পঙ্কজ ত্রিপাঠী
তাঁর ঝুলিতে হিন্দি ছবির সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে গত কয়েক বছরে ‘মাসান’, ‘নিল বট্টে সন্নাটা’, ‘বরেলী কী বরফি’ এবং ‘নিউটন’-এর মতো ভিন্ন স্বাদের ছবিতে অভিনয় করে পঙ্কজ ত্রিপাঠী এখন সকলের নেকনজরে।
প্র: যোগ্য সম্মান পেতে কি অনেকটা দেরি হল?
উ: জীবনে সব কিছুই দেরি করে পেয়েছি। খুব ছোট একটি গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে তো! জমিতে বীজ ছড়িয়ে ফসল হওয়ার জন্য ছ’মাস অপেক্ষা করতেই হয়। আমাদের মধ্যে ধৈর্য রাখার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে (হাসি)!
প্র: ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’ না ‘নিউটন’— কোন ছবি কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিল?
উ: এখন বললে দুটোই। আগে হলে বলতাম ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’। ওই ছবির পরে দর্শকের ভালবাসা পেয়েছিলাম। এখনও এয়ারপোর্টে দেখলে লোকে ‘সুলতান’ নামেই ডাকে। তবে সে ভাবে তখন সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি হয়নি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সাংবাদিক বৈঠকে শেখর কপূরও বলেছেন, ‘নিউটন’-এর পরেও আমার পারফরম্যান্স নিয়ে সে ভাবে লেখা হয়নি। জাতীয় পুরস্কারের এই স্পেশ্যাল মেনশনের পর ছবিটা একটু হলেও বদলেছে।
প্র: সেই বিষয়ে কি ক্ষোভ রয়েছে?
উ: ক্ষোভ জমিয়ে রাখি না। বউ-মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারলে আর আট ঘণ্টা ঘুমোতে পারলেই আমি খুশি! কত ফলোয়ার বাড়ল, কেরিয়ারে কী হল সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না।
প্র: লাইমলাইটে থাকার প্রলোভন সংবরণ করেন কী করে?
উ: আমি একটু সুফি প্রকৃতির মানুষ। কবীর থেকে শুরু করে আধুনিক হিন্দি সাহিত্যের অনেকের লেখাই পড়েছি। হিন্দিতে অনূদিত সাহিত্যও পড়ি। স্টারডম তো মায়া! আজ লোকে চিনছে বলে কালো চশমা পরে নিলাম, আর কাল কাজ না থাকলে অবসাদে ডুবে গেলাম...এটা ঠিক নয়। অভিনয়ের প্রসেস উপভোগ করি।
প্র: অভিনয়ে কী ভাবে এলেন?
উ: উত্তর বিহারের খুব ছোট গ্রাম বেলসন্ডে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। ওখানে তখন বিদ্যুৎ-সংযোগও ছিল না। তাই ছোটবেলা থেকে ছবি খুব কম দেখেছি আমি। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার হস্টেলে প্রথম রঙিন টিভি দেখেছিলাম। পটনায় এসে প্রণীতা জায়সবালের থিয়েটার দেখেই প্রথম অভিনয়ে আসার ইচ্ছে জাগে। বাবা পটনায় পাঠিয়েছিলেন ডাক্তার হওয়ার জন্য। থিয়েটারের চক্করে তা তো হল না। থিয়েটার এত ভাল লেগে গেল, সেখান থেকেই অভিনয়কে পেশা করার পরিকল্পনা।
প্র: আপনি তো কলকাতার জামাই!
উ: বোনের বিয়ে হয়েছে এখানে। সেই সূত্রেই কলকাতায় আসা-যাওয়ার শুরু। আমার স্ত্রী তখন ভবানীপুরের একটি কলেজে পড়তেন। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন দুটো শপথ নিয়েছিলাম, বিয়েতে পণ নেব না। আর দ্বিতীয়, ন’টা-পাঁচটার চাকরি করব না। আমার দুই বোনের বিয়ের সময়ে পণের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে বাবা-মাকে কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছিলাম। মাকে গয়না বেচতেও হয়েছে। আমার প্রেমের বিয়ে। বাড়িতে প্রথমে মানেনি, তার পর মেনে নেয়।
প্র: বাংলা ছবি করবেন?
উ: নিশ্চয়ই। ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল। জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক সঞ্জয় নাগের ‘ইয়োরস ট্রুলি’র জন্য আপনাদের শহরে শুট করলাম। কলকাতার ট্রাম-ট্যাক্সি, ঝালমুড়ি, কাঁটা দেওয়া মাছের ডাল সবই আমার প্রিয়। আর একটা কথা জানেন? মেয়েকে কাঁধে বসিয়ে রাসবিহারীর একটা পুজো প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখছিলাম। তখনই মুম্বই থেকে মুকেশ ছাবরার ফোন এসেছিল ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’-এর অডিশনের জন্য।
প্র: রজনীকান্তের সঙ্গেও কাজ করলেন।
উ: হ্যাঁ, তামিল ছবি ‘কালা’। ওঁর সঙ্গে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল। এত বড় তারকা! কিন্তু পর্দার বাইরে কত সাধারণ। এই জিনিসটাই আমাকে খুব টানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy