শেক্সপিয়রের নাটক ‘হ্যামলেট’য়ের অঞ্জন দত্ত কৃত স্ক্রিন অ্যাডাপটেশন ‘হেমন্ত’ দেখে বাঙালি দর্শকের প্রায় হ্যামলেট দশা। অর্থাৎ নায়কের মতো তারাও অবিরল প্রশ্নে আকীর্ণ।
অপরূপ কবিতা ও গভীর মনস্তত্ত্বে মোড়া আট-আটটি মৃত্যু ও খুনোখুনিতে ভরানো ‘হ্যমলেট’কে হাল্কা চালে বলাও হয়—প্রতিশোধ ও ভূতের নাটক। ভূতের দৃশ্য থেকে প্রতিশোধে পৌঁছনো এত ঘটনা পেরিয়ে যে, একেক সময় সেটিকে অরণ্যে বৃক্ষের ঠিকানা খোঁজা বলে মনে হয়।
এহেন ‘প্রবলেম প্লে’কে সিনেমার ফর্ম্যাটে এই মুহূর্তের বাঙালি জীবনের আয়না করে দাঁড় করানো চাট্টিখানি কথা নয়। শেক্সপিয়রের এলসিনোর দুূর্গ অঞ্জনের ছবিতে হয়েছে ‘অগ্রদূত ফিল্ম কোম্পানি’। যার নতুন কর্তা কল্যাণ (ক্লডিয়াস) বউদি গায়ত্রীর (গার্টরুড) সঙ্গে হাত মিলিয়ে দাদাকে নিকেশ করে, দক্ষিণী ছবির কপি বানিয়ে বাজার দখলের চেষ্টায়।
ওদিকে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী গায়ত্রীর ছেলে হেমন্ত অদ্ভুত মেসেজ পেতে শুরু করে মোবাইলে। যেগুলো পাঠাচ্ছেন ওর বাবা, দাবি করছেন খুনের বদলা। হেমন্ত ওর তাড়নার কথা শেয়ার করতে পারে একমাত্র বন্ধু হীরকের (হোরেশিও)-র সঙ্গে। হেমন্তও ব্যাপারটার এসপার-ওসপার করতে উড়ে আসে কলকাতায়।
হ্যামলেট ভূতের প্রভাবে জড়িয়ে পড়ে দেশের রাজনীতি ও সভা- চক্রান্তে। এ কালের হেমন্ত চাক্ষুষ করতে থাকে এই সময়ের বাংলার চাঞ্চল্যকর সব দুর্নীতি। কী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির, কী জমির ঘাপলার, কী টাকার চোরাচালানের।
‘হেমন্ত’-র আসল প্রবলেম বলতে গেলে মোবাইল নিয়ে। মধ্যযুগে ভূতে বিশ্বাস তো অনায়াস ছিল। হ্যামলেটের বাবার ভূত যতটা রোমাঞ্চকর ও ভীতিপ্রদ হয় তার কতটুকু করতে পারে আইফোনের মেসেজ? শত চেষ্টাতেও মেসেজের উৎস শনাক্ত হয় না? ভূতহীন ‘হেমন্ত’ বাঙালি দর্শক বিশেষ নিতে পারল কি?
হ্যামলেটের মতো সিরিয়াস নাটকের সিনেমাটিক ফর্ম ধরে রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত ইংরেজি শব্দের ব্যবহার চোখে পড়ে। সাধারণ দর্শক যারা সিনেমায় যান ফিল গুড এফেক্ট খুঁজতে তারা কি সেই রসদ পাবেন?
অভিনয়ের কথায় এলে কিন্তু প্রথমেই হেমন্ত। এ যাবৎ সেরা অভিনয়টা দেখালেন পরমব্রত। যিশুর হীরক এককথায় তুখোড়। যেমন সুন্দর গার্গী-গায়ত্রী। হতাশা ও পরাজয়ের নানা মুহূর্তে ভীষণ সাবলীল ও চোখকাড়া তিনি। অলিপ্রিয়া চরিত্রে পায়েল, কল্যাণের ভূমিকায় শাশ্বত অনুরূপ সাবলীল।
নাটকের ভ্যালু সিনেমাটিক ফর্মে ধরে রাখতে পেরেছেন পরিচালক। চরিত্রোপযোগী অভিনয়টা বের করে আনার মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন। দর্শকের ভাল-খারাপ যাই লাগুক ‘হ্যামলেট’-এর এই পুনর্নির্মাণ হয়তো অনেক দিন চর্চায় থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy