Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘এখন টিভিতে অভিনয় করতে গেলে আয়ুক্ষয় হয়’

একই সঙ্গে টিভিতে এবং ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তীএকই সঙ্গে টিভিতে এবং ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী

বিদীপ্তা

বিদীপ্তা

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

প্র: নতুন ধারাবাহিকে তো এ বার নেগেটিভ চরিত্রে!

উ: চ্যানেল বুঝিয়েছিল নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। নেগেটিভ হোক বা পজিটিভ— ভাল চরিত্র হলে আমি করবই। ‘শুভদৃষ্টি’র ক্ষেত্রেও তাই।

প্র: আপনার হাতে পরপর ছবি...

উ: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নগরকীর্তন’, দেবালয় ভট্টাচার্যের ‘বিদায় ব্যোমকেশ’, পাভেলের ‘রসগোল্লা’, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর ‘কেদারা’...

প্র: আবিরের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে অস্বস্তি হয়নি?

উ: দেবালয় জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আবিরের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করবি তো? অনেকেই নাকচ করেছে।’ বলেছিলাম, ‘বিষয়টাকে এ ভাবে দেখলে হয় না, আবিরের বউমার পার্ট করছি আমি?’ আমার বান্ধবী তব্বু কী অবলীলায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছে। ক্যাটরিনার মা, শাহিদের মায়ের চরিত্র করেছে। দেবালয়ের ছবিতে আমার চরিত্রটা দারুণ। চরিত্রের প্রয়োজনে আবিরের মায়ের পার্ট করতেও অসুবিধে নেই। যত দূর মনে পড়ছে, আমার সমসাময়িক অভিনেতাদের মধ্যে আমিই প্রথম হিরোর মা হয়েছি, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’তে।

প্র: একসঙ্গে ধারাবাহিক ও ছবির কাজ করলে টানাপড়েন চলে?

উ: এই মুহূর্তে আমি বিদীপ্তা। আধ ঘণ্টার মধ্যে ‘শুভদৃষ্টি’র সেটে গিয়ে প্রচণ্ড মেকআপ করে ভিলেনের রোল করব। সেখান থেকে রাতে ‘ফাগুনবউ’-এর সেটে। আসলে যে মুহূর্তে লোকজন, সেট, মেকআপ বদলে যায়, আমিও বদলে যাই। এক চরিত্র থেকে আর এক চরিত্রে যেতে আমাকে কসরত করতে হয় না।

প্র: বিরসা সময় দিতে পারেন?

উ: কাজের সময় ছাড়া ও খুব ফ্যামিলিম্যান। হয়তো দু’-তিন মাস ব্যস্ত থাকল। তার পরই বেড়াতে চলে গেলাম। ওটাই ফ্যামিলি টাইম।

প্র: মেঘলা তো বড় হয়ে গেল...

উ: ওর পরীক্ষা চলছে। ওকে চাপ দিই না। ভাষা শেখার উপর ওর ভীষণ আগ্রহ। শেষ দুটো ছবিতে বিরসাকে অ্যাসিস্টও করেছে। বুম্বাদা-সহ অনেকেই ওর কাজের প্রশংসা করেছেন। মনে হয়, ক্যামেরার পিছনের কাজে ও বেশি স্বচ্ছন্দ। ছোট মেয়ে আবার উলটো।

প্র: ‘সব ভুতুড়ে’তে তো দাপিয়ে অভিনয় করেছে ইদা!

উ: সে তো অভিনয় করবে বলেই মনে হচ্ছে এখন। তার চোখ-মুখ... কথা বলার ঢঙ... সবই... (হেসে)

প্র: আপনার সাজ কিন্তু ভিড়ের মাঝেও আপনাকে আলাদা করে!

উ: এটা আমি সব সময় শুনি। ছোটবেলা থেকেই কেয়াপিসিকে (চৈতালী দাশগুপ্ত) দেখতাম টিভিতে। যদিও উনি এখন আমার শাশুড়ি। কিন্তু ওঁর সাজ আমাকে ভীষণ টানত। ওই নান্দনিক, শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিশীল সাজের প্রতি আমার বরাবরের আকর্ষণ। কখনও তো এটাও মনে হয় যে, আমি এই সাজটা ছাড়া আর কিছুই পারি না জীবনে (হেসে)।

প্র: সকলেই ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে কাস্টিং কাউচের কথা বলে...

উ: আমাকে এ রকম কিছুর সম্মুখীন হতে হয়নি। অনেকে আশা নিয়ে আসে। আপসও করতে হয় হয়তো। আসলে অভিনেত্রী হব বললেই হওয়া যায় না। ইদানীং টিভিতে অভিনয়ের পথ সহজ হয়ে গিয়েছে। এমন ঘটনাও জানি, রাস্তা দিয়ে খুব সুন্দর দেখতে একজন মেয়ে যাচ্ছে। তাকে এনে সাজিয়ে-গুছিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল। সে হিরোইন হয়ে গেল! কিন্তু অভিনয়টা তো ভিতরে থাকতে হয়। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে থিয়েটার করছি। অভিনয়টা আমার রক্তে। আমি তাও প্রতি মুহূর্তে শিখি। প্রচুর সিনেমা-থিয়েটার দেখতে হয়। রেওয়াজ করি। এ সব থেকেই তো অভিনয় আরও বেশি করে ক্ষুরধার হয়ে ওঠে।

প্র: এত দিন ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার সুবাদে কী কী বদল চোখে পড়ে?

উ: ওয়র্কিং আওয়ার। আগে সন্ধেয় সকলের কাজ শেষ হয়ে যেত। এখন যে কী অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়! টানা ৪৮ ঘণ্টাও কাজ করেছি। আমি হয়তো দু’ঘণ্টার বিরতি পেয়েছি। কিন্তু ইউনিটের বাকিরা কাজ করে গিয়েছেন। এখনকার দিনে টিভিতে অভিনয় করতে গেলে ভীষণ আয়ুক্ষয় হয়। এটা ব্যক্তিগত মত। আবার টিভি তো কত লোকের সংসার বাঁচিয়ে রেখেছে। আমাকেই দেখুন। আমি ক’টা ছবিই করি আর কত টাকাই বা সেখান থেকে পাই? টিভি ইন্ডাস্ট্রির উপর ভরসা করেই সরকারি চাকরি ছাড়ার আগে দু’মিনিট ভাবিনি। আগে সম্মান ছিল বেশি। এখন সেটাও কমে গিয়েছে।

প্র: সেটা কি চটজলদি খ্যাতির জন্য?

উ: টিভির ক্ষেত্রে তো তাই-ই। আমাদের জেনারেশনের শ্রীলেখা, চান্দ্রেয়ী, জুন, আমি— যাঁদের এখনও লোকে নামে চেনেন। প্রত্যেকেই খেটেছি, লড়াই করেছি। আসলে দর্শক গল্প আর অভিনয় ভালবাসেন। সেই কারণেই আমাদের দরকার হচ্ছে এবং হবেও।

প্র: কোনও আক্ষেপ আছে?

উ: যা পেয়েছি, সেটা পাব ভাবিনি। চেয়েছিলাম থিয়েটার আর চাকরি করব। অভিনয়টা যে পেশা হবে, সেটাই ভাবিনি। ’৭৯-তে প্রথম স্টেজে থিয়েটার করি...

প্র: বয়সটা কিন্তু বলে দিলেন!

উ: তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। (হাসতে হাসতে বিদীপ্তা বলে দিলেন নিজের জন্মসাল আর বয়স)। আরে, আমার মনের বয়সটা তো এখনও বড় মেয়ের মতো, আঠেরো বছর! আমি যদি মধ্য চল্লিশের হয়ে এখনও তিরিশের মতো সুন্দর থাকতে পারি, সেটা তো কৃতিত্ব!

প্র: অবসরে কী করেন?

উ: ইদানীং নেটফ্লিক্সের নেশা ধরেছে। বই পড়ার নেশা আছেই। ঠিক উচ্চারণ, নির্ভুল বানান, বই পড়া, ভাল ছবি দেখা... এগুলো যেন পরের প্রজন্মেও ছড়িয়ে দিতে পারি।

প্র: সুদীপ্তার সঙ্গে কাজ নিয়ে আলোচনা হয়?

উ: টিভির ক্ষেত্রে ইদানীং ও আমাকে ফোন করে। কিন্তু ছবির জন্য আমি সব সময় ওর কাছে যাই। দু’বছরের বাচ্চা ছেড়ে এই প্রথম ও আর অভিষেক দু’জনেই আউটডোরে। মেয়ে আমার কাছেই ছিল। আমার তো তিনটে মেয়ে!

প্র: অভিনয় ছাড়া কখনও অন্য কিছুর কথা মাথায় এসেছে?

উ: গান শেখার ইচ্ছে। অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে শান্তি দেওয়ার জন্য গানই থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE