Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শেষরক্ষা কিন্তু হল না

আর সুজ়ি অর্থাৎ প্রিয়ঙ্কা সরকার? পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে চলা সিঙ্গল মাদারের পোশাকে, সাজে, অভিব্যক্তিতে যদি সেই বেদনার ছাপ না থাকে, তা দর্শকমন ছোঁবে কী ভাবে?

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ক্রিসক্রস

পরিচালনা: বিরসা দাশগুপ্ত

অভিনয়: জয়া, সোহিনী, মিমি, নুসরত, প্রিয়ঙ্কা, অর্জুন

৫.৫/১০

এছবির গল্প আধুনিক সময়ের এক জনপ্রিয় উপন্যাস থেকে নেওয়া। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ‘ক্রিসক্রস’। তবে সিনেমা এবং সাহিত্য দু’টি আলাদা মাধ্যম। তাই মূল কাহিনি থেকে সিনেমা কতটা সরে এসেছে, সেই প্রশ্ন গো়ড়াতেই মুলতুবি রাখলাম। অতএব পরের প্রশ্নটাই হল, কেমন হয়েছে ‘ক্রিসক্রস’?

ইরা (মিমি), মিসেস সেন (জয়া), মেহের (নুসরত), সুজ়ি (প্রিয়ঙ্কা), রূপা (সোহিনী) পাঁচ নারী। ভিন্ন আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে তারা লড়ছে। ইরা নিজের পেশা না কি সম্পর্ককে প্রায়রিটি দেবে, মিসেস সেন কি পারবে নিজের ডুবতে বসা কোম্পানিকে বাঁচাতে, মেহের অভিনেত্রী হতে চায় কিন্তু সুযোগ মেলে না, সিঙ্গল মাদার সুজ়ির একটা চাকরি চাই ছেলেকে বড় করার জন্য, রূপা মা হতে চাইলেও সে ইচ্ছে পূর্ণ হওয়ার নয়... প্রত্যেকের চাওয়া-পাওয়া-ইচ্ছে-হতাশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও কিছু পার্শ্বচরিত্র। শেষ পর্যন্ত কি তারা উত্তরণের পথ খুঁজে পায়? ছবির ঝকঝকে শুরু আশা জাগায়। পাঁচ নায়িকার মধ্যে স্ক্রিন টাইম কিছুটা বেশি পেয়েছেন মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। কিন্তু ভাল অভিনয় তো স্পার্কের মতো। সময় দিয়ে তাকে মাপা যায় না। ঠিক যেমনটা এখানে জয়া আহসানের অভিনয়ের দ্যুতি। এক কর্পোরেট মালকিনের চরিত্রে ঔদ্ধত্য, অহংকার, অবজ্ঞা এবং ভালবাসা... ভিন্ন ভিন্ন রঙের পোঁচ। তার প্রত্যেকটা জয়ার চোখে, অভিব্যক্তিতে ফুটেছে নিখুঁত টানে। যদিও এটা বোঝা যায় না, সন্তানের মৃত্যুর কথা গোপন করে যাওয়া অর্থলোলুপ ডিভোর্সি স্বামীকে কেন সে অর্থসাহায্য করে যায়, সব কিছু জানা সত্ত্বেও। যাই হোক, সেটা অভিনেত্রীর ত্রুটি নয়। ভাল লাগে সোহিনী সরকারের চরিত্রের ওঠা-পড়া। সংসারে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা গৃহবধূ রূপা মৃত্যুর নোটিস পেয়ে শেষ সময়টুকু চেটেপুটে নিতে চায়। তার যন্ত্রণা, প্রতিবাদ কোনও তারই উচ্চগ্রামে বাঁধা নয়।

ইরার মতো ডাকাবুকো চরিত্রে মিমি চক্রবর্তীকে আগেও দেখা গিয়েছে। তবে জানা নেই কোন সংবাদপত্রের অফিসে ফোটোগ্রাফারকে নাওয়া-খাওয়া ভুলে ছবি তোলা, সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং তা লেখা, সব একা হাতে সামলাতে হয়! সে ছাড়া অফিসে অবশ্য অন্য কোনও সাংবাদিক বা ফোটোগ্রাফারও চোখে পড়ে না। তবে প্রশ্ন, কেরিয়ার গ়ড়তে চাওয়া একটি মেয়েকে আজও কেন বিয়ে এবং চাকরির মধ্যে একটা বেছে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে সে সম্পর্ককেই গুরুত্ব দেবে? উল্টো দিকের মানুষটিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে না কেন? পরিবারকে প্রতিপালন করার লড়াইয়ে মেহের তথা নুসরতের চোখে বহু বার জল এলেও তা দর্শকের হৃদয় ছুঁতে পারে না। অভিনয়ের পাশাপাশি এর একটা বড় কারণ মেকআপও। ছবির প্রথম দৃশ্যে সারা রাত অফিসে কাজ করার পরে সকালে ইরার সঙ্গে যখন দর্শকের প্রথম দেখা হয়, তার মেকআপের পারিপাট্য অবাক করে! বাড়িভাড়ার টাকার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘোরা মেহেরের অসহায়তা নুসরতের চোখ অবধি আদৌ কি পৌঁছয়? বরং পরিস্থিতি অনুসারে বেমানান লাগে একটুও হালকা না হওয়া লিপস্টিক, কাজল বা চুলের কার্ল। আর সুজ়ি অর্থাৎ প্রিয়ঙ্কা সরকার? পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে চলা সিঙ্গল মাদারের পোশাকে, সাজে, অভিব্যক্তিতে যদি সেই বেদনার ছাপ না থাকে, তা দর্শকমন ছোঁবে কী ভাবে? অবশ্য তেমন কোনও মুহূর্তও ছবিতে তৈরি হয়নি, বরং এক দিনের গল্পে পরিচালক গুলিয়ে ফেলেছেন সকাল-বিকেল-রাতের হিসেব। শেষ পর্বে চরিত্ররা খুব দ্রুত, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেও, শুরুতে যে ভাল লাগা তৈরি হয়েছিল, শেষ দিকে ক্রমশ তা ফিকে হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crisscross Movie Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE