Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফিরে পাওয়া আমাদের সেই দিনগুলো

আশির দশকের শেষ আর নব্বইয়ের গোড়ায় আমাদের ওই সময়গুলো ফিরে দেখছিলাম মৈনাক ভৌমিকের ‘জেনারেশন আমি’-তে। মনে হল, বছর তিরিশেক পেরিয়েও সেই রাগ-দুঃখ-কষ্ট আজও টাটকা-তাজা।

সূর্য্য দত্ত
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

জেনারেশন আমি

পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক

অভিনয়: ঋতব্রত, সৌরসেনী, অপরাজিতা, শান্তিলাল, লিলি

৬/১০

ক্লাস ওয়ান থেকে টু-তে উঠতে ফার্স্ট হওয়া একটা ছেলে যখন ফোর্থ হয়ে থ্রি-তে উঠল, তখন মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরতে ফিরতেই বুঝেছিল, অনেক আশা-ভরসা সে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ক্লাস ফাইভে দেখেছিল, পরীক্ষার পরেই বন্ধুর কোয়েশ্চেন পেপার মায়ের জিম্মায়। আইসক্রিম হাতে উত্তর আউড়ে চলেছে সে-ও।

আশির দশকের শেষ আর নব্বইয়ের গোড়ায় আমাদের ওই সময়গুলো ফিরে দেখছিলাম মৈনাক ভৌমিকের ‘জেনারেশন আমি’-তে। মনে হল, বছর তিরিশেক পেরিয়েও সেই রাগ-দুঃখ-কষ্ট আজও টাটকা-তাজা। হ্যাঁ, সবার মা এ ছবির মিসেস বোসের (অপরাজিতা) মতো ছেলে অপুকে (ঋতব্রত) পরীক্ষার আগে গজগজ করতে করতে দুধ-পাউরুটি খাইয়ে দেননি। কিংবা সব বাবা-ই অপুর বাবার (শান্তিলাল) মতো স্কুলের খাতায় লেখা গান ছিঁড়ে ফেলেননি। কিন্তু ক্লাস টেনেও বাবা-মা স্কুলে ছেড়ে এসেছেন অনেককে। টিভি বা ওয়াকম্যানের নেশার দাম চোকাতে হয়েছে

‘বুড়ো বয়সে’ খাওয়া চড়থাপ্পড়ে। চিৎকার করে বলেও ফেলেছি, “আমি কি যন্ত্র!”

‘জেনারেশন আমি’-র টাইটেল ট্র্যাকও বলছে, “আই অ্যাম নট আ যন্ত্র!” শুধু টিভির বদলে ২০১৮-র ছবিতে ফেসবুক এসেছে, আর মোবাইল। বাকিটা চিরন্তন।

‘জেনারেশন আমি’-র শক্তি তার সততা। মৈনাক তাঁর কিশোর নায়কের নাম অপু এবং অপুর জীবনে ঝড়ের মতো আসা জেঠতুতো দিদির (সৌরসেনী) নাম ‘দুগ্গা’ রেখেছেন। কিন্তু আধুনিক ‘পথের পাঁচালী’ বানিয়ে সাড়ে ছ’ফুটের ছায়া হতে চাননি। আবহমান সত্যি নিয়ে একটা ঝরঝরে গল্প বলেছেন। যেটা কিন্তু শুধুই স্বপ্নপূরণের কিংবা বাবা-মায়ের ‘মন বদলের’ গল্প নয়। এই গল্পে অচেনা মোড় আছে, মজা আছে, গলার কাছে ব্যথা আছে। ওপরচালাকি নেই সংলাপেও। হয়তো কোথাও কোথাও বাবা-মায়ের শাসন, অপুর বিদ্রোহ বা বান্ধবী পিয়াকে (অনুশা) নিয়ে আকাশকুসুমে অতিনাটকীয়তা এলেও সেটাকে মাফ করা চলে।

বাবা-মায়ের স্বপ্ন আইআইটি। অপুর স্বপ্ন গান আর পিয়া। এই দড়ি টানাটানির চালচিত্রে দুর্গার আগমন। আদরের ভাইটার হাত ধরে তাকে ‘আমি’ হয়ে ওঠার সাহস দেয় দুর্গা। কিন্তু নিজের দমচাপা কষ্টে হাজার কেঁদেও বাবা-মাকে পায় না। তখন সে-ই ভাইকে বলে, “তুই খুব লাকি!” পাশাপাশি বসে থাকে কোণঠাসা, বিপরীত দুই পৃথিবী।

অরিন্দমের সুরে, প্রসেনের কথায় গানগুলো গভীর এবং যথাযথ। তবে অভিনয় এ ছবির ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। কাঠখোট্টার আড়ালে ভীষণ নরম, বিপন্ন এক দিদি— সৌরসেনী সব ধাপ পেরিয়েছেন অনায়াসে। ঋতব্রত বুঝিয়েছেন, তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। ‘ঠাম্মা’ লিলি চক্রবর্তী বড্ড ভাল। অপরাজিতা তো আগেই বললাম, আমাদের ফ্ল্যাশব্যাক অবলীলায় ফিরিয়ে এনেছেন, কখনও স্রেফ একটা চাহনিতেই। ঋতব্রতর বাবা শান্তিলাল না থাকলে অপুর বাবা এত জীবন্ত হত কি না, সন্দেহ। কী গভীর মুহূর্ত তৈরি হয় যখন ছেলের চিৎকারে বাবাও ফুঁসে উঠে বলে, “তুই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে তোকে গাইড করতে পারব। গান গাইলে পারব না।”

এ ছবি তাই সব বাবা-মায়েদের ভালবেসে। ‘আমরা’ তো রইলামই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Generation Ami Mainak Bhowmik Film Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE