Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মম: মেদবহুলতার মাঝে প্রাপ্তি ছিপছিপে শ্রীদেবী

ফার্ম হাউসে পার্টি করতে গিয়ে এক রাতে বাড়ি ফেরে না আর্যা। পরদিন ভোরের আলোয় যখন আর্যাকে উদ্ধার করা হয়, ততক্ষণে তার উপরে হয়ে গিয়েছে নৃশংস অত্যাচার। চার অভিযুক্ত ধরা পড়লেও প্রমাণের অভাবে আদালত তাদের বেকসুর খালাস করে দেয়।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ১২:৪০
Share: Save:

মম

পরিচালনা: রবি উদ্যাবর

অভিনয়: শ্রীদেবী, অক্ষয় খন্না, সেজল আলি, নওয়াজউদ্দিন

৫/১০

বিষয়টা একই। আর প্রাসঙ্গিকও। কিন্তু ছকটা চেনা। কয়েক মাস আগে মুক্তি পেয়েছে রবিনা টন্ডনের ‘মাতৃ’। তার সঙ্গে ‘মম’-এর কোনও তফাত নেই। ফারাক শুধু অভিনয়ে।

২০১২-র নির্ভয়ার ঘটনার সঙ্গে ‘মম’-এর প্রেক্ষাপট এক। তবে পরিণতি নয়। এই দিল্লিই চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছে রাতপথে মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব। ছবিতে সেখানেই স্বামী, দুই সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার দেবকীর (শ্রীদেবী)। দেবকী হাইস্কুলে বায়োলজির শিক্ষিকা। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক জড়তাহীন। ক্লাসে মাসল্‌স নিয়ে পড়াতে এসে সে সলমনের ছবি দেখায়। সেই দেবকীরই সম্পর্ক মধুর নয় সৎ মেয়ে আর্যার (সেজল আলি) সঙ্গে। দেবকী সম্পর্কে আর্যার ‘মা’ হলেও, টানাপড়েনের জেরে শুধু ‘ম্যাম’ হয়েই থেকে যায়।

ফার্ম হাউসে পার্টি করতে গিয়ে এক রাতে বাড়ি ফেরে না আর্যা। পরদিন ভোরের আলোয় যখন আর্যাকে উদ্ধার করা হয়, ততক্ষণে তার উপরে হয়ে গিয়েছে নৃশংস অত্যাচার। চার অভিযুক্ত ধরা পড়লেও প্রমাণের অভাবে আদালত তাদের বেকসুর খালাস করে দেয়। শুরু হয় মায়ের প্রতিশোধ। দেবকী নামে মা দুর্গার অবতারে!

ছবিতে ‘মা’ শ্রীদেবী সুদক্ষ ও দাপুটে। হাসপাতালের বিছানায় মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখে মায়ের আতঙ্ক ও পরে অসহায়তার এক্সপ্রেশন, এই দুইয়ের ফারাকের সূক্ষ্মতা টানা শ্রীদেবীর পক্ষেই সম্ভব। মায়ের আর্তনাদ, ধর্ষণ-পরবর্তী সময়ে মেয়ের কষ্ট ভাগ করে নিতে না পারার যন্ত্রণা বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে তাঁর অভিনয়ে। তবে ছবিটা বড্ড শ্রীদেবী-কেন্দ্রিক। ফলে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অক্ষয় খন্নার মতো অভিনেতাকে পেয়েও, তাঁকে দিয়ে কিছু করাননি পরিচালক। দুর্ভাগ্য, আজও অক্ষয়ের মতো দাপুটে ও ভাল মানের অভিনেতাকে পার্শ্বচরিত্রে ঠুঁটো জগন্নাথের মতোই থেকে যেতে হয়।

অভিনয়ের দিক দিয়ে নওয়াজ বরাবরই সামান্য পরিসরেও দাগ কেটে যান। ছবিতে গোয়েন্দা দয়াশঙ্করের চরিত্রেও তিনি সাবলীল। অত্যন্ত বিষাদময় ঘটনার পরম্পরার কোলাজে তৈরি ছবিতে নওয়াজই সামান্য কমিক রিলিফ।

বিশেষ করে বলতে হয় আর্যার চরিত্রে সেজলের কথা। সদ্য যৌবনে প্রবেশ করা আর্যা শিশিরের মতোই নিষ্পাপ ও সুন্দর। ছবির প্রয়োজনে তিনি যথাযথ ও সাবলীল। আদনান সিদ্দিকি দেবকীর স্বামী আনন্দের চরিত্রে ঠিকঠাক।

এবং অবশ্যই বলতে হয় ছবির এডিটিংয়ের কথা। প্রায় আড়াই ঘণ্টার একটি অতিদীর্ঘ ছবিকে আরও মেদহীন ও সুঠাম করা যেত সহজেই। মনীষা আর বলদাওয়াকে এডিটিংয়ে হাত পাকাতে গেলে আরও অনেক দূর যেতে হবে। নবাগত পরিচালক রবি উদ্যাবরের প্রচেষ্টা ভাল হলেও ছবির সংলাপ অত্যন্ত ক্লিশে। তবে তার চেয়েও বেশি ক্লিশে আর প্রেডিক্টেবল এই ছবির ক্লাইম্যাক্স।

বনি কপূর একটি প্রাসঙ্গিক ও দরকারি বিষয়কে বাণিজ্যিক মোড়়কে উপস্থাপিত করেছেন। এক দিকে সৎমা থেকে নিজের ‘মা’ হয়ে ওঠা, আর অন্য দিকে আইনের পঙ্গুতা দেখে এক মায়ের অন্যায়ের বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া, এই দুই প্লট ঘিরেই সুতো বুনেছে ‘মম’। ‘পিঙ্ক’, ‘মাতৃ’, ‘মম’, প্রত্যেকটি ছবিই ধর্ষণ ও তার পরবর্তী সুবিচারের প্রত্যাশা নিয়ে তৈরি। তবে কবে এই সমাজ এমন লজ্জাকর দুর্ঘটনার আগেই তার ঘৃণ্য ভাবনাটিকে সমূলে উপড়ে ফেলবে, সে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়। এ বার না হয় ধর্ষণের সেই মানসিকতা রুখে দেওয়া নিয়েই তৈরি হোক ছবি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE