Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

‘বিক্রমের পাশে থাকা মানেই ঘটনাটা সমর্থন করা নয়’

ছোট-বড় দুই পর্দাই সামলাচ্ছেন। জীবন নিয়ে গল্প করলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ছোট-বড় দুই পর্দাই সামলাচ্ছেন। জীবন নিয়ে গল্প করলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়

লীনা

লীনা

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

তাঁর সংস্থার গোটা চারেক ধারাবাহিক চলছে টেলিভিশনে। আর তার সব সংলাপ তিনি বলে চলেছেন ডিক্টাফোনে। সহকারীরা তা অক্ষরে রূপান্তরিত করছেন। সিনেমা পরিচালনা করে, রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব সামলে... সব ক’টা ধারাবাহিকের সব চরিত্রের সংলাপ এ ভাবে মুখে মুখে সৃষ্টি করে চলেছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মুর অ্যাভিনিউয়ের অফিসঘরে বসা বিস্মিত সাংবাদিককে হেসে বললেন, সবটাই অভ্যেসের ব্যাপার।

প্র: সিনেমার চিত্রনাট্য দিয়ে কেরিয়ার শুরু। পরিচালনা করতে এত দিন সময় নিলেন কেন?

উ: অনেক বার এগিয়েও পিছিয়ে এসেছি। অন্য প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছি। তখনই ঠিক করেছিলাম, ছবি তৈরি করলে নিজেরাই করব। কিন্তু সামর্থ্য ছিল না। প্রযোজনা সংস্থাটা দাঁড় করাতে অনেক দিন লাগল। এখন আমরা সিনেমা করার মতো জায়গায় এসেছি।

প্র: ‘মাটি’র পরের ছবির পরিকল্পনাও হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই?

উ: আমার পরিচালনার কথা যদি বলেন, তা হলে কিচ্ছু ঠিক নেই। আর ছবি না-ও করতে পারি। তবে ম্যাজিক মোমেন্টস নিশ্চয়ই অন্য পরিচালকদের নিয়ে এগিয়ে যাবে। ‘মাটি’র গল্পটা আমাকে বলতেই হতো। এটা দিয়েই শুরু করলাম।

প্র: ‘মাটি’ তা হলে আপনারই জীবনের গল্প?

উ: পুরোটা নয়। তখন আমার বয়স কুড়ি-বাইশ হবে। বাংলাদেশে নিজেদের বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। দাদুর কাছে গল্প শুনে ইচ্ছে হতো ভিটেমাটি দেখার। একাই গিয়েছিলাম। তথ্য বলতে মানিকগঞ্জের ঝিটকা, সেখানকার ভাদুড়ি বাড়ি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে অবশেষে পেলাম। দিনটা ছিল দশমী। গিয়ে দেখি, বৃদ্ধ ঠাকুরমশাই মন্দিরে দশমীর আরতি করছেন! মুসলমানরা অধিগ্রহণ করেছিল আমাদের বাড়ি। যারা দখল করেছিল তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের দুর্গাপুজোটা চালিয়ে যাচ্ছিল। আশেপাশের হিন্দুদের দিয়েই পুজোটা করায় তারা। খুব ভাল আপ্যায়ন পেয়েছিলাম। তবে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়। ফিরে এসেই গল্পটা লিখে ফেলেছিলাম।

প্র: সিনেমার কাজের সঙ্গে এত ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য-সংলাপ সামলান কী করে?

উ: কাজের মাঝেই সময় করে নিই। এখন আর হাতে লিখি না। ডিক্টাফোনে সংলাপ বলে দিই। দিনে দেড়-দু’ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না। স্নান-খাওয়ার মতোই লেখার কাজও অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে।

প্র: জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ধারাবাহিক নিয়ে সমালোচনাও হয়। একাধিক সম্পর্ক, খল চরিত্রের কীর্তিকলাপ ইত্যাদি...

উ: আমার ধারাবাহিকে একাধিক সম্পর্ক দেখানো নিয়ে বলা হয়। এ নতুন কিছু নয়। এখনকার যুগে সম্পর্কের গড়াপেটা চলে। আমার গল্পগুলো বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া। মন থেকে বানিয়ে লিখতে পারি না। ধারাবাহিকের খাতিরে গল্প অনেক বাঁক নেয় ঠিকই, কিন্তু বেসিক গল্প নিজের চারপাশ থেকেই পেয়েছি। সিরিয়ালের নেতিবাচক দিক নিয়ে যাঁরা কথা বলেন, তাঁরা আমাদের দর্শক নন। আমার গল্পে মেয়েরা কিন্তু সব সময়ে জেতে। এই দিকটাও ভাবতে হবে।

প্র: এত দিন কাজ করছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে বদল চোখে পড়ল?

উ: প্রতিযোগিতা বেড়ে গিয়েছে। দর্শক সংখ্যাও বেড়েছে। আমাদের খুব সচেতন হয়ে কাজ করতে হয়। প্রত্যন্ত গ্রামের এক দর্শকের সঙ্গে প্রবাসী উচ্চবিত্ত দর্শকের রুচি, চাহিদা মেলাতে হয়। কাজের পরিবেশ বদলেছে। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের আগে এত প্যাম্পার করা হতো না। এত হোর্ডিং, লাইট, প্রচার... এতে মাথা ঘুরে যায়। ফলে এরা প্রচুর শো নিয়ে নেয়। সারা রাত শো করছে। তার পরে জার্নি করে এসে শুটিংয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। তখন ধারাবাহিক আর প্রায়রিটি নেই। মাচা সব। আর ছোট বয়সে আসে বলে অনেকে পড়াশোনায় দাঁড়ি টেনে দেয়। যে কাজই কর, প়়ড়াশোনা প্রয়োজন। সকলে এ রকম নয়, কিন্তু বেশির ভাগেরই এই অবস্থা।

প্র: বিক্রম-সোনিকা কাণ্ডে আপনি বিক্রমকে সমর্থন করায় সমালোচিত হয়েছিলেন। তার পরেও বিক্রমকে কাজ দিলেন।

উ: একটা ছেলের কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিল। বলা ভাল, জীবনটাই। বিক্রমের পাশে থেকেছি মানে কিন্তু ঘটনাটা সমর্থন করছি না। এখনকার ছেলেমেয়েরা বড্ড গতির পিছনে ছোটে। বিক্রমের লাইফস্টাইল আমার ভাল লাগেনি। এর জন্য ওকে শাসনও করেছি। তার মানে ও আর কাজ পাবে না, তা তো নয়। আইন যেখানে কাজ করায় আপত্তি করছে না, সেখানে আমি কে! বিক্রম আমার নিজের ছেলে হলে কি মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারতাম? সমালোচনা নিয়ে এখন আর ভাবি না।

প্র: বলা হয়, পুলিশ আর আইনি জট থেকে আপনার জন্যই বিক্রম বেরিয়ে আসতে পেরেছেন...

উ: আইনি পর্ব তো এখনও চলছে। আমার কোথায় এত ক্ষমতা যে, বেরিয়ে আসতে সাহায্য করব!

প্র: মহিলা কমিশনের দায়িত্ব কেমন লাগছে?

উ: এই ধরনের কাজ অনেক দিন আগে থেকেই করছি। আমার ইয়ং এজ কেটেছে রাজাবাজার খালপাড় এলাকার বাচ্চাদের নিয়ে। তাদের স্কুলে পড়িয়েছি। থিয়েটার করেছি। কলেজে পড়ানোর পাশাপাশি এগুলো করতাম। মহিলা কমিশনে আসার পরে কাজের পরিধি বেড়েছে। অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারও।

প্র: কোনও ঘটনা নিয়ে গল্প বলতে চান?

উ: অনেক আছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব, সেটাই জানি না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE