Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতায় অনুষ্ঠান করলে মন ভরে যায়

মঙ্গলবার কনসার্টের আগে বৃষ্টিভেজা দুপুরে আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি সরোদিয়া আমান আলি খান মঙ্গলবার কনসার্টের আগে বৃষ্টিভেজা দুপুরে আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি সরোদিয়া আমান আলি খান

আমান আলি খান।—নিজস্ব চিত্র।

আমান আলি খান।—নিজস্ব চিত্র।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০০:৩৩
Share: Save:

প্র: ছোটবেলার কিছু কথা বলুন...

উ: বাবাই আমার গুরু। আমার শিক্ষকও। কখনও কখনও তিনি খুব কঠোর হতেন। আবার কখনও খুবই স্নেহপ্রবণ। সম্পর্কের এই সমীকরণটা নিয়ে আমার মনে একটা জটিলতা ছিল। সেটা অনেকটাই কাটিয়ে দিয়েছিলেন মা। ছোটবেলায় সংগীতের চেয়েও আমাদের বাড়িতে সহবত শেখার উপর জোর দেওয়া হত। বড়দের শ্রদ্ধা করা, নম্র হওয়া, এই শিক্ষাগুলো পেয়েই আমি বড় হয়েছি।

প্র: বাবার সঙ্গে সম্পর্কে সময় কি কোনও বদল এনেছে?

উ: না, খুব একটা নয়। বাবার প্রত্যাশা, আমি যেন দায়িত্বগুলো ঠিকমতো পালন করি। অন্য দায়িত্বের সঙ্গে ছোট দুই ভাইপোকে সংগীতের তালিম দেওয়াও আছে। তবে গুরু হিসেবে আমার কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা তাঁর। এবং সেই দিক দিয়ে কখনও তিনি আমার কাজে খুশি হন, কখনও হন না।

প্র: এই বংশ পরম্পরা বজায় রাখার চাপ কি কখনও অনুভব করেছেন?

উ: যদি আমি আমজাদ আলি খানের ছেলে না হতাম, সেটা আরও বড় চাপ ছিল। আমার ভাল কর্মের ফল এই যে, আমি ওঁর ছেলে। তার জন্য ভগবানের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। চাপ বলব না, তবে হ্যাঁ, দায়িত্ব তো আছেই। বাবা আমাকে তৈরি করার জন্য অনেকটা সময় দিয়েছেন। আসলে কী জানেন, বিখ্যাত বাবার ছেলে যদি ভাল হয়, সকলে তাকে ভালবাসে। কিন্তু যে মুহূর্তে সে বিপথগামী হয়, সমাজও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই চিন্তাটা আমার মধ্যে সব সময় ছিল আর থাকবে।

প্র: ভাই আর আপনি কি একে অপরের পরিপূরক?

উ: একদমই তাই। সেই জন্য মানুষ আমাদের যুগলবন্দি শুনতে এত পছন্দ করে। আমাদের দু’জনের স্টাইল আলাদা, স্বভাব আলাদা। কিন্তু যখন একসঙ্গে পারফর্ম করি, দু’জনের স্বকীয়তা সুরে অনেক বৈচিত্র আনে।

প্র: ভাই আর আপনি স্বভাবের দিক দিয়ে কতটা আলাদা?

উ: আয়ান ভাই অনেক বেশি অন্তর্মুখী, কথা কম বলে। আর আমি বেশ অস্থিরচিত্ত। আমার আরও একটু স্থিতধী হওয়া প্রয়োজন (হাসি)। আমি ঘরে একা থাকতে পারি না। কারও না কারও সঙ্গে কথা বলতেই হবে।

প্র: পারফর্ম করার সময়ে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রোতার মধ্যে কোনও ফারাক চোখে পড়েছে?

উ: ভাল সংগীত হলে সকলে শুনবে, ভাল বলবে। সেটা সব জায়গাতেই এক। তবে এশিয়ার মানুষরা খারাপ লাগাটাকে বুঝিয়ে দেয়। যেটা পাশ্চাত্যে হয় না। ওদের খারাপ লাগলেও ওরা পুরো কনসার্ট শুনবে। হয়তো আর আসবে না, তবে মাঝপথে উঠে চলে যাবে না। শিল্পীর কাছে এর একটা ভাল দিকও আছে। প্রেক্ষাগৃহের ফিসফিসানিতে বুঝতে পারা যায়, পারফরম্যান্সের মান বাড়াতে হবে কি না। আন্তর্জাতিক কনসার্টে সেটা বোঝা যায় না।

প্র: ভারতের তরুণ প্রজন্ম কি ধ্রুপদী সংগীত শুনছেন?

উ: আমার মনে হয়, ২০-২১ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা ধ্রুপদী সংগীত শোনে। তার পর ক্লাব আর পার্টি। ১৫ বছরের জন্য আমরা শ্রোতা হারাই। আবার ৩৫-এর পরে যখন পার্টি করার উন্মাদনা কমে, তখন তারা ধ্রুপদী সংগীতেই ফেরে। অনেক টিনএজার মেয়েকে দেখেছি অটোগ্রাফের জন্য পাগলামি করতে। আবার তারাই একটা বয়সের পরে তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আলাপ করাতে নিয়ে আসে (হাসি)।

প্র: ধ্রুপদী সংগীতের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন?

উ: যত দিন ভাল শিল্পী থাকবেন, তত দিন ঘরানা বেঁচে থাকবে। আমার বাবা, পণ্ডিত ভীমসেন জোশীজি, রবিজি (রবিশংকর), হরিজির (হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া) সময়ে যদি সংখ্যাটা হয় পনেরো, এখন সেটা দশ। কিন্তু আমি জানি সংখ্যাটা আবার বাড়বে। একটা প্রজন্মেই সব শেষ হয়ে যায় না। সোনু নিগমের পরে কেউ কি ভেবেছিলেন অরিজিৎ সিংহ আসবেন?

আরও পড়ুন:সিনেমার জগতে আগুন ছাড়াও ধোঁয়া হয়

প্র: বলিউডের ছবি দেখেন?

উ: খুব দেখি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি সেল্ফ-মেড অভিনেতাদের খুব পছন্দ করি। যেমন, রণবীর সিংহ, অক্ষয় কুমার। সঞ্জয় দত্ত খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। অভিনেত্রীদের মধ্যে দীপিকাকে সবচেয়ে ভাল লাগে। আলাপ হয়েছিল। খুব নম্র স্বভাবের মেয়ে।

প্র: আর বাংলা ছবি দেখেন?

উ: দেব আর জিৎ বড় স্টার জানি (হাসি)। ঋতুপর্ণ ঘোষের কিছু ছবি দেখেছি। দেব-কোয়েলের কাজও দেখেছি। আমি এত অস্থির, চ্যানেল সার্ফ করতে থাকি।

প্র: কলকাতা কেমন লাগে?

উ: কলকাতা আর পুণেতে অনুষ্ঠান করলে শিল্পীমনটা ভরে যায়। আমার যতটা প্রাপ্য, তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছে এই শহর। মা কালীর আশীর্বাদেই যেন এখানে ফিরে ফিরে আসি।

প্র: ফ্যাশনে আপনার বেশ নাম-ডাক আছে। র‌্যাম্পে হাঁটতে ভাল লাগে?

উ: হ্যাঁ, বেশ মজা লাগে। অনেক মেয়ে দেখতে আসে (হাসি)। এর সঙ্গে স্টেজ, আলো, ক্যামেরা জড়িত। শিল্পী হিসেবে স্টেজের প্রতি তো আকর্ষণ আছেই। এসবই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

প্র: আর কী কী করতে পছন্দ করেন?

উ: আমি লাইভ স্পোর্টস দেখতে খুব পছন্দ করি। টেনিস ম্যাচ, বাস্কেট বল, কাবাডি। একা লং ড্রাইভে বেরিয়ে কোথাও একটা ভাল পান খেয়ে এলাম। থিয়েটার দেখতেও খুব ভালবাসি।

প্র: বিয়ে করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে না!

উ: একটা সময়ে বিয়ের জন্য এত উতলা ছিলাম যে, অনেক সুযোগ হারিয়েছি। নতুন সম্পর্কে যেতে তাই ভয় লাগে। তবে শিগগিরই কিছু একটা হবে। আমার ব্লাড গ্রুপ তো বি পজিটিভ। সো আই অ্যাম ভেরি পজিটিভ (হাসি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE