Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘অভিনেতারা সমাজের আয়না, যদিও অনেকেই আমাদের ভাঁড় ভাবেন!’

অনেক দিন পর বড় পর্দায় দেখা যাবে অভিনেতা কমল হাসনকে। এখন অভিনয়ের সঙ্গে রাজনীতিতেও সক্রিয় তিনি।আমি মনে করি, অভিনেতারা সমাজের আয়না। অনেকেই আমাদের ভাঁড় ভাবেন! কিন্তু ভাল দিন আসছে না খারাপ দিন— সেটা শুধু রাজনৈতিক নেতারা কেন বলবেন? আমরাও ছবির মাধ্যমে সমাজকে বলতে পারি, কখন আলো আসবে আর কখন অন্ধকার!

শ্রাবন্তী চক্রবর্তী
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

প্র: অভিনয় না কি পরিচালনা, কোনটা বেশি উপভোগ করেন?

উ: পরিচালনা। আমি কোনও দিন অভিনেতা হতে চাইনি। কিন্তু আমার গুরু বালাচন্দর আমাকে অভিনেতা হতে বলেছিলেন। যখন কেউ আমার মধ্যে অভিনয় প্রতিভা দেখেনি, সেই সময়ে উনি আমাকে অভিনয় করার জন্য বলেন।

প্র: আপনার প্রত্যেক ছবিতে একটা বার্তা থাকে। সেটা কি জরুরি?

উ: আমি মনে করি, অভিনেতারা সমাজের আয়না। অনেকেই আমাদের ভাঁড় ভাবেন! কিন্তু ভাল দিন আসছে না খারাপ দিন— সেটা শুধু রাজনৈতিক নেতারা কেন বলবেন? আমরাও ছবির মাধ্যমে সমাজকে বলতে পারি, কখন আলো আসবে আর কখন অন্ধকার! যখন ‘এক দুজে কে লিয়ে’ বানিয়েছিলাম, তার ঠিক পরেই কিছু মানুষ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেটা জানতে পেরে ছবির পরিচালক বালাচন্দর আর আমার খুব খারাপ লেগেছিল। গিল্ট ফিলিং কমানোর জন্য আমরা তামিলে ভাল বার্তাবহুল ছবিও বানিয়েছিলাম। হিন্দিতেও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সফল হইনি। অভিনেতা যে বার্তা বহন করতে পারেন, রাজাও পারেন না!

প্র: ‘বিশ্বরূপম’ যখন মুক্তি পেয়েছিল, অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল... কী ভাবে দেখেন?

উ: কেউ যদি ইচ্ছে করে বিতর্ক তৈরি করতে চায়, তার কাছে অনেক মাধ্যম আছে। এই সবে আমার কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না।

প্র: ভারতীয় সিনেমার ভবিষ্যৎ কেমন?

উ: খুব উজ্জ্বল! আমাদের দেশে এখন হিন্দির তুলনায় ইংরেজিতে লোকজন বেশি কথা বলে। যে কারণে হলিউড ভারতে এত জনপ্রিয়! এখন আমাদেরও সেই ক্ষমতা বা পরিকাঠামো আছে, যার দরুন আমরা বিশ্বের জন্য ছবি বানাতে পারি।

আরও পড়ুন: অবিশ্বাসের ‘আমরা-ওরা’

প্র: আপনার ছবিতে দেশভক্তি একটা থিম। নিজে দেশভক্তিকে কী ভাবে দেখেন?

উ: এই বিষয়ে আমি গাঁধীজিকে অনুসরণ করি। ওঁর মতো নিজেকে আধুনিক পৃথিবীর নাগরিক মনে করি। আমার কাছে দেশভক্তি ভৌগোলিক সীমারেখার ঊর্ধ্বে। নিজেকে কোনও গ্রাম বা শহরের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারব না।

প্র: অভিনয় থেকে এখন রাজনীতিতে চলে আসছেন— কোন ভূমিকাটা আপনার কাছে বেশি কঠিন?

উ: রাজনীতি। আমার আগেও অনেকে এসেছেন। কেউ হেরেছেন, কেউ জিতেছেন। আমি জানি, রাজনীতির রাস্তা সোজা নয়।

প্র: আপনার প্রশংসকরা আপনাকে অভিনেতা হিসেবে এগিয়ে রেখেছেন। কী বলবেন?

উ: কারণ তাঁরা আমাকে রাজনীতিক হিসেবে দেখেননি। আগে দেখুন, আমার যোগ্যতা বুঝুন— তার পর বলুন। আমার দায়িত্ব দেশের লোককে কাজ দেখিয়ে আমার অনুরাগী বানানো।

প্র: অভিনয় ছেড়ে রাজনীতিতে আসছেন। আপনার জায়গায় একটা শূন্যতা চলে আসবে...

উ: এই একই প্রশ্ন আপনি সুনীল গাওস্করকে করেছিলেন? শূন্য জায়গা ভরেই যাবে। কিন্তু আজ যদি আমি এই সিদ্ধান্ত না নিই, তা হলে মানুষের হার হবে। সেটা আমি চাইব না। দেশের যুবসমাজের উচিত সামনে আসা, কাজ করা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কত অভিযোগ— রাস্তায় গর্ত, সমুদ্রে জঞ্জাল, কিন্তু কাজ ক’জন করি? আমি রাজনীতিতে এসে সব ময়লাই সাফ করতে চাই।

প্র: রাজনীতিতে রজনীকান্তও আসছেন, জবরদস্ত টক্কর হবে মনে হয়?

উ: পাবলিক সার্ভিসে আবার প্রতিযোগিতা কী? যে ভাল কাজ করবে, সে-ই এগিয়ে থাকবে। উনি যদি আমার থেকে ভাল হন, তা হলে আমার শুভকামনা থাকবে।

প্র: আপনার এই মূল্যবোধ কি পরিবার থেকে?

উ: আমি আজ যা কিছু, সব আমার পরিবারের জন্য। বাবা উকিল ছিলেন। উনি আমাকে আর আমার বোনকে সব সময়ে উৎসাহ দিতেন। গ্রামের ছোট বাড়ি থেকে যখন উনি ফ্ল্যাট বানিয়েছিলেন, আমাদের একটা দিক খুলে দিয়েছিলেন, যাতে আমরা সেখানে থিয়েটার করতে পারি। বাবার কাছ থেকে আমরা এটাও শিখেছি, কী ভাবে পরিশ্রম করে রোজগার করতে হয়।

প্র: ‘বিশ্বরূপম টু’-এ আপনি ওয়াহিদা রহমানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন... কেমন অভিজ্ঞতা ওঁর সঙ্গে কাজ করার?

উ: অভূতপূর্ব! উনি আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, আমি চিরকাল মনে রাখব। আমার কিছু গুণ দেখে আমাকে গুরু দত্তের সঙ্গে তুলনাও করেছেন। এ সব তো আমি কোনও দিন ভুলতে পারব না! আর সেটে ওঁকে দেখে মনে হতো, উনিই সবচেয়ে তরুণ আমাদের মধ্যে!

প্র: নিজের কেরিয়ার নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?

উ: আমার মনে হয়, গত ৩৫ বছরে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে যা কাজ করেছি, আমার কাছে সেটা একটা পেড ভেকেশনের মতো। কিন্তু সাফল্যের ঢেউয়ে আমি ভেসে যাইনি। কারণ রিস্ক নিতে শিখেছি। নায়ক হয়ে যাওয়ার পরেও ক্যারেক্টার রোল করেছি। এখন আমি ছুটি উপভোগ করতে চাই, জনসাধারণের পাশে থেকে। রাজনীতির মাধ্যমে ভাল কিছু করে যেতে চাই, যার জন্য পরে গর্ব করতে পারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE