছোট সূচের কাজে বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু শরৎ কাটারিয়ার যে সূচে সুতো পরানো থেকেই গোলমাল!
দর্জির কাজে দক্ষ মৌজি (বরুণ ধওয়ন) সেলাই মেশিনের দোকানে কাজ করতে গিয়ে মালিকের ছেলের শখ মেটাতে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে, হামাগুড়ি দেয় জেনে কেঁদে ভাসাল তার স্ত্রী মমতা (অনুষ্কা শর্মা)। এমন চাকরি করার কী দরকার? ব্যস! মালিকের ছেলের সঙ্গে মারপিট করে চাকরি ছেড়ে দিল মৌজি। তার চেয়ে বরং ফুটপাতে গাছের নীচে সেলাই মেশিন নিয়ে বসবে সে। তার ঠাকুরদাও ছিল নামজাদা দর্জি। সেলাই তাদের রক্তে। বাবা (রঘুবীর যাদব) যতই আপত্তি করুক, শুনতে সে নারাজ।

সুই ধাগা পরিচালনা: শরৎ কাটারিয়া অভিনয়: বরুণ, অনুষ্কা, রঘুবীর ৫/১০


খানিক মেলোড্রামা সত্ত্বেও এটুকু তবু ঠিক ছিল। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি থাকা মায়ের জন্য মৌজির তৈরি করা নাইটি দেখে ওয়ার্ডসুদ্ধ সকলের অর্ডার দিয়ে ফেলা থেকে যে সুতো হালকা হতে শুরু করল, তা আর টান হল না কখনও। এক সময়ে তো দর্জি আর ডিজ়াইনারের কাজও ঘেঁটেঘুঁটে ঘণ্ট! এক পোশাক সংস্থার কর্ত্রীকে প্রায় চ্যালেঞ্জ করে ফ্যাশন-যুদ্ধে নেমে পড়ল মৌজি-মমতা। নিজেদের তল্লাটে বসে যাওয়া দর্জি পরিবারের মেয়ে-মরদদের জুটিয়ে খুলল ব্র্যান্ড— ‘সুই ধাগা: মেড ইন ইন্ডিয়া’। সেখানে আবার দেখা গেল মাকু-বোনা তাঁত!
একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মতোই?
একটা সময় ছিল, মেট্রো বা মিত্রায় কুলি-কালিয়া লড়িয়ে এসে বাবা-কাকারা বলতেন, ‘‘ও হিন্দি ফিল্মে একটু জল থাকে, ওটুকু ছেঁকে নিলে জমজমাট!’’ সেই যুগটা বলিউ়ড অনেকটাই পিছনে ফেলে এসেছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছবি-করিয়েরা অতিনায়কের বদলে চেনা জীবনের গল্পে বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য-সংলাপে দর্শককে মাত করার চেষ্টা করছেন। পরিচালক শরৎ কাটারিয়ার আগের ছবি ‘দম লাগা কে হাইসা’তেও সেই চেষ্টাটা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু এ বার সূচে সুতো গলল না।
অথচ এ ছবিতে অনেক সম্পদ ছিল ছড়ানো-ছেটানো। শুধু অনিল মেটার ক্যামেরার সৌজন্যেই মনের খচখচানি সত্ত্বেও চোখ আটকে থাকে বহু ফ্রেমে। ‘হোটেল রোয়ান্ডা’ বা ‘দ্য পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’ ছবির সূত্রে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীতকার আন্দ্রেয়া গুয়েরা বলিউডে প্রথম কাজ করেন ‘দম লাগা কে হাইসা’তেই। কিন্তু এই ছবিতে তাঁর করা আবহসঙ্গীতে পাশ্চাত্য মূচ্ছর্না অপার্থিব উচ্চতায় পৌঁছতে পারেনি কোনও মুহূর্তকেই। দাগ কাটল না অনু মালিকের বাঁধা গানও।
রঘুবীর যাদবের মতো অভিনেতা মরা সংলাপেও প্রাণসঞ্চার করতে পারেন। করেওছেন। কিন্তু মাঝে মাঝেই ফ্যাঁচফ্যাঁচ কান্না সত্ত্বেও যাঁর কাজ দেখার জন্য ইন্টারমিশনের পরেও হলে ফিরে আসা যায়, তিনি অনুষ্কা। ছোট ছোট সুখ-দুঃখ, জেদ-অভিমান ভারী সুন্দর ফুটেছে তাঁর কথাহীন চোখে-মুখে। তাঁর পাশে বরং বরুণ একটু উচ্চকিত, খানিক কাঁচাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE