বাবা-মেয়ে আর নদী নিয়ে শিল্প নির্দেশক সমীর চন্দ ‘এক নদীর গল্প’ বলেছেন।
বহু দিন পর বাংলা ছবিতে গ্রামবাংলার মেঠো সুর। মেয়ের জন্য সব খোয়ানো এক বাবা। আর এক চঞ্চলা নদী।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোট গল্প ‘একটি নদীর নাম’য়ের আদলে তৈরি এই ছবি জুড়ে দ্বারকেশ্বর (মিঠুন চক্রবর্তী)। মা হারা মেয়ে অঞ্জনাই (শ্বেতা প্রসাদ) দ্বারকেশ্বরের জীবনে জোয়ার এনেছে। বাংলা ছবি অনেক দিন বাদে মিঠুন চক্রবর্তীর বাঁধ ভাঙা অভিনয় দেখল।
‘মৃগয়া’ থেকে মিঠুনের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল—‘তাহাদের কথা’, ‘কালপুরুষ’য়ের মধ্য দিয়ে গিয়ে একটি পূর্ণ পরিণত রূপ পেল ‘এক নদীর গল্প’ ছবিতে। মিঠুন—যাঁর জীবনটাই জ্বলন্ত লড়াইয়ের মশাল, এই ছবিও সেই লড়াকু মিঠুনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে বাবার খুনসুটি, কিতকিত খেলার দৃশ্যে মিঠুন এতটাই প্রাণবন্ত যে, ছবিটা দেখতে দেখতে আমাদের ছেলেবেলার বাবাকে মনে করিয়ে দেয়। এ ছবিতে বাবা-মেয়ের আত্মিক যোগ জাগিয়ে তোলে নস্টালজিয়া।
ছবির দ্বিতীয় অর্ধে নদী যেমন আচমকা তার গতি বদলায়, ঠিক তেমনই বদলে যায় মিঠুনের স্বর ও সংলাপ। একটু একটু করে ভাঙতে থাকে নদীর পাড়। নদীর জলে সেই ঝিকিমিকি আর দেখতে পাওয়া যায় না। বেরিয়ে পড়ে কেলেঘাই নদীর ধূসর, কালো রূপ। নেমে আসে
গভীর ট্র্যাজেডি, মেয়েকে নদীর কাছেই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় দ্বারকেশ্বর। কেলেঘাই নদী তখন যেন তার মেয়ে অঞ্জনা। একলা, অসহায় দ্বারকেশ্বর শুধু মাত্র মেয়ের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকে। আর এই বাঁচার উদ্দেশ্য একটাই কেলেঘাই নদীর নাম বদলে যেন অঞ্জনা করা হয়।
নদীর শরীরে কেন মেয়েকে খুঁজে বেড়ায় বাবা? মেয়ে অঞ্জনারই বা ঠিক কী হয়েছিল? সহজ গল্প বলার ধরনে ছবিটি দর্শকদের মনে নানা প্রশ্ন তৈরি করতে থাকে। আর ছবির মেজাজ অনুযায়ী কখনও বা গ্রামবাংলার ব্রত কথার সুরে, কখনও বা দু’কূল হারানো জীবনের বেদনায় বেজে ওঠে নদী-ছোঁওয়া গান। মন ভরে যায় নচিকেতা চক্রবর্তী আর শুভমিতার গানে। কালিকাপ্রসাদের কণ্ঠকেও চমৎকার ব্যবহার করেছেন সঙ্গীত পরিচালক নচিকেতা চক্রবর্তী।
তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের অভিনয়ে যিশু সেনগুপ্ত যেমন প্রাণবন্ত ঠিক তেমনই অঞ্জনার অভিনয়ে শ্বেতা প্রসাদ স্বতঃস্ফূর্ত। অবশ্য তাঁর সংলাপে কখনও কখনও বাংলা উচ্চারণ হোঁচট খায়।
অঞ্জন শ্রীবাস্তব আর নির্মলকুমারকে বহু দিন পরে অভিনয় করতে দেখে ভাল লাগল।
অনেক প্রাপ্তির মধ্যে চিত্রনাট্যের দুর্বলতা মাঝে মাঝে ছবির গতিকে বিভ্রান্ত করে। ২০০৭য়ে তৈরি এই বাংলা ছবি দেখতে দেখতে অনেক সময় মনে হয় ছবির মেকিংয়ে কোথায় যেন স্মার্ট ঝকঝকে লুকের অভাব আছে।
কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে কৌস্তভ রায় ও লীলা চন্দ প্রযোজিত এই ছবিতে নদীই হয়ে ওঠে মূল চরিত্র।
পার ভাঙে, মৃত্যুকে নিজের মধ্যে নিয়ে কেলেঘাই নদী ফিরিয়ে দেয় অঞ্জনাকে।
সেই নদীর নাম অঞ্জনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy