Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

টলিপাড়ার বইপোকারা

আজ বিশ্ব বই দিবস। স্মৃতি রোমন্থন করলেন টলিউডের তারকারাআজ বিশ্ব বই দিবস। স্মৃতি রোমন্থন করলেন টলিউডের তারকারা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

ঠিক ২৩ বছর আগে আজকের দিনটিই ইউনেসকো ‘ওয়র্ল্ড বুক অ্যান্ড কপিরাইট ডে’ ঘোষণা করে। ১৬১৬তে এ দিনই মৃত্যু হয় উইলিয়াম শেক্সপিয়রের। আনন্দ প্লাস মুখোমুখি হল বইভক্ত কয়েক জন তারকার।

কেউ বই নিয়ে গেলে বারবার তাগাদা দিতাম: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

‘‘আমাদের বাড়িতে নিয়মিত ‘দেশ’ আসত। কয়েকটা সংখ্যা একসঙ্গে বাঁধিয়ে, সেই বই মাকে দুপুরে পড়তে দেখতাম। আলমারি ভর্তি বই ছিল কাকুর।’’ ছোটবেলায় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, তার পর সঙ্গী মঁপাসা, ও হেনরির বইও। বাড়ির পরিবেশ তো বটেই, ঋতুপর্ণার পড়ার অভ্যেসের পিছনে তাঁর স্কুলও রয়েছে। ‘‘তখন তো ইন্টারনেট ছিল না। স্কুলের লাইব্রেরিতে পড়তাম ন্যান্সি ড্রিউ, ‘ফেমাস ফাইভ’, আগাথা ক্রিস্টি... একটু বড় হওয়ার পর সিডনি শেলডন এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ... কেউ জন্মদিনে বই উপহার দিলে তা সযত্ন রাখা ও কেউ বই নিয়ে গেলে বারবার তাগাদা দেওয়া... সে এক সময় ছিল!’’ সদ্য ঋতুপর্ণা পড়া শেষ করেছেন বিক্রম সম্পতের ‘গওহর জান’। ভাল লাগে অরুন্ধতী রায়, চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিবাকারুণি, খালেদ হোসেইনির সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মুন্সি প্রেমচাঁদ, বনফুলের লেখা পড়তে।

ফেলুদার জন্য সে যাত্রা বকুনি খাইনি: আবীর চট্টোপাধ্যায়

‘‘ছোটবেলায় মা-বাবা যখন জোর করে বই পড়ানোর অভ্যেস ধরিয়েছিলেন, তখন বুঝতে পারিনি। এখন মর্ম বুঝি,’’ বললেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রিয় লেখকদের তালিকায় আছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ। ‘‘চুটিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারও পড়েছি। প্রিয় বই অগুনতি। তবু বলব, ‘ঘুণপোকা’র দুটো দল আছে। এক দল প্রথম আট-দশ পাতার পর আর এগোতে পারেন না। আর এক দলের কাছে ‘ঘুণপোকা’ মুখস্থ। আমি ওই দ্বিতীয় দলে পড়ি।

আমার স্ত্রী নন্দিনীর সঙ্গে প্রেমটাও এক প্রকার শীর্ষেন্দুবাবুর সৌজন্যেই। ও যদি ‘দূরবীন’ মুখস্থ বলতে পারে, তো আমি ‘পার্থিব’।’’ আর ইংরেজি? ‘‘ছোটবেলায় ইংরেজি ক্লাসিকের অনুবাদ পড়েছি বলে মূল বই পড়ার রসে আমি বঞ্চিত,’’ বললেন আবীর। ‘‘মা ফেলুদা উপহার দিয়েছিলেন। লিখে দেন, ‘পড়াশোনায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে।’ বড় ম্যাপ বইয়ের মাঝে লুকিয়ে সেই বইটা পড়ছিলাম। মা ঘরে ঢুকতেই লুকোতে গিয়ে ম্যাপ বইয়ের আড়াল থেকে টুক করে পড়ে গেল ফেলুদা। সে যাত্রা অবশ্য তেমন বকুনি খাইনি। ফেলুদার জন্যই হয়তো!’’

শেষে বানান করে বই পড়তে শুরু করলাম: রাহুল

রাহুলেরও বইয়ের সঙ্গে সখ্য মায়ের হাত ধরেই। তাঁর কথায়, ‘‘তখন বোধহয় ক্লাস ওয়ান বা টু-তে পড়ি। মা দুপুরবেলায় গল্প বলতেন। যখন ইন্টারেস্টিং জায়গা আসত, বইটা উপুড় করে রেখে ‘আমার ঘুম পেয়েছে’ বলে শুয়ে পড়তেন। এ ভাবে কয়েক দিন চলার পর, উত্তেজনা চাপতে না পেরে শেষে বানান করে পড়তে শুরু করলাম। এ ভাবেই ইচ্ছেটা ধরে গেল।’’

বইপ্রেমী রাহুলের প্রথম প্রেম নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। শিবরাম চক্রবর্তী, সৈয়দ মুজতবা আলি পেরিয়ে রাহুল এখন নন-ফিকশন, আত্মজীবনী, সাক্ষাৎকারের সংকলন বেশি পড়েন। সদ্য শেষ করেছেন ‘নির্বাসিতের আত্মকথা’। শুটিংয়ের ফাঁকে সময় পেলে বই নিয়ে বসে পড়েন রাহুল, ‘‘সময়টা ভাল কাটে। এখন যেমন জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর ছোটগল্প পড়ছি।’’

ই-বুক পছন্দ করি না: পার্নো মিত্র

‘‘টিনটিন বা অ্যাসটেরিক্স পড়ে বড় হইনি। আর্চি ছাড়া কমিকস তেমন টানত না,’’ ছেলেবেলার বই পড়ার প্রসঙ্গে বললেন পার্নো। সদ্য শেষ করেছেন এলিনা ফেরান্তের ‘মাই ব্রিলিয়ান্ট ফ্রেন্ড’। ‘‘বইটার বিষয় অনেকটাই মিলে যায় বন্ধুদের সঙ্গে আমার সম্পর্কে।’’ নতুন বাড়িতে আসার পর এখনও সব বই সাজিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। কিন্তু বই কেনার উৎসাহে ভাটা পড়েনি।

‘‘অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বই আনালেও ই-বুক পছন্দ করি না। পাতা উল্টোনোর শব্দ না হলে, পাতার গন্ধ না পেলে বই পড়ে তৃপ্তি নেই।’’ পার্নোর পছন্দের তালিকায় নোরা এফ্রন, অমিতাভ ঘোষ, ঝুম্পা লাহিড়ি, জে কে রাউলিং। বাংলা পড়েন না? ‘‘তিন বছর হল শুরু করেছি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অনেক বই পড়ে ফেলেছি। ‘ঘুণপোকা’ একাধিক বার পড়লেও পুরনো হবে না।’’

ফ্যাতাড়ুরা আমাকে বিষণ্ণ করেছে: অনির্বাণ ভট্টাচার্য

অনির্বাণ ছেলেবেলায় পড়তে ভালবাসতেন কমিকস। হাঁদাভোঁদা, নন্টে-ফন্টে, চাচা চৌধুরী, টিনটিন, অ্যাসটেরিক্স— সব। ‘সিরিয়াস’ বই পড়া শুরু করেন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ তাঁকে ভীষণ আলোড়িত করেছিল। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ‘ক্রীতদাস ক্রীতদাসী’ও নাড়িয়ে দিয়েছিল। অনির্বাণের প্রিয় লেখকের তালিকা বৈচিত্রময়— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, নবারুণ ভট্টাচার্য, আবুল বাশার, স্বপ্নময় চক্রবর্তী... জীবনানন্দের উপন্যাস পড়া শুরু করেন কৌশিক সেনের ‘মাল্যবান’ নাটকটা দেখার পর।

‘কারুবাসনা’ করতে গিয়ে উপন্যাসটা আবার পড়েছেন বলে জানালেন তিনি। কোন চরিত্র তাঁকে বড় বেশি ভাবিয়েছে? ভাববার সময়ও নিলেন না অনির্বাণ, ‘‘ফ্যাতাড়ু। যত বড় হয়েছি আর সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান হয়েছে, ফ্যাতাড়ুরা আমাকে ততই বিষণ্ণ করেছে, ভয় পাইয়েছে।’’ ইংরেজি সাহিত্য বড় একটা পড়েন না তিনি। দস্তয়েভস্কি, তলস্তয়ের বাংলা অনুবাদ পড়েছেন। বললেন, ‘‘একটা ই-বুক রি়ডার এখন আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। ওতেই যা একটু-আধটু ইংরেজি বই পড়া হয়।’’

মায়ের কাছে বই পড়ার হাতেখড়ি: পাওলি দাম

‘‘বিয়ের পর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত পড়তে দিয়েছিলেন শাশুড়ি,’’ বললেন পাওলি। তাঁর প্রিয় বন্ধু বই। ব্যস্ততা থাকলেও হাতের কাছে প্রেমের গল্প পেলে ছাড়েন না। পাওলির বই পড়ার হাতেখড়ি মা হলেও অনুপ্রেরণা দাদামশাই।

পছন্দের তালিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিক্রম শেঠ, অরুন্ধতী রায়, পাওলো কোয়েলহো, মিলান কুন্দেরা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবী চৌধুরাণী’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘শ্যামা’ চরিত্রে অভিনয়ও করতে চান। এখন পড়ছেন এ জে ফিনের ‘দ্য উওম্যান ইন দ্য উইন্ড’ বইটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE