Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সমালোচনাকে সাবকনশাসের বাইরে রাখি

কেরিয়ার ও প্রেম নিয়ে আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি গৌরব চট্টোপাধ্যায়এতটাই সাদামাঠা তিনি যে, সাংবাদিকের জন্য নিজের হাতেই বানিয়ে আনলেন কফি। গিরিশ মুখার্জি রোডে, মহানায়কের বা়ড়ির ড্রয়িংরুমে কফির কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা দিতে বসলেন গৌরব। 

গৌরব চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

গৌরব চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪২
Share: Save:

এতটাই সাদামাঠা তিনি যে, সাংবাদিকের জন্য নিজের হাতেই বানিয়ে আনলেন কফি। গিরিশ মুখার্জি রোডে, মহানায়কের বা়ড়ির ড্রয়িংরুমে কফির কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা দিতে বসলেন গৌরব।

প্র: আপনি নাকি ভীষণ ব্যস্ত?

উ: আমি আসলে সব কাজ একসঙ্গে করে উঠতে পারি না। পিআরও খুব খারাপ। তাই শুটিং, জিম করে নিজেকে সামান্য সময় দেওয়ার পরে আর কিছুই করে ওঠা হয় না।

প্র: শারীরচর্চায় মনোযোগ কেন?

উ: তিরিশে পা দেওয়ার পরে এক দিন ঘুম থেকে উঠলাম এই ইনসিকিয়োরিটি নিয়ে যে, আর বোধহয় আমাকে কেউ কাজ দেবে না। হিরো তো হবই না। এ বার বোধহয় বাবা-কাকা-দাদার রোল করতে হবে। তাই এক্কেবারে হেল্‌থ ফ্রিক হয়ে গেলাম।

প্র: ‘রানি রাসমণি’তে আপনি লিড নন। মেনে নিতে অসুবিধে হল না?

উ: সকলেই জানেন যে, রানি রাসমণির জীবনে মথুরামোহনের চরিত্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ রকম ঐতিহাসিক চরিত্র সাধারণ ফ্যামিলি ড্রামার চেয়ে অনেক ভাল। তাই এই কাজটার জন্য ক্রেডিট লাইনে থাকতেই হবে, এটা ভাবিনি।

প্র: উত্তমকুমারের নাতির পরিচয়টা কি কেরিয়ারের জন্য ভাল ছিল?

উ: আমার প্রথম ছবিটা যখন বেরিয়েছিল, তখন ও ভাবেই দেখানো হয়েছিল। উপরে দাদুর ছবি, নীচে আমার। শুরুর দিকে কখনও আমার সম্পর্কে ভাল কিছু লেখা হয়নি। কেউ লিখেছিলেন, আমার অভিনয়ে অভিব্যক্তিই নেই। সেটা অবশ্য আমাকে আরও শিখতে সাহায্য করেছে। ‘দুর্গা’ করার পরে সকলে আমাকে রূপম বলে ডাকত। সেটা আমার কাছে বড় পাওনা।

প্র: ফিল্মি পরিবারে বড় হওয়ায় অভিনেতা হওয়াটাই কি সহজ সিদ্ধান্ত?

উ: তরুণ মজুমদার প্রথম ডেকেছিলেন ছবি করার জন্য। অবাকই হয়েছিলাম। ছোটবেলায় নাটক করতাম। ছোড়দাদুর (তরুণকুমার) নাটকে অভিনয় করেছি। দাদু পাশের গিরিশ ভবনে যাত্রা শুরু করেছিলেন। জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে সেখানে যাত্রা করেছি। কিন্তু অভিনেতা হব ভাবিনি। তবে টিভিতে এসে ভালই হয়েছে। লক্ষ্য ছিল, কাজটা শিখব। তার পরে মনে হল যে, আমি এটাই করতে পারি শুধু।

প্র: ব্যর্থতা সামলান কী করে?

উ: কোনও দিনই খুব একটা গায়ে মাখিনি। খারাপ লেগেছিল অবশ্যই। আগে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে মনে হতো যে, খারাপ লিখবে, দাদুর প্রসঙ্গ টেনে আনবে। এমনিতেই তো দাদুর সঙ্গে তুলনা আসে না। আসতে পারেই না। তাই ব্যর্থতা, সমালোচনা সাবকনশাসের বাইরে রেখেছি।

প্র: ‘আদরিণী’র মতো ধারাবাহিক বাছলেন কেন?

উ: প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি যে পরে কী রকম দাঁড়াবে। তখন বোনের বিয়ে এগিয়ে আসছিল। আর্থিক অভাব ছিল না হয়তো। কিন্তু ব্রেড অ্যান্ড বাটারের ব্যাপারও তো আছে।

প্র: উত্তমকুমারের নাতিকেও ব্রেড অ্যান্ড বাটারের জন্য ভাবতে হয়!

উ: একদমই তাই। উত্তমকুমারের নাতি আর নাতনির ছোটবেলায় এমন দিনও গিয়েছে যে, পুজোয় জামাকাপড় হয়নি। লোকজনের ধারণা যে, প্রচুর টাকা রেখে গিয়েছেন দাদু। সে রকমটা নয়। হয়তো টাকা ছিল, কিন্তু মামলা এবং নানা কারণের জন্য সেগুলো অনেক নষ্ট হয়েছে। আমার দাদু-ঠাম্মা-বাবা তো খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। অনেকে অ্যাডভান্টেজ নিয়েছে। তবে বাবা আমাদের প্রোটেক্ট করার চেষ্টাও করতেন। এমনও হয়েছে, বাবা কোথাও প্রয়োজনে টাকা ধার করতে গিয়েছেন, আমিও সঙ্গে আছি। সে সব দিন ভাল লাগেনি আমার। জানতাম, টাকা আমাকে উপার্জন করতেই হবে।

প্র: কখনও ধারাবাহিক ছেড়ে অন্য কিছু করার কথা মনে হয়নি?

উ: ‘রানি রাসমণি’ আমার করা অন্যতম ভাল কাজ। আর এটা বাছার কারণ ছিল যে, আমাকে কোনও কনট্র্যাক্টের মধ্যেও থাকতে হবে না। পাশাপাশি তিনটে ওয়েব সিরিজ়ে সই করে ফেলেছিলাম। ‘দি অ্যাডভেঞ্চারস অব গোগোল’, ‘সেই যে হলুদ পাখি’ আর দেবালয় ভট্টাচার্যের ‘চরিত্রহীন’। সায়ন বসুর ‘কোজাগরী’ নামে ছবি করছি।

প্র: অন্য প্রসঙ্গে আসি। বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই সহজ নয়!

উ: আসলে বিয়ের আগেও যে আমার সম্পর্ক হয়নি, এ রকম তো নয়। প্রায় সাড়ে চার বছরের একটা সম্পর্ক ছিল। জানতাম যে, এটা একটা পর্যায়। শক্ত হতে হবে। তবে বিয়ে ভাঙলে আরও পাঁচটা সম্পর্ক ভাঙে। সেটা খুব বাজে অভিজ্ঞতা।

প্র: প্রাক্তন কি বন্ধু হতে পারে?

উ: হ্যাঁ। হতে পারে। অনিন্দিতা তো বন্ধুই। আমাদের ডিপ ফ্রেন্ডশিপ, যেটা আগে ছিল, সেটা এখন আর নেই। কিন্তু বন্ধু তো অবশ্যই। এটা নয় যে, আমার সমস্যা ওকে বলি। কিন্তু যদি কোনও দিন আসে, বলতেও পারি। আমাদের বিয়ে ভাঙার পরেও অন্যান্য সমস্যা শেয়ার করেছি দু’জনেই।

প্র: আবার বিয়ের জন্য তৈরি?

উ: এই মুহূর্তে নয়। তবে এটা বুঝি যে, একটা কিছু ভেঙে গেল মানেই সব শেষ নয়। আমি খুবই পজ়িটিভ। অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই করব।

প্র: পাত্রী কি দেবলীনা (কুমার)?

উ: (জোরে হেসে) হ্যাঁ। তাই-ই ইচ্ছে। তবে সময় আছে।

প্র: এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও অবসর কি মেলে?

উ: খুব কম। আমাদের প্রেমটাও হয় জিমেই। আর বাকিটা সোশ্যাল মিডিয়ায়। জিম আর শুটিংয়ের প্যাক আপ করার পরে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ডিনার করে বাড়ি ফিরতে পারলেই খুশি। যেটুকু সময় পাই, নেটফ্লিক্স করি। আমি আর দেবলীনা একসঙ্গে বসে সিরিজ় দেখি। এখন যেমন ‘ক্রাউন’ দেখছি দু’জনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE