Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘ব্যোমকেশ গোত্র’তে শেষমেশ ‘সত্য’কেই জেতালেন অরিন্দম

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘রক্তের দাগ’ গল্পে যে সত্যকামকে এঁকেছিলেন, সে শুধুই লাম্পট্য ও মায়ের উচ্ছৃঙ্খল জীবনের চিহ্নমাত্র। আর এই দুইয়ের মাঝের হয়ে ওঠাকেই যেন খুঁজতে চাইলেন পরিচালক অরিন্দম শীল ‘ব্যোমকেশ গোত্র’তে।

গল্পের ছাঁচটুকু সামনে রেখে গোটা কাহিনিই অনেকটা নতুন করে বুনেছেন অরিন্দম।

গল্পের ছাঁচটুকু সামনে রেখে গোটা কাহিনিই অনেকটা নতুন করে বুনেছেন অরিন্দম।

সোহিনী দাস
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ব্যোমকেশ গোত্র

পরিচালনা: অরিন্দম শীল

অভিনয়: আবীর, অর্জুন, রাহুল, সোহিনী

৬.৫/১০

উপনিষদ শুনিয়েছিল জবালাপুত্র সত্যকামের উত্তরণের গল্প। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘রক্তের দাগ’ গল্পে যে সত্যকামকে এঁকেছিলেন, সে শুধুই লাম্পট্য ও মায়ের উচ্ছৃঙ্খল জীবনের চিহ্নমাত্র। আর এই দুইয়ের মাঝের হয়ে ওঠাকেই যেন খুঁজতে চাইলেন পরিচালক অরিন্দম শীল ‘ব্যোমকেশ গোত্র’তে। ২০১৮-য় দাঁড়িয়ে ১৯৫২-র ব্রিটিশ গন্ধময় কলকাতাকে ধরা কঠিন বুঝেই ঠিকানা বদলেছেন পরিচালক। ৩৩ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিট উঠে গিয়েছে শৈলশহর মুসৌরিতে। গল্পের ছাঁচটুকু সামনে রেখে গোটা কাহিনিই অনেকটা নতুন করে বুনেছেন অরিন্দম।

এ ছবির মূলেই সত্য— সত্যান্বেষী, সত্যকাম ও সত্যবতী। এই তিন চরিত্রকে ঘিরেই ছবি। আর সব ছাপিয়ে রয়েছে নির্ভেজাল নিখুঁত সত্যের অন্বেষণ। ব্যোমকেশের কাছে ধনী ব্যবসায়ী-পুত্র সত্যকাম এসেছিল তাঁর মৃত্যুর পরে খুনের তদন্তের অদ্ভুত দাবি নিয়ে। উপনিষদীয় সত্যকামের মতোই পিতৃপরিচয় জানতে নাছোড় সে। কিন্তু এই সমাজ তাকে উত্তরণের সুযোগ না দিয়ে দেয় মৃত্যু। সেই মৃত্যু ঘিরে বেরিয়ে পড়ে একটি পরিবারের চেপে থাকা ইতিহাস। ছবির প্রথমাংশ জুড়ে ব্যোমকেশের ভূমিকা অনেকটাই দর্শকের, বলা ভাল পর্যবেক্ষকের। সমসাময়িক সমাজ-সাহিত্য থেকে রাজনীতি... সব কিছুই ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। সে হোরি খেলা, আবোল তাবোল, কালিদাস, মান্টো, ভাষা আন্দোলন হোক বা কিউবার রাজনীতি। তার সঙ্গে রয়েছে মুসৌরির অপূর্ব সৌন্দর্য। ছবিতে বদলেছে সম্পর্কের রসায়ন। পিসতুতো বোন চুমকির সঙ্গে সত্যকামের সম্পর্ক যেন তার লাম্পট্যকেই আর এক ধাপ তুরীয় করেছে। সমকালীন রিফিউজি সমস্যাকে তুলে ধরতে চুমকি ও শীতাংশুর সিলেটি বাচনকেও কাজে লাগিয়েছেন পরিচালক।

এ বার অরিন্দমের কাছে চ্যালেঞ্জ নতুন অজিত। রাহুল খারাপ নন। তবে কিছু কিছু জায়গায় ব্যোমকেশের প্রতি অযথা মুগ্ধতা অজিতকে খেলো করেছে। অরিন্দমের দর্শক ঋত্বিককে একটু হলেও মিস করবেনই। সত্যবতীকে উজাড় করে দিয়েছেন সোহিনী। ধুতি ছাড়া অন্য পোশাকে আবীরকেও বেশ লেগেছে। চুমকির চরিত্রে নজর কেড়েছেন সৌরসেনী। খানিক জট পাকিয়ে গিয়েছে প্রিয়ঙ্কার এমিলি চরিত্রটি। সত্যকামের ভূমিকায় অর্জুন কিছু জায়গায় বেশ ভাল, কিছু অংশে একটু দুর্বল। সুচিত্রার ভূমিকায় যথাযথ বৈশাখী মার্জিত। ছবির অবশ্যই প্রাপ্তি বিক্রম ঘোষের আবহ। অন্যতম আবিষ্কার বৈশাখীর স্বকণ্ঠে ঠুংরির টুকরোগুলো।

ছবিতে ছড়িয়ে বেশ কিছু যৌন মুহূর্ত। তবে তা অতিরিক্ত মনে হয়নি। বিশেষত সত্যকামের মুখে নাটকীয় সংলাপ রহস্যকে ছড়াতে ও ছাড়াতে সাহায্যই করেছে। মন ভরিয়েছে কুয়াশামাখা মুসৌরির বুকে মায়ালাগানো সিনেম্যাটোগ্রাফিও। কিন্তু ব্যোমকেশকে অকারণে সব্যসাচী প্রমাণ না করলে কি চলছিল না! অযথা নব্বই দশকের মারধরের দৃশ্যটুকু বড়ই অতিরিক্ত লাগল। কিন্তু তার বাইরেও এ ছবি আসলে প্রেমের। সত্যকামকে ঘিরে তিন রমণীর ত্রিভুজ প্রেমই বলুন বা উষাপতি-সুচিত্রার শেষ বসন্তের কামনাটুকু। না হলে কি চুমকির জন্য মাসোহারার ব্যবস্থা করে যেত সত্যকাম! আর সত্যকাম থেকে সেই সত্যটুকুকে নিংড়েই বোধহয় জিতে গেলেন অরিন্দম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Byomkesh Gowtro Arindam Sil Abir Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE