Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রান্নার উপকরণ ছিল অনেক, কিন্তু তৈরি হল অখাদ্য ঘ্যাঁট

একমাত্র বংশধরকেই সরকারের উত্তরাধিকারী করলেন সুভাষ নাগরে। বিস্তর টানাপড়েন ও প্রচুর রক্তক্ষরণের পর। কিন্তু সেই উত্তরাধিকারী আদৌ যোগ্য তো? ‘সরকার’-এর আবির্ভাব ২০০৫-এ। ২০০৮-এ ‘সরকার রাজ’। আর এ বার ‘সরকার থ্রি’।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ১১:১৫
Share: Save:

সরকার থ্রি

পরিচালনা: রাম গোপাল বর্মা

অভিনয়: অমিতাভ, মনোজ, অমিত, ইয়ামি, রণিত

৪.৫/১০

একমাত্র বংশধরকেই সরকারের উত্তরাধিকারী করলেন সুভাষ নাগরে। বিস্তর টানাপড়েন ও প্রচুর রক্তক্ষরণের পর। কিন্তু সেই উত্তরাধিকারী আদৌ যোগ্য তো?

‘সরকার’-এর আবির্ভাব ২০০৫-এ। ২০০৮-এ ‘সরকার রাজ’। আর এ বার ‘সরকার থ্রি’। প্রথম ছবিতে বড় ছেলে বিষ্ণু, দ্বিতীয় ছবিতে ছোট ছেলে শঙ্করকে হারান সুভাষ নাগরে। তার পর চঞ্চল হয়ে বলেন, তাঁর চিকুকে চাই, চিকুকে। বিষ্ণুর ছেলে চিকু। বংশপ্রদীপের একমাত্র সলতে। নাতিকে চাওয়ার কারণ, অব্যাহত রাখতে হবে সরকার রাজ। কাজেই, নতুন ছবিতে চিকুকে দেখা যাবে, জানাই ছিল। কিন্তু কী দেখলাম?

‘সরকার’ সিরিজে এই প্রথম অভিষেক বচ্চন নেই। সরকারের কর্তৃত্ব সুভাষ নাগরেকে যেচে দিতে হয়নি, শঙ্কর নিজে অর্জন করে। কাহিনির মতোই বাস্তবে অভিষেকের মারকাটারি অভিনয় আগের দু’টো ছবিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল, কেন তিনি বাপ কা ব্যাটা।

সেই অভিষেক না থাকায় গোটা ছবি উতরানোর দায়িত্ব এ বার একা বিগ বি-র উপর। যেটা করতে গিয়ে শেষমেশ কি না বৃদ্ধকে পিস্তল হাতে তুলে নিতে হল! অমিতাভের না বলা কথা, নীরব অভিব্যক্তি, চোখের ভাষাকে এখানে তেমন কাজে লাগানো হল না। যেটুকু হল, চওড়া ফ্রেমে ক্যামেরা জুম করে বারবার মুখের ছবি তুলে ধরলেও, সেটা ঠিক জমল না। শয্যাশায়ী স্ত্রী পুষ্পার (সুপ্রিয়া পাঠক) মৃত্যুর পর ধ্বস্ত হওয়া মানুষের শোক-যন্ত্রণার প্রকাশ কোথায়? গোটা ছবি জুড়ে বড্ড বেশি সংলাপ। অথচ সরকারের ইশারাই তো কাফি হওয়ার কথা, তা-ই না!

আসলে খাপছাড়া চিত্রনাট্য, গোঁজামিল দেওয়া কাহিনি হলে অমিতাভ একা কত টানবেন? টান টান ব্যাপারটাই অনুপস্থিত। হায়! সরকারি শাসনের এক যুগ পূর্তিতে রাম গোপাল বর্মার এ কী ছবি!

সরকারের স্ত্রী-র যদি সবই জানা থাকবে, তা হলে তিনি নাতির জন্য কষ্ট পেয়ে মারা যাবেন কেন? এ সব দুর্বলতা ঢাকতে যখন তখন সরকারের সিগনেচার টিউন ‘গোবিন্দা গোবিন্দা’ ব্যবহার করে আরোপিত সাসপেন্স তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছে। অমিতাভের স্বরেও প্রয়োজন ছাড়া হিসহিসে, খসখসে ভাব আরোপিত।

ধারাভিতে বেসরকারি উদ্যোগে প্রকল্প হবে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচে, উচ্ছেদ হতে হবে ১৫ হাজার মানুষকে। সরকার হতে দেবেন না। তবে এই বিষয়কে ঘিরে ছবি আবর্তিত হয়নি। কখনও প্রধান হয়ে উঠল সরকারের পুরনো শত্রুর মেয়ে ইয়ামি গৌতমের প্রতিশোধস্পৃহা, কখনও বিশ্বস্ত সহকারী গোকুল সতাম বা রণিত রায়ের লোভ। কিন্তু যা হল— রান্নায় একগাদা উপকরণ ঢেলে অখাদ্য এক ঘ্যাঁট।

সুভাষ নাগরের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, কিন্তু সত্যিকার বিপদের মুখে ইঁদুরের মতো পালায় গোবিন্দ দেশপাণ্ডে (মনোজ বাজপেয়ী)। তার বৃদ্ধা মা রুক্কু বাঈ দেবীর (রোহিণী হাত্তাঙ্গাড়ি) শুয়ে শুয়ে হুইস্কি খাওয়াটা চিত্রনাট্যে কী প্রয়োজন ছিল, সেটাও বোধগম্য নয়। খলনায়ক মাইকেল ভল্লার ভূমিকায় জ্যাকি শ্রফ কি সরকার থ্রি-কে যাত্রাপালা ঠাউরেছিলেন? না হলে থেকে থেকে তিনি ‘ইয়াহাহাহা’ করে উঠছিলেন কেন?

সরকারে বরাবরই মূলত ‘নয়ার’ ধর্মী রঙের আধিক্য। কালো, খয়েরি, ধূসর আর খুব মেপে লাল রঙের ব্যবহার, অন্ধকার জগৎ যেহেতু। তবে দুবাইয়ে থাকা জ্যাকি শ্রফকে যখনই দেখানো হয়, তখনই বহু বর্ণ ও উজ্জ্বলতার ছড়াছড়ি। বর্ণচ্ছটায় চোখ ধাঁধিয়ে গিয়ে মনে হচ্ছিল, ছবির মধ্যে হঠাৎ বুঝি অ্যাড ফিল্ম শুরু হয়েছে। সরকারের নতুন সিনেম্যাটোগ্রাফার অমল রাঠৌর এটা কী করলেন?

ছবিতে একটি ড্রোন পুষ্পবৃষ্টি করতে করতে গ্রেনেড ফেলে। সরকার নিজে আই ফোন ব্যবহার করেন। হালফিলের প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত থাকার কথা। তবু সরকারের দেহরক্ষীদের হাতে এখনও মেশিন কার্বাইনের মতো মান্ধাতার আমলের অস্ত্র! যেখানে মুম্বইয়ের অপরাধ জগতে একে ফর্টি সেভেনের ব্যবহার শুরু ১৯৯২-এর ১২ সেপ্টেম্বর! ওই দিন জে জে হাসপাতালে ঢুকে দাউদ ইব্রাহিমের ২৪ জন বন্দুকবাজ ৫০০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল।

আর সরকারের উত্তরসূরি! চিকু ওরফে শিবাজী নাগরের ভূমিকায় অমিত সাধ এক কথায় বালখিল্য। তিনি আবার ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেন, ‘আমি কিন্তু শঙ্কর নই, আমি শিবাজী।’ সত্যিই তো। কীসে আর কীসে। এর হাতে সরকারের উত্তরাধিকার মোটেই নিরাপদ নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sarkar 3 Amitabh Bachchan Amit Sadh Movie Reviews
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE