Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক

শহরে এলেন শাবানা আজ়মি। আলাপ করলেন আনন্দ প্লাসের সঙ্গে শহরে এলেন শাবানা আজ়মি। আলাপ করলেন আনন্দ প্লাসের সঙ্গে

শাবানা। ছবি: সুমন বল্লভ

শাবানা। ছবি: সুমন বল্লভ

অন্তরা মজুমদার
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

কলকাতার সঙ্গে শাবানার পরিচয় তিরিশ বছরের। সেই প্রসঙ্গেই শুরু হল কথোপকথন, ‘‘এখানকার প্রায় সব বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। বাবাও (কাইফি আজ়মি) অনেক ভালবাসা পেয়েছিলেন এখানে,’’ কথার স্রোতে তখন ভেসে গিয়েছেন শাবানা, ‘‘অনেক বছর আগে এক রেস্তরাঁয় বসে ছিলাম আমি। এক জন ওয়েটার এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দিদি, আপনার হাতটা ধরতে পারি?’ আমি অবাক হয়ে তাকাতে উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কাইফি আজ়মির মেয়ে?’ আমি ‘হ্যাঁ’ বলায় উনি বলতে শুরু করলেন, ওঁর জীবনের একটা অন্ধকার সময়ে অনেকখানি আলো জুগিয়েছিল বাবার কবিতা... এতটাই গভীর সম্পর্ক আমাদের সঙ্গে এই শহরের।’’

১৯৭৪ সালে ‘অঙ্কুর’ মুক্তি পাওয়ার পরে কলকাতার মানুষ পেয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের পছন্দের ‘থিঙ্কিং অ্যাক্ট্রেস’কে। শাবানা বলছিলেন, ‘‘এখানে এলে মৃণাল সেন বা তপন সিংহদের সঙ্গে কাজের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। বাংলা ভাষা বা কবিতা এবং গানের যে মূল্য আপনারা দেন... এটা অন্য কোথাও দেখি না! একটা ঘটনা মনে পড়ছে, কঙ্কনা (সেন শর্মা) তখন আট বছরের। অপর্ণা (সেন) দেখলাম ওকে চিঠি লিখছে, বাংলায়। মনটা ভরে উঠেছিল সেই দৃশ্য দেখে...’’

কাইফি আজ়মির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শাবানার কলকাতায় আসা। জানুয়ারি মাসে কলকাতায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানও করবেন তিনি এবং জাভেদ আখতার। নিজের জীবনে বাবার ভূমিকার কথা বলছিলেন, ‘‘কবিতায় উনি যা লিখতেন, মনেপ্রাণে সেটাই বিশ্বাস করতেন। জেন্ডার ইকুয়ালিটি বা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এখন আমরা এত আন্দোলন করি। উনি চল্লিশের দশকে বসে সে সব বলেছেন! যখন ভাবা হতো মেয়েরা ঘর সামলাবে, পুরুষ বাইরেটা দেখবে! লিখেছিলেন, ‘উঠ মেরি জান, মেরে সাথ হি চল না...’ কী রেভলিউশনারি!’’

সমাজের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন বলে জানালেন শাবানা। ‘‘আজ়মগড়ের মিজওয়া গ্রামে জন্মেছিলেন বাবা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেছিলেন ়মেয়েদের শিক্ষার প্রসারণের জন্য। বেশির ভাগ লোক এগুলো জানেন না,’’ বিরতি নিয়ে ফের শুরু করলেন তিনি, ‘‘সেই ছোট্ট স্কুল থেকে কম্পিউটার সেন্টার, কলেজ কী না তৈরি হয়েছিল। ভাবুন, একটা সময়ে মিজওয়ার কোনও পিন কোড ছিল না। আর এখন, অম্বানীদের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখলাম ওই গ্রামের নামে স্টল বসেছে! ’’

শাবানা বলছিলেন, ‘‘বাবা সাম্প্রদায়িকতারও বিরোধিতা করেছেন। শেষ জীবনে ওঁর একটা দিক প্যারালাইজ়ড হয়ে যায়। তখনও বলতেন, পরিবর্তন আসবেই। শুধু কাজ করে যেতে হবে। আমারও একই মন্ত্র।’’ সাম্প্রদায়িকতা বা রাজনৈতিক হত্যা নিয়ে তিনিও প্রকাশ্যে কথা বলেন। বিষয়টা ঝুঁকির নয়? শাবানার দৃঢ় উত্তর, ‘‘বিরোধিতা তো করে যেতেই হবে! আমাদের সমাজে বিদ্বজ্জনের ভূমিকা কোনও দিনই অস্বীকার করার মতো নয়। যত বার বাধা আসবে, তত বার সেই বাধা সরানোর চেষ্টা করে যাব আমরা...’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE