জাকির
দিল্লির হৌজ খাসের সেই রাত এখনও ভুলতে পারেন না তিনি। এক মিনিটও স্টেজে দাঁড়াতে দেয়নি শ্রোতারা। ‘‘তখনই বুঝেছিলাম, ইন্টারনেট বা রেডিয়োতে কমেডি আর স্টেজে স্টান্ড আপ কমেডির তফাত কতটা। স্টেজে যা খুশি তাই বলে পার পাবে না,’’ ফোনে আনন্দ প্লাসকে বলছিলেন জাকির খান। এখন অবশ্য স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ভারতের স্ট্যান্ড আপ কমেডির উঠতি তারকা যে তিনি! তাঁর ‘হক সে সিঙ্গল’ শোয়ের টিকিট বিক্রি হয় লালমোহনবাবুর ভাষায় গরম কচুরির মতো। সদ্য ফিরলেন ব্যাঙ্ককে একক শো করে। ফিরে অবশ্য বিরাম নেই। বসতে হবে টিভিতে দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালে়ঞ্জ শোয়ের মেন্টর হয়ে।
ইনদওরের জাকির খানের কমেডির দুনিয়ায় চলে আসা শুধু আকস্মিকই নয়, অস্বাভাবিকও। বাবা সেতারের উস্তাদ। তাই আঠেরো পেরোনোর আগেই ডিপ্লোমা সেতারে। কিন্তু জাকিরের বাসনা স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হওয়ার। সে ইচ্ছার সামনে দুটো বাধা। এক, তিনি নিজে মুখচোরা, স্টেজে ওঠায় ভয়। দুই, সংগীতের বাইরে পরিবারের কেউ কখনও পা দেয়নি। ‘‘দশটা-পাঁচটার চাকরির কথা শুনেই বাবা আঁতকে উঠতেন। সেখানে স্ট্যান্ড আপ কমেডি!’’ হাসতে হাসতে বলেন তিরিশ বছরের জাকির।
বায়োটেকনোলজি নিয়ে দিল্লিতে পড়াশোনার সময় নিজের মুখচোরা স্বভাব কাটাতে থিয়েটারে যোগ দেওয়া। দিল্লির যে কলেজে ওপেন মাইক অনুষ্ঠান হতো, চলে যেতেন নিজের জোকস শোনাতে। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় জনপ্রিয় হতে সময় লাগেনি। এআইবি তাঁকে সারা ভারতে জনপ্রিয় করে দিল। কিন্তু এআইবি-র জোকসের সঙ্গে তো তাঁর জোকস মেলে না। ‘‘না, মেলে না। সবার মতো করলে আর আমার নিজস্বতা কোথায়? দ্ব্যর্থ কথার জোকস আমার শোয়েও থাকে। কিন্তু সব সময় চেয়েছি আমার জোকস যেন ভালগার না হয়ে যায়,’’ স্পষ্ট জাকির।
তাই কি কপিল শর্মার শোয়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন? উত্তর পেতে দেরি হল না, ‘‘হিউমর আর ভালগারিটির মধ্যে খুব সূক্ষ্ম ভেদাভেদ আছে। সেটা পার না করাই ভাল। টিভিতে অনেক কিছু বলে পার পাওয়া যায়। স্টেজে সেটা হবে না। আর দেখুন, একটা বাচ্চা পুতুল ভেঙে গেলে কাঁদে, আবার প্রাপ্তবয়স্ক আপনজন মারা গেলে কাঁদে। তা হলে কি আপনি বাচ্চাকে বোঝাতে বসবেন, কখন কাঁদা উচিত? তেমনই দর্শক হাসছে বলে যা খুশি বলে হাসাব, সেটা ঠিক না।’’
কিন্তু ভারতে কি যা খুশি বলা যায়? হাসলেন জাকির খান। ‘‘অন্য সব দেশ তো আর বেশি দেখিনি। তাই এটা নিয়ে বলতে পারব না। তবে হ্যাঁ, আমেরিকায় স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে যেমন রাজনীতি নিয়ে মজা করা হয়, তেমন এ দেশে করতে চাইলে দুঃখ আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy