Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আমার পাগলামি কম লোকই সহ্য করতে পারে

স্টুডিয়োর ধরাবাঁধা গণ্ডির মধ্যে নয়, তাঁর সৃষ্টি খেলে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। সুরকার শান্তনু মৈত্র এই রকমই খামখেয়ালি স্টুডিয়োর ধরাবাঁধা গণ্ডির মধ্যে নয়, তাঁর সৃষ্টি খেলে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। সুরকার শান্তনু মৈত্র এই রকমই খামখেয়ালি

শান্তনু

শান্তনু

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০২
Share: Save:

প্র: এ বার পুজোয় কী পরিকল্পনা?

উ: পুজোর সময় সাধারণত ট্রেকিং করি। এ বারে সহ্যাদ্রি ঘাটে যাব।

প্র: পুজোর ভিড় থেকে আলাদা থাকতে ভালবাসেন?

উ: তা নয়। আসলে এই সময়টা মাউন্টেনিয়ারিংয়ের জন্য খুব ভাল। তা ছাড়া দিল্লিতে থাকার সময় পুজোর দিনগুলোয় বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় হতো। মুম্বই এসে সেটা খুব মিস করতাম। তাই বে়ড়াতে যাওয়া শুরু করি। এখন ওটাই রুটিন হয়ে গিয়েছে।

প্র: আপনি বরাবরই কম কাজ করেন। ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এ মিউজিক করতে রাজি হলেন কেন?

উ: সেই ‘অন্তহীন’-এর সময় থেকেই অনিন্দ্যর সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। ও আমাকে ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এ কাজ করতে বলেছিল। একটাই গান করেছিলাম। সাধারণত কোনও ছবির মিউজিক করলে আমি গানের সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও করে থাকি। ‘ওপেন টি...’তে সেটা হয়নি। ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এ এসে করলাম। তা ছাড়া অনিন্দ্যর গল্প বলার ধরন আমার বেশ ভাল লাগে। ওর বলার মধ্যে যেন হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের একটা ছোঁয়া আছে।

আরও পড়ুন: ‘রাধার জন্যই ওজন বাড়িয়েছিলাম’

প্র: বাংলায় অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ছবিতেই আপনাকে বেশি কাজ করতে দেখা গিয়েছে...

উ: বছরে একটাই ছবি করি। আর বাংলা আমার খুব চেনা মাধ্যম নয় কিন্তু। সে ক্ষেত্রে চেনাজানা থাকলে নার্ভাস কম লাগে। টোনি (অনিরুদ্ধ) আমার খুব ভাল বন্ধু। তাই ওর সঙ্গে কাজ করতেও স্বচ্ছন্দ।

প্র: শান্তনু মৈত্রর নার্ভাস লাগে, এটা কি খুব বিনয় হয়ে গেল না!

উ: (হেসে) আসলে চেনাজানার মধ্যে আমি কমফর্টেবল। এমনিতে একটা ছবির পর বছর দেড়েকের বিরতি দিয়ে পরের কাজ করি। একটা স্কোর বা কম্পোজিশন করতেও আমার সময় লাগে। এটা সকলের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

প্র: মুম্বইয়েও বিধু বিনোদ চোপড়া, রাজু হিরানিদের সঙ্গেই আপনাকে বেশি কাজ করতে দেখা যায়।

উ: সকলে তো আমার পাগলামি সহ্য করবে না (হাসি)! যে ভাবে আমি কাজ করে থাকি, তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারার মতো লোক খুব কম। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর সময় ‘বহেতি হাওয়া সা’ লাদাখে বসে কম্পোজ করেছিলাম। গল্প আর গানের ব্রিফিং শোনার পরেই বলেছিলাম, এ গান স্টুডিয়োয় বসে করতে পারব না। ওদের বললাম, লাদাখে শ্যুটিং লোকেশনের রেকি করতে যাব। আর এই সব জায়গা আমি বাকিদের চেয়ে ভাল জানি। এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং না থাকলে আমাকে নিয়ে কাজ করা মুশকিল।

প্র: অথচ আপনি সময়ের মধ্যেই সবটা রেডি করে দেন বলে শুনেছি।

উ: সেখানে কোনও ফাঁকি নেই। কিন্তু খামখেয়ালিপনা সহ্য করাটাও তো মুশকিল। রাজু হিরানি, বিধু বিনোদরা জানে, লোকটা পাগল হলেও সময়ে কাজ তুলে দেবে।

প্র: আপনার পরিচিতরা বলেন, স্টুডিয়োয় বসে কাজ করতে আপনার অ্যালার্জি...

উ: খুব ভুল বলে না। স্টুডিয়োর মধ্যে একটা ধরাবাঁধা ব্যাপার থাকে। মিউজিক ডিরেক্টর হব বলে তো কেরিয়ার শুরু করিনি। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, ট্র্যাভেল, ট্র্যাভেলগ এগুলোও আমার জীবনে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেকগুলো শখের মধ্যে গানও একটা শখ ছিল। সেটাই পেশা হয়ে গেল। যে কারণে নিয়ম করে স্টুডিয়োয় গিয়ে গান বানাতে পারি না। যখন সুর আসবে, তখনই যাব। আমি যেমন বন্ধুদেরও বলি, গল্প বলার না থাকলে জোর করে বলবে না। সিনেমা, গান তো আর জামাকাপড়ের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় কোনও জিনিস নয়। তাই বক্তব্য না থাকলে জোর করে কিছু না বলাই ভাল।

প্র: বেড়াতে গিয়েও নিশ্চয়ই অনেক সময় মাথায় সুর খেলে যায়...

উ: একেবারেই। এখন মোবাইল থাকার সুবাদে সবটাই রেকর্ড করে নেওয়া যায়। বেড়াতে যাওয়া এক ধরনের টোটকার কাজ করে। আর ডি বর্মন যেমন গুলজারকে নিয়ে ট্র্যাভেল করতেন। মুভমেন্ট ইজ গুড ফর ক্রিয়েশন।

প্র: ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর সুর করার সময়েও কি কোথাও চলে গিয়ে গিয়েছিলেন?

উ: না। তবে অনিন্দ্যকে মুম্বইয়ে ডেকে নিয়েছিলাম। মিউজিশিয়ানরা একসঙ্গে থাকলে নানা রকম আইডিয়া আসতে থাকে। গুলজারসাব বলেন, স্টুডিয়োর বদলে বাড়িতে সবাই মিলে বসো, দেখবে ভাল কাজ হচ্ছে। বাড়িতে পিকনিক করতে, সমুদ্রের ধারে বেড়াতে...এ ভাবেই কত সুর, কত গান তৈরি হয়ে যায়। আমি আর অনিন্দ্য সারা দিন প্রচুর গল্প করতাম, সিনেমা-তথ্যচিত্র দেখতাম। হয়তো কোনও একটা রান্না করে ওকে খাওয়ালাম। রান্না করাটাও কিন্তু আমার একটা শখ। এ ভাবেই কাজটা ভাল বেরোয়।

প্র: শিল্পা রাওকে দিয়ে বাংলায় গান করানোর ভাবনা এল কী ভাবে?

উ: শিল্পা অনেক দিন আগে আমার সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিল। তখন ওর মতো কোনও গান আমার হাতে ছিল না। অনিন্দ্যর ছবির গানটার জন্য ওর গলা একদম মানানসই মনে হল। ও বাঙালি না হলেও পরিবারে বাঙালিয়ানার পরিবেশ রয়েছে। অনিন্দ্য ওর বাংলা উচ্চারণ শুনে ছিটকে গিয়েছিল।

প্র: আপনার করা পছন্দের কম্পোজিশন কোনটা?

উ: ‘অব কে সাওন’ বলে একটা অ্যালবাম করেছিলাম শুভা মুদগলের সঙ্গে। সেটা খুবই স্যাটিসফাইয়িং ছিল।

প্র: আগে একটা ছবির গান শুনলে সংগীত পরিচালকের ‘সিগনেচার’ বোঝা যেত। এখন একটা ছবিতেই তিন-চারজন পরিচালক থাকা খুব স্বাভাবিক ঘটনা...

উ: খুবই দুর্ভাগ্যজনক এটা। পরিচালক তো একাই গোটা ছবিটা পরিচালনা করেন। চিত্রগ্রাহকও একাই শ্যুট করেন। তা হলে সংগীত পরিচালক একাধিক লাগবে কেন? এখানে গান আর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর আলাদা শিল্পী করে। আর কোথাও এটা হয় না। তা হলে কি সুরকাররা যথেষ্ট যোগ্য নন? তাঁদের উপর গোটা ছবির ভরসা রাখা যাচ্ছে না? হয়তো এটা একটা পাসিং ফেজ। আসলে যবে থেকে সিনেমা আর গান আলাদা প্রপার্টি হয়ে গেল, তখন থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। এখন কে সুর দিচ্ছে সেটা নগণ্য। গান শুধু প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়। গল্পের মধ্যে হয়তো গানের প্রয়োজনই নেই, স্রেফ বিপণনের জন্য তা ঢোকানো হচ্ছে। এই ট্রেন্ড যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেয়, সিনেমার জন্য ততই মঙ্গল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE