অঞ্জন দত্ত। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ
অঞ্জন দত্তর কাছে পুজো মানেই ব্যোমকেশ বক্সী। গত বছর কয়েকের হিসেব অন্তত তাই বলছে। প্রতি পুজোয় কখনও ছয়, কখনও সাতটা করে ছবি রিলিজ করে। কমন একমাত্র ব্যোমকেশ। নিশ্চিত হিট একমাত্র ব্যোমকেশ। বদল বলতে মুখ্য চরিত্রের মুখ বদলে গিয়েছে শুধু।
কিন্তু অঞ্জনের ব্যোমকেশে গ্র্যাঞ্জার কম, ছবিটাও যেন দায়সারা ভাবে তৈরি— এ কথাগুলোও শোনা যায়। অঞ্জনকে প্রশ্নটা করতেই কাঁধ ঝাঁকিয়ে বল বাউন্ডারিতে ফেলার ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘খারাপই যদি হবে, তা হলে একমাত্র আমার ব্যোমকেশই ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখল কী করে? দর্শকই বা দেখলেন কেন?
তবে কথায় কথায় নিজেও বললেন, আগের তুলনায় এ বারের ব্যোমকেশের পরিধি অনেক বড়। ‘উপসংহার’ এবং ‘অগ্নিবাণ’ দুটো মিলিয়েই এ বারের ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’। যিশু সেনগুপ্ত ছাড়াও কম বয়সের ব্যোমকেশের চরিত্রে আর একজনকে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: আমি খুব তাড়াতাড়ি বোরড হয়ে যাই
আগের ব্যোমকেশগুলোকে ছোট ছবি বলছেন কেন? ‘‘এত দিন ব্যোমকেশের মধ্যে যে ভিস্যুয়ালটা চাইছিলাম, সেটা এখানে করতে পেরেছি। দুটো গল্প। বাজেটও বেশি। এখানে ব্যোমকেশ শুধু ঘরের মধ্যে বসে সিগারেট খেয়ে মিস্ট্রি সলভ করে না। একটা রাসায়নিক অস্ত্র জাপানিদের হাতে চলে যেতে বসেছে। আর সেটা আটকাচ্ছে এক ছাপোষা বাঙালি। এই গল্পটা বলতে গেলে যে স্কেলের প্রয়োজন ছিল সেটা ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’-এ করা হয়েছে,’’ বিস্তারিত বললেন পরিচালক।
এর পর ‘দুর্গরহস্য’ করার পরিকল্পনা রয়েছে অঞ্জনের। সেখানে ক্যানভাস আরও বড়। বলছিলেন, ‘‘একটা উত্তরণের প্রয়োজন ছিল। ‘দুর্গরহস্য’-র স্কেলে যাওয়ার আগে ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’ একটা ধাপ বলতে পারেন।’’
কিন্তু এই ধাপ পেরোতে সাত বছর লাগল! না কি অন্য পরিচালকের তৈরি ব্যোমকেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিচ্ছে অঞ্জনকে? পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন পরিচালক, ‘‘আমি যখন ব্যোমকেশ করা শুরু করেছি, তখন বাকিরা কোথায়?’’ তার পর অঞ্জনোচিত ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলেন, ‘‘একটা জিনিস করতে করতে উন্নতি ঘটে। আমারও মনে হচ্ছিল, এ বার একটা বদল দরকার। শন কনোরি চলে যাওয়ার পর বন্ড কিন্তু হারিয়ে গিয়েছিল। ড্যানিয়েল ক্রেগ আবার সেই বন্ডকে ফেরত আনেন। পিয়ার্স ব্রসনন তো সে ভাবে কোনও দিনই বন্ড হয়ে উঠতে পারেননি। টিমোথি ডালটনকে দিয়ে তো হয়ইনি। অনেক ব্যোমকেশই তো হল। উত্তমকুমার করেছেন। টেলিভিশনে হয়েছে। কিন্তু এই ব্যোমকেশ আলাদা।’’
ছবির গল্প ১৯৬২ থেকে শুরু। যা ’৭০-৭১ পর্যন্ত দেখানো হবে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, কলকাতায় ছাত্র আন্দোলন...পিরিয়ড তৈরি করতে চিনেপট্টি, পুরনো পাব রিক্রিয়েট করা হয়েছে। যতই নতুনত্ব আনা হোক, পরপর ব্যোমকেশ করতে কি পরিচালকের ভাল লাগছে? একটু থেমে বললেন, ‘‘কী হচ্ছিল জােনন, মন দিয়ে ব্যোমকেশ করছিলাম। সফল হচ্ছিল। আবার নিজের মতো অন্য ছবি করছিলাম। কিন্তু ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’র পর আর কোনওটাই দাঁড়ায়নি। নিজের ভিতরেই খারাপ লাগা তৈরি হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে অপশন ছিল ব্যোমকেশ থামিয়ে নিজের অন্য ছবিটা মন দিয়ে তৈরি করা। নয়তো যে ফ্র্যাঞ্চাইজিটা সফল, সেটাকেই নিজের মতো করে করা।’’
তবে ‘দুর্গরহস্য’-এর পর আর কোনও ব্যোমকেশ করবেন কি না সন্দেহ রয়েছে! যে কারণে অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি করার কথা ভাবছেন। ‘‘শুধু থ্রিলার দিয়েই সিরিজ কেন হবে? প্রেমের গল্পও হতে পারে। আমাদের কাছে সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’র মতো সিরিজ আছে। জানি না, কী করব। তবে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু করার কথাও ভাবছি।’’
তিনখানা ব্যোমকেশ করার পরেও যিশুর সঙ্গে আবিরের তুলনা চলে। এ ব্যাপারে কী বলবেন? নিজের ব্যোমকেশের পক্ষ নিয়েই অঞ্জন বললেন, ‘‘একটা চরিত্র করতে করতে অভিনেতা সেই চরিত্রের এসেন্সে পৌঁছে যায়। এখানে যিশুর সেটাই হয়েছে। ও আনপ্রেডিক্টেবল, আবার ঘরোয়াও। যে ব্যোমকেশকে আমি বাসু চ্যাটার্জির পরিচালনাতেও দেখিনি। আবিরের মধ্যেও দেখিনি। আবিরের মধ্যে একটা বুদ্ধিদীপ্ত বাঙালিকে দেখেছিলাম। তবে আমার দেখা সেরা ব্যোমকেশ যিশুই।’’
‘‘আমি তো যিশুর মধ্যে ফেলুদাও দেখতে পাই। আমি হলে ওকে দিয়ে ট্রাই করতাম। ভাগ্যিস আর কেউ সে চেষ্টাটা করেনি। আমার ব্যোমকেশ বেঁচে গেল!’’
তাঁর সিগনেচার শরীরী ভাষায় দুষ্টুমি ভরা একটা হাসি খেলে গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy