‘গীতাঞ্জলি’: নৃত্যনাট্যে ঋতুপর্ণা।
এক মাসেরও কম প্রস্তুতিতে আচমকা সিঙ্গাপুরে প্রথম বঙ্গ-উৎসব করতে নেমেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
পরিচিতদের মনে হয়েছিল ঋতুর হলটা কী? আজ পর্যন্ত কোনও বাঙালি তারকা একক উদ্যোগে বিদেশের অনিশ্চিত মাঠে এই জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের ঝুঁকি নেননি।
তা ছাড়া গড়পরতা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্স অফিস উপযোগী অনিবার্য তরলমতি নানান পদক্ষেপ থাকে। ঋতুর পরিবেশনা তা থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র এবং বিষয় নির্বাচনে আপাত গুরুগম্ভীর। যে প্যাকেজে সিঙ্গাপুরের প্রবাসী কিছু নাট্যশিল্পী নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ নৃত্যনাট্যে তাঁর নাচ আর শ্রাবণী সেনের অননুকরণীয় গায়কি ছাড়াও ছিল এক ঘণ্টার নাট্য-উপন্যাস। বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রথম পার্থ’।
সিঙ্গাপুর অংশের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা পারমিতা ভট্টাচার্য আর সঞ্জয় চক্রবর্তী তীব্র দুশ্চিন্তায় ছিলেন ডাউনটাউন সিঙ্গাপুরের ‘সোটা’ অডিটোরিয়ামে ভিড় করে আসা দর্শকদের এই সব অনুষ্ঠান বেশি সিরিয়াস মনে হবে না তো? কার্যত ঋতুপর্ণা, কৌশিক সেন, দেবশঙ্কর হালদার, রায়া ভট্টাচার্যদের নিয়ে ‘প্রথম পার্থ’ শেষ হওয়ার পর দেখা গেল উচ্ছ্বসিত গোটা হল উঠে দাঁড়িয়েছে। স্ট্যান্ডিং ওভেশন।
কিন্তু তখন তো রাত পৌনে দশটা। অক্টোবরের শেষ শুক্রবারে এর পর নিশ্চয়ই লোক থাকবে না। সিঙ্গাপুর কি এত রাতে বাংলা অনুষ্ঠান দেখে অভ্যস্ত? অথচ শেষ আইটেম তো বাকি। গিটার হাতে রূপঙ্কর বাগচী। সংযোজক ঘোষণা করলেন, একেবারে টি২০ সিচুয়েশন। ১৮০ রান চাই, হাতে ২০ ওভার। রূপঙ্করকে শুরু থেকেই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে যেতে হবে। তাই হল। প্রথম গান ‘জাতিস্মর’, তিন নম্বর ‘গভীরে যাও’! দর্শক এ বার এমনই আত্মহারা যে পাঁচ নম্বর গানের পর বলাবলি শুরু হল, অলরেডি ১৬০ উঠে গিয়েছে। তখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা। মুখ্য স্পনসর ক্যামেলিয়া গোষ্ঠীর কর্ণধার নীলরতন দত্ত মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করলেন ঋতুকে নিয়ে এই বঙ্গোৎসব আগামী দশ বছর সিঙ্গাপুরের বুকে তাঁরা করতে চান।
মাঝরাত্তিরে মুখ্য সংগঠকের আঠারোতলার অ্যাপার্টমেন্টের ডিনারে বাংলাদেশি গায়িকা লিলি ইসলাম, অ্যাঙ্কর শ্রীলা মজুমদার, অভিনেতা ধনঞ্জয় দাস-সহ অংশগ্রহণকারী সব শিল্পী হাজির। কৃষ্ণের ভূমিকায় থাকা কৌশিক সেনকে নিয়ে প্রবাসী উচ্ছ্বাস তখনও চলছে। বিভিন্ন নিউ এজ বাংলা ছবির দৌলতে কৌশিক এখন বাঙালি হৃদয়ের আরও কাছাকাছি। রায়া-র পরিচালনায় ‘প্রথম পার্থ’র নামভূমিকায় থাকা দেবশঙ্করও তাই। ঠিক এই মুহূর্তে বাংলা রঙ্গমঞ্চে তেইশটা নাটকে অভিনয় করা দেবশঙ্কর একান্তে বলছিলেন তাঁরও খানিক আশঙ্কা ছিল তথাকথিত আমুদে নয়, অথচ অভিজাত এমন পরিবেশনা এক ঘণ্টা ধরে সিঙ্গাপুরের বাঙালিরা নেবেন কি না!
ঋতু তখন পাশে দাঁড়িয়ে হাসছেন। তৃপ্তির হাসি। আনন্দplus-কে বললেন, সুযোগ পেলে বিশ্বের অন্য জায়গাতেও এ রকম উদ্যোগ নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy