Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফুরফুরে এক ছবির জন্মদিন

ফেসবুকে বার্থডে উইশ। পাওনা ছবি। লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত।জন্মদিনে অফিস যেতে মোটেও ভাল লাগে না ঐশীর। এ দিকে ডেডলাইনের চাপে চোখে সর্ষেফুল। অগত্যা...অটোয় বসে গোমরামুখেই ফেসবুক খুলেছিল ঐশী। গুচ্ছের শুভেচ্ছার বন্যা। জবাব দিতে দিতেই, আরে এ কী! এ তো সেই ক্লাস ফাইভের তুমুল ঝগড়ার দিনটা।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

জন্মদিনে অফিস যেতে মোটেও ভাল লাগে না ঐশীর। এ দিকে ডেডলাইনের চাপে চোখে সর্ষেফুল। অগত্যা...

অটোয় বসে গোমরামুখেই ফেসবুক খুলেছিল ঐশী। গুচ্ছের শুভেচ্ছার বন্যা। জবাব দিতে দিতেই, আরে এ কী! এ তো সেই ক্লাস ফাইভের তুমুল ঝগড়ার দিনটা। তার পরে গোমড়ামুখেই আইসক্রিম খেতে খেতে ভাব। পারেও বটে দীপ! কোথা থেকে খুঁজে পেতে বার করে সটান পোস্ট করে দিয়েছে ওর ওয়ালে! সঙ্গে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বার্থ ডে-টা হ্যাপি হয়ে যেতে এক মুহূর্তও সময় লাগল না আর!

ছেলে-বৌমা আমেরিকায় বাসা বেঁধেছে কত দিন হল। দিন আর কাটতে চায় না নমিতার। ছোট্ট নাতনিটাকে দেখতে বড্ড ইচ্ছে করে রোজই। আগের বারের ছুটিতে এসে মাকে তাই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল অয়ন। অন্তত ছবিতেই রোজ তাদের দেখুক। কাল মায়ের জন্মদিন। অয়ন আর রিনি প্ল্যান করেছে এ বারের উইশটার সঙ্গে পিকি আর ঠাম্মার একটা ছবি দিয়ে চমকে দেবে। আহ্লাদে নমিতা কতটা আটখানা হন, তারই অপেক্ষা এখন।

দিন বদলের গান

হাত-চিঠি বা গ্রিটিংস কার্ডের দিন চলে গিয়েছে আগেই। হুড়মুড়িয়ে জন্মদিনের বার্তা হয়ে উঠেছিল ই-মেল, ই-কার্ড। কয়েক বছরের রাজত্ব শেষে এসএমএসেই কেল্লাফতে। আর তার পরে? অর্কুট, ফেসবুক, হোয়্যাট্‌সঅ্যাপে বার্থ ডে উইশেই দিব্যি ছড়াচ্ছিল জন্মদিনের আনন্দ। এ বার তাতেই নতুন সংযোজন ফেসবুক জনতার। নিয়মমাফিক হ্যাপি বার্থ ডে, মেনি হ্যাপি রিটার্নস তো রইলই। শুভেচ্ছাবার্তার সঙ্গী এ বার একটা ছবি। প্রাপক আর প্রেরকের যুগলে। ছোট্টবেলার দুষ্টুমি, ফেলে আসা জন্মদিনই হোক বা তুমুল প্রেম, বিয়ে কিংবা একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়া, স্কুল-কলেজ-অফিসের হুল্লোড়— উপলক্ষ যা-ই হোক, স্মৃতির ঝাঁপি খুলবে নিমেষে। এক্কেবারে বাড়তি হ্যাপিনেসের গ্যারান্টি।

ভাল থেকো, শুভ জন্মদিন...

আইডিয়াটা নতুন নিশ্চয়ই। কিন্তু হঠাৎ ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা কেন? বন্ধুত্বের এই ব্যাখ্যায় সায় দিচ্ছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ছবিতে শুভেচ্ছার পিছনে আরও একটা মানসিকতা কাজ করছে বলে মনে করছেন তিনি। ‘‘ফেসবুক আসায় বন্ধুত্বের জগৎটা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ফ্রেন্ডলিস্টের সঙ্গে সঙ্গে চেনা বন্ধুর পাশে অদেখা বন্ধুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ফলে যাদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত আছে, ব্যক্তিগত স্মৃতি আছে, সেই বন্ধুদের জন্মদিনে দু’জনের একসঙ্গে ছবি পোস্ট করা মানে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাওয়া ফেসবুকের বাইরেও এই বন্ধুত্বের অস্তিত্ব আছে। উইশের ভিড়ে আমার উইশটাই স্পেশ্যাল।’’

দিন কয়েক আগেই ছোট্টবেলার বন্ধু কৃত্তিকার (যে আবার এখন সহকর্মীও) জন্মদিনে দু’জনের একটা মিষ্টি ছবি দিয়েছে পিয়াসও। হুড়মুড়িয়ে বলল, ‘‘ফ্রেন্ডলিস্টের বেশির ভাগই তো এক লাইনের শুভেচ্ছা জানায়। তার ভিড়ে একটা ছবি থাকলে আমার উইশটা স্পেশ্যাল হয়ে উঠবেই। আর তা ছাড়া আপডেটের ভিড়ে বার্থডে উইশগুলো হারিয়ে যাবে দু’দিন পরেই। ফোটোটা তো থেকে যাবে গ্যালারিতে। ব্যাপারটা মজার হল না?’’

একমত ব্যস্ত কর্পোরেট শুভজিৎও। আরও বলছেন, ‘‘কাজের চাপে স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ তো ভুলতেই বসেছি। এই ছবিগুলোর দৌলতে না হয় পুরনো দিনগুলো ফিরে পাওয়া গেল!’’

তা হলে?

অ্যালবাম ঝেড়েঝুড়ে ছবি খুঁজছেন তো? ফেসবুকে পরের বন্ধুর জন্মদিনটা কিন্তু এসেই গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE