রেকর্ডিং ফ্লোর থেকে রেখা স্মৃতি ছুঁয়ে বললেন, “আমি প্রথম থেকেই জানতাম আমার গলাটা সাবেকি ধাঁচের। গজল, ঠুংরি এগুলোই আমার গলায় ভাল চলে। আমার হাই পিচ ভয়েসও ছিল না, যেটা সিনেমায় গাইতে গেলে লাগে। যদি কখনও সিনেমায় গাইতে চেয়েছি তো লোকে প্রথমেই জানতে চেয়েছে আমার গলা কতটা চড়ে, আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। আমি ভাবিনি কোনও দিন সিনেমায় আমি গান গাইতে পারব। আমি ভাবতাম, আমার কণ্ঠের বিষাদ সিনেমার জাঁকজমকের সঙ্গে যায় না।”
বিশালের জন্যই প্লে ব্যাক সিঙ্গার
কিন্তু এই মেলাংকলি, রুক্ষ-পেলব কণ্ঠই ইন্ডাস্ট্রিতে এখন ব্র্যান্ড! ‘নমক ইশক কা’ গাওয়ার কথাও ছিল না রেখার। ফিল্মি দুনিয়ার বাইরে সুফির সুরে, মঞ্চ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। “আসলে বিশাল ওর যে কোনও গানই আমাকে শোনায়, গাইতে বলে। তো সে রকমই ‘নমক ইশক কা’ গেয়েছিলাম আমি। শুনেই ও বলেছিল, এটা আমিই এমন করে গাইতে পারব। বিশালের জন্যই আমি প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি।’’
ক্ষোভ রেওয়াজে ঢেলে দিলাম
সৌরেন্দ্র আর সৌম্যজিতের আমন্ত্রণেই এ বার ২১ জুন সায়েন্স সিটিতে শোনা যাবে রেখা ভরদ্বাজকে। সঙ্গে থাকবেন উস্তাদ রাশিদ খান, রুনা লায়লা, পার্বতী বাউল। রেখা বললেন, ‘‘সৌরেন্দ্র আর সৌম্যজিৎ রোজ বদলের দুনিয়ায় কী ভাবে মিউজিককে ভেঙে কাজ করতে হয় জানে, ওঁদের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারা যায় না। খুব ভাল কাজ করছে ওরা।’’ ডিজিটাল মিডিয়ায় সিঙ্গলস, ইচ্ছে মতো নিজের হাতে গান আপলোড করার সুযোগকে খুব পজিটিভলি নিয়েছেন রেখা। বললেন, ‘‘প্লিজ লিখবেন, আমাকেও কিন্তু প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের জন্য ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। মিউজিক কোম্পানি বলত রেকর্ডিং করব। আর ঠিক আগের দিন রেকর্ডিং ক্যানসেল হত। এ রকম কত হয়েছে। কাঁদতাম। রাগ-দুঃখ সব রেওয়াজে দিয়ে দিতাম।’’
জগজিৎ সিংহ কাঁদিয়ে দিল
জগজিৎ সিংহ গলা শুনে বলেছিলেন, গানের জোয়ারি আছে। গলা ভাল। তবে চমক আনতে হবে। অকপটে বললেন, ‘‘সে দিন কান্না থামেনি। ভাগ্যিস বিশাল ছিল পাশে। ও আর গুলজার সাহাব সাহস দিয়ে আমার গান বাঁচিয়েছে।’’ রোজই রেওয়াজে ‘চমক’ আনেন রেখা।
গুলজারিয়ানা
মনে করেন তিনি খুব ভাগ্যবতী যে, গুলজার সাহাবের সঙ্গ পেয়েছেন। ‘‘বিশালের সঙ্গে ‘মাচিস্’ ছবির সিটিংয়ে গুলজার সাহাবের বাড়িতে যেতাম। ওখানেই উনি একদিন আমার জন্য গান লিখতে রাজি হয়ে গেলেন। ২০০৪-এ আমার অ্যালবাম বেরোল ‘ইশকা ইশকা’। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।’’ সুফি গানের গন্ধে, রুমির শব্দে দিন কাটে রেখার। মনে করেন বিশাল আর গুলজার সাহাবের জন্যই তিনি ফোক থেকে আইটেম সং যে কোনও জঁরে অনায়াসে সুর নিয়ে যাতায়াত করতে পারেন। বললেন, ‘‘ভাবুন তো, ‘ওয়ে বয় চার্লি’-র মতো ছবিতে কী অসাধারণ শব্দ জুড়েছেন গুলজার! উনি জাদু জানেন! ওঁর হাত যতক্ষণ আমার ওপর আছে আমি জানি আমি আলোর রাস্তায় চলেছি,” মুগ্ধতা রেখার কণ্ঠে।
এগারো বছর পরে গানের অ্যালবাম
বিশালের ছবি মানেই রেখার কণ্ঠে ছবির সেরা গান। এ কেমন ধারা? রেখা কিন্তু অন্য কথা বলছেন, “এ ভাবে বলবেন না প্লিজ। আমার গায়কির সঙ্গে মিললে তবেই বিশালের ছবিতে গাই। আমার গানের কেরিয়ারে সবটাই যদি বিশাল করে দিত, তা হলে ওঁর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার এগারো বছর পরে আমার গানের অ্যালবাম বেরোত না কিন্তু! এটাও খেয়াল করুন।’’
আইটেম সং মানেই খারাপ না
আইটেম সং বলেই কতগুলো অশ্লীল শব্দ বসিয়ে দিয়ে গান হিট করাতে হবে, এটা মনে করেন না রেখা। তা হলে ‘বিড়ি জ্বালাইলে’, ‘নমক ইশক কা’ এত জনপ্রিয় হতো না। কী ধরনের শব্দ দিয়ে গান তৈরি হচ্ছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রেখা কি কোনও দিন ‘লুঙ্গি ডান্স’ গাইতে চাইবেন?
“দেখুন ‘লুঙ্গি ডান্স’ গানটা আমি পুরোটা শুনিনি। তাই গাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু আমিও পাবে গিয়ে হানি সিংহর গানের সঙ্গে নেচেছি। নাচের সময় কিন্তু আমরা কেউ গান শুনি না, ছন্দ মেলাই। পরে জেনেছি ওটা হানি সিংহর গান। এখন শ্রোতা যদি ওর গান শোনে, সেটা তো মানতেই হবে।’’
বিশালের জন্য প্রেম
এখনও নিজে হাতে বিশালের জন্য রান্না করেন রেখা। যদিও আগের মতো সময় দেওয়া যায় না। “ইদানীং একটু ব্যস্ত হয়ে গিয়েছি। বিশাল তো সারাক্ষণ অভিযোগ করে, আমি আগের মতো রোজ ওকে রান্না করে খাওয়াতে পারি না। তবে মুম্বই থাকলে ব্রেকফাস্ট আমিই তৈরি করি। আর সময় পেলেই সাবুদানার খিচুড়ি, আলুর পরোটা আর বিশালের প্রিয় ক্ষীর বানিয়ে ওর সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। খাবারের টেবিলে ওর সঙ্গে একটা সন্ধে কাটালেই প্রাণ ভরে যায়।”
বেগম আখতার আর মাধুরী
বেগম আখতার আর গিরিজা দেবীর গান সময় পেলেই শোনেন রেখা। আর নিজের কণ্ঠকে মাধুরী দীক্ষিতের লিপে দেখতে সবচেয়ে ভাল লাগে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পীর। প্রায় সব নায়িকার লিপেই গান গাওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁর। দীপিকা থেকে মাধুরী। বললেন, ‘‘বাকি শুধু আলিয়া। ওর কাজ খুব ভাল লাগে।’’ কলকাতায় আসা নিয়েও তাঁর উত্তেজনার শেষ নেই। বললেন, ‘‘এ বার রুই, ইলিশ আর
জামদানি মাস্ট।’’
সকালের এক কাপ চায়ের আগে রেওয়াজ দিয়ে দিন শুরু করেন রেখা। সংগীতই তাঁর আত্মা। পাখির মতো গান গাইতে চান রেখা। পাখিরা যেমন নিজের জন্য গান গায়, কাউকে শোনানোর অপেক্ষা রাখে না, রেখাও ঠিক তেমন। নিজের জন্যই গানের কাছে থাকতে চান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy