Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সেন্সর সহজে ছাড় দিলেও অবাক লাগত

হাসতে হাসতে বললেন ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’ ছবির প্রযোজক প্রকাশ ঝা। সঙ্গে পরিচালক অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব। তাঁদের মুখোমুখি আনন্দ প্লাসহাসতে হাসতে বললেন ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’ ছবির প্রযোজক প্রকাশ ঝা। সঙ্গে পরিচালক অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব। তাঁদের মুখোমুখি আনন্দ প্লাস

প্রকাশ ঝা

প্রকাশ ঝা

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

গোটা বিশ্বের ৩৫টি চলচ্চিত্র উৎসবে ইতিমধ্যেই ছবিটি দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। তবে দেশের মেয়েদের সুপ্ত ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষার রস নিংড়ানো এই ছবি নিয়ে দেশের মাটিতেই তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। সেন্সর বোর্ডের অভিযোগ, ছবির বিষয় ‘মহিলাকেন্দ্রিক’ এবং ‘মহিলা ফ্যান্টাসির ঘনঘটা’। জানুয়ারি মাসে মুক্তির কথা উঠলেও তা পিছিয়ে যায়। কিন্তু ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপিল ট্রাইব্যুনাল (এফসিএটি) ছবির পক্ষে রায় দেয়। অবশেষে ‘এ’ শংসাপত্র সহযোগে, আজ মুক্তি পাচ্ছে ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’।

বুরখার বিরুদ্ধে লিপস্টিক

‘বুরখা’ আর ‘লিপস্টিক’ দু’টি শব্দকে আলাদা প্রেক্ষিতে না রেখে টাইটেলের সার্বিক ভাবনা নিয়ে অলঙ্কৃতা বলেন, ‘‘সমাজ মহিলাদের জন্য বিভিন্ন দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। এবং তার বাইরে মহিলাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই বলেই ধরা হয়। কিন্তু তাদের রক্ত-মাংসের শরীরে লুকিয়ে থাকে অনেক চাহিদা। হৃদয়ের অন্দরে লুকোনো থাকে ইচ্ছে, ছোট-বড় না বলা স্বপ্ন, নিষেধের বেড়াজাল টপকে এক চিলতে স্বাধীনতাকে চেখে দেখার তৃষ্ণা।’’ প্রকাশের কথায়, ‘‘যে মুহূর্তে ‘মেয়ে’ বলা হয়, তখনই পৃথকীকরণের পর্ব শুরু হয়ে যায়। তার পর প্রতি পদে বাধা আর নিষেধের লক্ষণরেখা। এই বাধাগুলোই এক অর্থে ‘বুরখা’। আর খুশিগুলোকে আঁকড়ে ধরার স্পৃহা, বাস্তবের সঙ্গে ইচ্ছের টানাপড়েন, মহিলাদের বাঁচার অদম্য ইচ্ছে, সবই লিপস্টিকের সমার্থক।’’

যৌনতা ও নারী দৃষ্টিকোণ

অলঙ্কৃতার কথায়, ‘‘মেনস্ট্রিম ভারতীয় চলচ্চিত্র আর পপুলার কালচারের বড় সমস্যা হল, পুরুষের তথাকথিত দৃষ্টিকোণের (মেল গেজ) প্রাধান্য। মেল গেজকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিয়ে মহিলাদের সব সময় সেই দৃষ্টিকোণের নিক্তিতেই মাপা হয়। কিন্তু মহিলাদের ফ্যান্টাসির কথা সে ভাবে ছবিতে বলা হয় না। পরিবার, পুরুষ, সন্তান—এই সব নিয়েই মহিলাদের দিন কাটে। নিজের জন্য ভাবার সময় তাদের নেই। যেটা যেমন চলছে, সেটা নিয়ে যদি এখনও প্রশ্ন তোলা না হয়, তবে কবে হবে?’’

মহিলা পরিচালকের অভাব

অলঙ্কৃতা বলছিলেন, ‘‘মহিলাদের নিয়ে গল্প বলা এতই কম হয় যে, আমরা এখনও জানি না, ভবিষ্যতে গল্প বলার চরিত্রটা কতটা বদলাবে। গোটা বিশ্বেই মহিলা পরিচালকের সংখ্যা এত কম যে, অন্য কণ্ঠস্বর শোনাই যায় না। ভারতেও সেই একই দৈন্যের হাল। এমনটা নয় যে, মহিলা পরিচালক মানেই তাঁদের মহিলাদেরই গল্প বলতে হবে। অন্তত তাঁরা তাঁদের চেনা-জানা গল্পকেই অন্য আঙ্গিকে তুলে ধরুন, সেটাও বা কম কী!’’

অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব

অমসৃণ পথ

মেয়ে বলে কাজ করতে গিয়ে কখনও কি তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে? অলঙ্কৃতা বলেন, ‘‘এটা বলা মুশকিল। তবে এটুকু বলতে পারি, কম বাজেটের ছবি যেখানে স্টার পাওয়ার নেই, সেটাকে কেউ গুরুত্ব দিতে চায় না। আমার প্রথম ছবি ‘টার্নিং থার্টি’ শ্যুটিংয়ের সময় প্রোডাকশনের কাছে একটা বিশেষ ধরনের ক্যামেরা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম। লাগাতার দু’মাস ধরে চাওয়ার পরেও যে-দিন শ্যুট শুরু হবে, সে-দিন তাঁরা পাঠালেন অন্য ক্যামেরা। পোস্ট প্রোডাকশনেও অনেক হেনস্তা হয়েছিল। তবে ‘লিপস্টিক...’ শ্যুট করার সময়ে আমি আগেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, যে টেকনিশিয়ানদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, তাঁদের সঙ্গে কাজ করব না।’’

নারীবাদ ও কঙ্কণা

ফোনের ওপারে ধরা দিলেন ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র শিরিন আসলাম মানে কঙ্কণা সেনশর্মা। নারীবাদ বলতে কঙ্কণা ঠিক কী বোঝেন? ‘‘মহিলাদের নিজের ইচ্ছে প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা দরকার। একজন কাজ করবে না কি গৃহবধূ হবে, সেটা তার চয়েস। শরীরের উপর অধিকার, সন্তানধারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই চয়েস থাকা প্রয়োজন। আর দু’টি লিঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার যে বৈষম্য আছে, সেটাও স্বীকার করা খুব জরুরি।’’

শ্যুটিংয়ের আনাচে কানাচে

শ্যুটিংয়ের অজানা গল্প বলতে বলতেই হাসির ঝলক দেখা গেল পরিচালকের মুখে। অলঙ্কৃতা বলছিলেন, ‘‘এক রাতে সেটে খুব খিদে পেয়েছিল। এ দিকে খাওয়ার বন্দোবস্ত নেই। ভোপালের কাবাব খুব বিখ্যাত। তাই আট প্লেট কাবাব অর্ডার দিয়েছিলাম। কিন্তু যিনি আনার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি নিয়ে এসেছিলেন আট পিস কাবাব। তার পরে আর কী! বোর্ডিং স্কুলের মতোই সেই খাবারের উপরেই সকলে মিলে হামলে পড়ি।’’

আশাবাদী প্রকাশ

প্রকাশ ঝা বারবার বলছিলেন, ‘‘এই ছবি আলাদা করে কোনও বার্তা দেয় না। সমাজে কোনও পরিবর্তন ঘটাবে তেমনটাও নয়। তবে একটা সুন্দর গল্প বলা হয়েছে। চরিত্রগুলো নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে। এবং সেটাই এই ছবির প্রাপ্তি। বক্স অফিসে কতটা ব্যবসা করবে, সেটা অন্য প্রশ্ন। তবে বিনোদনমূলক একটা ছবি হিসেবে আমি খুব আশাবাদী।’’

ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE