Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘কারও সঙ্গে বিছানায় শুয়ে পড়াটা জলভাত, এ ধারণা তো আছে’

কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এই মন্তব্য করা যায়! কারও তোয়াক্কা না করে ইন্ডাস্ট্রিতে দশ বছর কাটিয়ে দেওয়া কঙ্গনা রানাওয়াতের মুখোমুখি আনন্দ প্লাসকতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এই মন্তব্য করা যায়! কারও তোয়াক্কা না করে ইন্ডাস্ট্রিতে দশ বছর কাটিয়ে দেওয়া কঙ্গনা রানাওয়াতের মুখোমুখি আনন্দ প্লাস

কঙ্গনা রানাওয়াত।

কঙ্গনা রানাওয়াত।

শ্রাবন্তী চক্রবর্তী
মুম্বই শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৩৩
Share: Save:

তিনি ডিপ্লোম্যাটিক এমন তথ্য শোনা যায় না। বরং ‘মুফট’ বলে কঙ্গনা রানাওয়াতের সুনাম রয়েছে। না হলে কেউ কর্ণ জোহরের মতো ইন্ডাস্ট্রির ব়়ড় খুঁটিকে চটায়! গত কয়েক দিন ধরে তিনি আবার হৃতিক রোশনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে সরব হয়েছেন। পর পর বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেলে এসে তিনি হৃতিক ও তাঁর বাবা রাকেশ রোশনের সম্পর্কে বিষোদগার করেছেন। কারণটা যে তাঁর ছবি ‘সিমরন’ মুক্তির আগে নিজের দিকে খানিকটা প্রচারের আলো ঘুরিয়ে নেওয়া়, সেটা কারও বুঝতে বাকি নেই। তবে গোটা তিনেক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরেই কঙ্গনা মুখ বন্ধ করে নিয়েছেন। তা থেকেই ডিপ্লোম্যাটিক তকমা জুটেছে। প্রশ্ন উঠেছে ‘কুইন’কে কেন ছবি রিলিজের আগে বিতর্ক উস্কে দিতে হবে? তিন বার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রীর কি আদৌ এ সবের প্রয়োজন আছে? কিন্তু কঙ্গনার মস্তিষ্কে যে কী খেলা চলছে, তা বোঝা কার সাধ্য!

প্র: পর পর সাফল্য আসছিল। তার পরেই দুম করে ‘রঙ্গুন’-এর ব্যর্থতা। ধাক্কা লেগেছিল?

উ: অনেকটা। মনে-প্রাণে প্রার্থনা করেছিলাম ‘রঙ্গুন’ যেন ফ্লপ না করে। কিন্তু জীবনে সবচেয়ে বেশি ভয় যেটায় পাই, সেটাই ঘটে। সেই সময় আমার ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ডামাডোল চলছিল। নানা জায়গা থেকে আক্রমণ আসছিল। ব্যক্তিগত জীবন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, এ দিকে ছবিও ফ্লপ করছে— এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে? এর থেকে আমি একটা জিনিসও শিখেছি। জাতীয় পুরস্কার, পরপর হিট ছবি... এগুলোর ফলে কোথাও মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় ব্যর্থ হতেই পারি না। হয়তো কোথাও আমি নিজের থেকে অনেক বেশি আশা করে ফেলেছিলাম। যেটা করা আমার ঠিক হয়নি। (একটু থেমে) মানালিতে খুব সুন্দর একটা বাড়ি বানিয়েছি। ছবি না চললে সেখানে গিয়ে থাকব। এখন আর ফিল্মের ব্যর্থতা-সাফল্য নিয়ে অত মাথা ঘামাই না।

আরও পড়ুন: ছেলে-মেয়ের বলিউডে আগ্রহ নেই

প্র: এখন নিশ্চয়ই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে বহিরাগত মনে হয় না?

উ: একদমই নয়। আমি ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন লিডিং ফেস। আমার কাজের জন্য সম্মানও পেয়েছি। আমি ইন্ডাস্ট্রির অখণ্ড অধ্যায় বলতে পারেন...

প্র: কেরিয়ারের এই উচ্চতায় এসে নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন?

উ: নিজের পরিবার এবং কিছু বাছাই করা বন্ধু জীবনে থাকলে একাকিত্ব গ্রাস করে না। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার বন্ধু আছে, কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। ওই কথায় আছে না, ভিড়েও অনেক সময় তুমি একা! আবার একা হয়েও তুমি অনেক সময় ভিড়ের মধ্যে... আমার অবস্থাও ঠিক সেই রকম।

প্র: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ভালবাসার লোক পাওয়া কি মুশকিল?

উ: এটা ঠিক কথা নয়। আসলে আমরা শিল্পীরা ভীষণ সংবেদনশীল মানুষ হই। আর তার সঙ্গে ভাবুকও বটে। সেই জন্য মাঝেমাঝে দু’জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

প্র: কিন্তু আপনি যে দু’জনকে ভালবেসেছিলেন (অধ্যয়ন সুমন, হৃতিক রোশন), তাতে কি মনে হয় আপনার নির্বাচন ভুল ছিল?

উ: কেউ যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সময়ের জন্য সেটাই সবচেয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত বলে তাঁর বিশ্বাস থাকে। আমার এক পিসির অল্প বয়সে ডিভোর্স হয়ে যায়। উনি শিক্ষিকা ছিলেন। আমি অনেক দিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতাম যে দোষ নিশ্চয়ই আমার পিসিরই ছিল। অথচ উনি কিন্তু তাঁর কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন। এই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরোতেই হবে।

প্র: যেমন?

উ: আমাদের দেশে মেয়েদের অবস্থা খারাপ। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী দিচ্ছি? মেয়েদের এত ভয়ের মধ্যে বাঁচতে হবে কেন? মিডিয়ার ভূমিকাও অনেক। অন্যায় দেখলে কড়া ভাষায় নিন্দা করতেই হবে। মুখ বুজে থাকলে লোকে আরও পেয়ে বসবে।

প্র: কঙ্গনা আপনার সম্পর্কে বলা হয়, আপনি পুরুষদের গালিগালাজ করে ফেমিনিজমকে ডিফাইন করেন...
উ: সমতা বজায় রাখা উচিত। নিজেদের অধিকারের কথা জোর গলায় বলা উচিত। সুস্থ সমাজে পুরুষ এবং নারীদের অধিকার একই হওয়া উচিত। আমাদের অসুস্থ সমাজের জন্য একটাই বড় ওষুধ— ইকুয়ালিটি।

প্র: ‘সিমরন’-এর শ্যুটিংয়ে সময় পরিচালক হনসল মেটার সঙ্গে আপনার বিরোধের কথা শোনা গিয়েছিল...

উ: কোনও রকম বিরোধ হয়নি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড লোকজনে ভর্তি। মটর পনির খেলে বলবে বিরিয়ানি খেয়েছি। যখন কোনও অভিনেতা নির্দেশককে কিছু টিপস দেন, সেটাকে ক্রিয়েটিভ ইনপুটস বলে। আর কোনও অভিনেত্রী সেই একই কাজ করলে সেটা হয়ে যায় হস্তক্ষেপ! আমাদের সম্পর্কে নানা ধারণা তৈরি করা হয়েছে, অভিনেত্রীরা কথায় কথায় হাসেন, কারও সঙ্গে বিছানায় শুয়ে পড়াটা জলভাত। আমাদের তো নিজেদের কোনও বুদ্ধি থাকতেই পারে না। হনসল স্যার যখন আমার কাছে ‘সিমরন’-এর আইডিয়া নিয়ে এসেছিলেন, সেটা মাত্র এক লাইনের ছিল। সকলে মিলে তা ডেভেলপ করেছি।

প্র: ডিরেক্টোরিয়াল ছবি হিসেবে ‘তেজু’ বাছলেন কেন?

উ: ‘তেজু’ বাচ্চাদের ছবি। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করার। ‘মণিকর্ণিকা’র শ্যুটিং শেষ হলেই এটার কাজে হাত দেব। বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করা খুব কঠিন। সব কিছুই ওদের মর্জির উপর নির্ভর করে থাকে।

প্র: আপনার সমসাময়িক অনেকে সিনেমা প্রযোজনা করছেন। আপনি নির্দেশনায় এলেন কেন?

উ: যাঁরা ফিল্ম প্রডিউস করছেন, তাঁদের জন্য আমি খুব গর্বিত। ইন্ডাস্ট্রিতে আরও বেশি মহিলা প্রোডিউসার এবং ডিরেক্টরের আসা উচিত। আমি যখন কেরিয়ার শুরু করেছিলাম, তখন তো মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরও খুব কম ছিল। আমি নিজে লিখতে শুরু করেছি, কারণ লিখতে ভালবাসি।

প্র: বলা হয়, আপনি ফিল্ম প্রমোশনের অছিলায় ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা প্রচার করছেন...

উ: ইন্ডাস্ট্রি আমার একার নয়। যে যা খুশি বলতেই পারে। হৃতিক, কর্ণ জোহর সংক্রান্ত বিতর্কের সময় এমন অনেকে আমাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যেগুলো পড়ে ভীষণ ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল, আমি এদের সবাইকে জবাব দেব। সেই কারণেই মুখ খুলেছিলাম। কিন্তু এখনকার মতো অনেক কিছু বলা হয়ে গিয়েছে, আর নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE