অমিতাভ ভট্টাচার্য এবং কৌসর মুনির।—ফাইল চিত্র।
বলিউডে গান বলতেই প্রথমে মনে পড়বে নায়ক-নায়িকা। তার পরে গায়ক-গায়িকা। যদি লাইমলাইটের কিছুটা বাকি থাকে, তা হলে তা পড়তে পারে সংগীত পরিচালকের উপর। কিন্তু যাঁরা সেই গানগুলো লিখছেন, সেই গীতিকার? অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের মঞ্চে তাঁদের উঠতে দেখা যায় বটে। কিন্তু আলোকবৃত্তে তাঁরা সর্বদাই ব্রাত্য। এমনই কয়েক জন
এ প্রজন্মের গীতিকারের সঙ্গে আলাপ করে নিন...
অমিতাভ ভট্টাচার্য
প্রবাসী বাঙালি অমিতাভ ভট্টাচার্য লখনউ থেকে মুম্বই এসেছিলেন গায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। হাতে ডেমো সিডি নিয়ে ঘুরতেন সংগীত পরিচালকদের স্টুডিয়োতে। তাতে অবশ্য জুতোর সুখতলা খয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু হয়নি। সাহায্য করেছিলেন প্রীতম চক্রবর্তী। সহকারী হিসেবে কাজ করতে বলেন। তবে কেরিয়ার গ্রাফে কোনও হেলদোল নেই। সেই যন্ত্রণা থেকেই মাইক্রোফোনের বদলে হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম। এ সময়ে যোগাযোগ হয় সংগীত পরিচালক অমিত ত্রিবেদীর সঙ্গে। টেলিভিশনের জন্য ডামি গান শোনাতে অমিত নিয়ে যেতেন অমিতাভকে। প্রায় ন’বছর স্ট্রাগলের পর অবশেষে সুযোগ মেলে ‘আমির’ ছবিতে। না, গায়ক হিসেবে নয়। গীতিকার হিসেবে। অমিত ত্রিবেদীর সঙ্গে সেই সঙ্গত দাগ কেটেছিল লোকের মনে। ‘দেব ডি’ ছবির ‘ইমোশনাল অত্যাচার’ গান তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তুলল। বাকিটা তো ইতিহাস। এই সময়ে যে গানই লিখেছেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গ স্পর্শ করতে বিন্দুমাত্র সময় নেয়নি সে গান। তা ‘চন্না মেরেয়া’ হোক কি ‘গেরুয়া’, ‘হানিকারক বাপু’ হোক কি ‘কবিরা’... যে কোনও গীতিকারই লিখতে পারলে অনিবার্য ভাবে গর্ববোধ করতেন।
মনোজ মুন্তাশির
গীতিকারদের যোগ্য মর্যাদা না দেওয়ায় সবার প্রথমে যাঁরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন, তাঁদের মধ্যে মনোজ মুন্তাশির অন্যতম। উত্তর প্রদেশের অমেঠির ছেলে প্রথম থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলেন, তিনি হিন্দি ছবিতে গান লিখবেন। সুযোগ পেতে অবশ্য দেরি হয়নি। ‘এক ভিলেন’ ছবির ‘গঁলিয়া’ তাঁকে প্রথম লাইমলাইটের নীচে নিয়ে আসে। তার পরে অবশ্য আর পিছন ফিরতে হয়নি মনোজকে। ‘রুস্তম’ ছবির ‘তেরে সঙ্গ ইয়ারা’, ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র ‘কৌন তুঝে’ বা ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’ ছবির ‘ফির ভি তুমকো চাহুঙ্গা’ তাঁর কয়েকটি উদাহরণ।
বরুণ গ্রোভার, মনোজ মুন্তাশির এবং ইরশাদ কামিল (বাঁ দিক থেকে)
কৌসর মুনির
গীতিকারদের পুরুষ অধুষ্যিত পেশায় কৌসর মুনির সত্যিই ব্যতিক্রমী। মুম্বইয়ের বান্দ্রায় বড় হয়ে ওঠা কৌসর হিন্দিতে তেমন স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। কিন্তু জেভিয়ার্স কলেজে পড়ার সময় থেকেই গানের প্রতি এক অদম্য টান অনুভব করতেন। তবে গান গাওয়া নয়, গান লেখাতেই টান ছিল বেশি। শুধু জানতেন না কী করে তা কাজে লাগাবেন। ফলে নানা রিসার্চের কাজেই জড়িয়ে ফেলেছিলেন নিজেকে। একদিন ‘জসসি জ্যায়সি কোই নেহি’ ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যে সাহায্য করার প্রস্তাব আসে। রাজি হয়ে যান। ধারাবাহিকের পরিচালক যখন তাঁর ‘টশন’ ছবি বানান, একটা গান লিখতে বলেন। কৌসর লেখেন ‘ফলক তক চল সাথ মেরে’। সংগীত পরিচালক বিশাল-শেখরের ভাল লাগতে সময় লাগে না। যেমন সময় লাগেনি তাঁর বলিউডে গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে। ‘ইশকজাদে’, ‘এক থা টাইগার’, ‘ধুম থ্রি’, ‘জয় হো’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ অনেক বিখ্যাত ছবির সঙ্গেই জুড়ে নিয়েছেন নিজের নাম। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই বলেন সলমন খানের নাকি বেশ ভাল লাগে কৌসরের লেখা। তাই শুধু গীতিকার হিসেবে নয়, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির সংলাপেও কৌসরের কলম চলেছে। তবে ভাইজানের কল্যানে নয়, নিজের যোগ্যতায়।
আরও পড়ুন:অস্থির, শূন্যতা আর একাকিত্ব
ইরশাদ কামিল
পঞ্জাবে জন্ম ইরশাদ কামিলের। সেখানেই সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতকোত্তরের পর মাস্টার্স ডিগ্রি হিন্দিতেও। ইরশাদের ক্ষেত্রেও অবশ্য মুম্বইতে এলেন আর গান লিখতে শুরু করে দিলেন, তেমনটা হয়নি। মুম্বইয়ে প্রথম কাজ সিরিয়ালের গল্প লেখা। সেই সূত্রেই আলাপ হয় বলিউডের ঝাঁ-চকচকে দুনিয়ার সঙ্গে। বেশ কিছু দিন ছবির সংলাপ লেখার পর ২০০৪ সালে প্রথম সুযোগ আসে গীতিকার হিসেবে। ইরশাদের ক্ষেত্রেও প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। ‘চামেলি’ ছবির ‘ভাগে রে মন’ শুধু জনপ্রিয়তার শিখরই ছোঁয় না। তৎক্ষণাৎ ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়ে যায়। এ সময়ের গানে যখনই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া কথার দরকার হয়েছে, সংগীত পরিচালকরা ভরসা করেছেন ইরশাদের উপর। কে ভুলতে পারে ‘জব উই মেট’ ছবির ‘আওগে জব তুম’ গানটা। ‘লভ আজ কাল’, ‘রকস্টার’, ‘আশিকি টু’, ‘হাইওয়ে’, ‘তমাশা’, একের পর এক ছবিতে মনভরানো গান লিখেছেন ইরশাদ।
বরুণ গ্রোভার
নিজের স্বপ্নের উপর আস্থা থাকলে লোকে কী-ই না করতে পারে! বরুণ গ্রোভারের গল্পটা যেন সেটাই নতুন করে প্রতিষ্ঠা করে। হিমাচল প্রদেশের ছেলে কাজ করতেন সফটওয়ার কনসালট্যান্ট হিসেবে পুণেতে। কিন্তু লেখক হওয়ার শখ ছোটবেলা থেকে। একদিন হঠাৎ ছেড়ে দেন চাকরি। চোখে স্বপ্ন মুম্বইয়ে বিনোদন জগতে লেখক হবেন। জনপ্রিয় টিভি শো ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কমেডি শো’-এর স্টাফ রাইটার হিসেবে শুরু করেন কেরিয়ার। সেখান থেকে কয়েক দিন স্ট্যান্ড অাপ কমেডি। এবং একদিন সুযোগ আসে গীতিকার হিসেবে। ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’, ‘বম্বে ভেলভেট’, ‘দম লাগাকে হইসা’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘মসান’ নানা হিন্দি ছবির গীতিকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বরুণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy