Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিগ বস গুহায়

পাহাড়ি জায়গা। মুম্বই থেকে আশি কিলোমিটার দূর। কিন্তু ঠিক কোথা দিয়ে ঢুকতে হবে? দরজার রং কী? জানার উপায় নেই। ইন্দ্রনীল রায়-এর চোখ যে কাপড়ে ঢাকা। দু’হাতও বাঁধা। ভারতে এই প্রথম কোনও সাংবাদিক শো চলাকালীন ঢুকলেন ‘বিগ বস’ হাউজে...ঘড়ি? পরে যাওয়া নিষেধ। মোবাইল ফোন? রাখতে দেওয়া হয় না। খবরের কাগজ? মিলবে না। টিভি? নেই। রেডিও? থাকার প্রশ্ন ওঠে না।

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০০:১১
Share: Save:

ঘড়ি? পরে যাওয়া নিষেধ।

মোবাইল ফোন? রাখতে দেওয়া হয় না। খবরের কাগজ? মিলবে না। টিভি? নেই।

রেডিও? থাকার প্রশ্ন ওঠে না।

এ কোন পৃথিবীরে বাবা? শুনেছিলাম চম্বলের ডাকাত থেকে বীরাপ্পন — এ ভাবেই নাকি তারা তাদের ডেরায় নিয়ে যেত লোকজনকে।

হাত ধরে, চোখে কালো ফেট্টি পরিয়ে, যাতে আসা-যাওয়ার রাস্তা কেউ চিনে না ফেলে। ‘বিগ বস’‌য়ের বাড়িতেও যে একই নিয়ম, কে জানত!

মঙ্গলবার দুপুরে মুম্বই-পুণে এক্সপ্রেসওয়ের লোনাভলা এক্সিট ধরে মিনিট কুড়ি যেতেই একটা ফ্যাক্টরি কম্পাউন্ডে ঢুকল ধূসর রঙের টয়োটা ইনোভা।

বাইরে ‘বিগ বস’‌য়ের বিরাট বিরাট হোর্ডিং। হিন্দি, বাংলা, কন্নড় —‘বিগ বস’‌য়ের সব শ্যুটিংই হয় লোনাভলার এই ফ্যাক্টরিতে, যা আজকে সেটে পরিণত। পুরো অঞ্চলটারই নিরাপত্তা অসম্ভব কড়া। ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মিললে ঢোকা যায় না। গেটের বাইরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাওয়া ছাড়াও উপায় নেই।

‘‘এখানে সব কিছু বিগ বসের মর্জিমতো চলে। আপনি ঘড়ি, মোবাইল ফোন, মানি ব্যাগ — সব জমা দিয়ে দিন প্লিজ। ভিতরে কিছু অ্যালাউড নয়,’’ বললেন কালার্স বাংলার কর্মী রাই সেনগুপ্ত। বলা মাত্রই দু’জন এসে বেঁধে দিলেন চোখ। ফেট্টির নীচ থেকে যতটুকু দেখা যায় তাতে বুঝলাম চারদিক এমনিতেই অন্ধকার। গলিঘুপচি, এ দিক ও দিক ঘুরে এক জায়গায় গিয়ে দাঁড় করানো হল। ফিসফিস করে একজন বললেন, ‘‘এ বার আপনার চোখ খোলা হবে। ডানদিক, বাঁদিক কোথাও না তাকিয়ে ঢুকে যান বাড়ির ভিতরে।’’

ওয়েলকাম টু বিগ বস হাউজ।

এই প্রথম কোনও মিডিয়া হাউজের প্রতিনিধি শো চলাকালীন ‘বিগ বস’য়ের হাউজে ঢুকল। তবে হাউজ তো নয়, এ যেন ‘বিগ বস’য়ের গুহা।

সর্বক্ষণের সঙ্গী ৫২ ক্যামেরা

উমঙ্গ কুমারের ডিজাইন করা, দুর্দান্ত সাজানো এই বাড়ির ভিতরে রয়েছেন ১৩ জন মানুষ, যাঁদের দিকে সর্বক্ষণ তাক করা রয়েছে ৫২টি ক্যামেরা। বাথরুম ছাড়া প্রত্যেকটা জায়গায় ক্যামেরা। তাঁদের মধ্যে আছেন গায়ক শিলাজিৎ, বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয় মুখ কমলিকা, অভিনেত্রী ঋ, এনা সাহা, প্রীতি আর প্রিয়া। সঙ্গে অভিনেতা জয়জিৎ, মৈনাক। একই বাড়িতে ‘মীরাক্কেল’খ্যাত অপূর্ব রায়। তখন অবধি ছিলেন এমটিভি রোডিজের অবিরল সচদেব, পরে যাঁকে অসুস্থতার কারণে বার করে নেওয়া হয় বাড়ি থেকে। এ ছাড়াও রয়েছেন ‘বিগ বস সিজন টু’‌য়ের ট্র্যাম্প কার্ড — সেই হাড় হিম করা শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডের শিনা বোরার ভাই, মিখাইল বোরা।

বাইরে থেকে ব্যাপারটা জানলেও, বাড়িতে ঢুকেই যেটা সবার আগে মনে হবে, তা হল বাইরের পৃথিবীর থেকে কী অসম্ভব বিচ্ছিন্ন এই বাড়িটা!

যাঁদের সিগারেটের নেশা রয়েছে, তাঁদের জন্য ‘কোটা’ করে দেওয়া হয়েছে। তার বেশি সিগারেট তাঁরা খেতে পারবেন না। কেউ যদি দিনে কোটার বেশি সিগারেট খান, তা হলে সে দিনের রাতের খাবার তিনি কম পাবেন। এ ছাড়াও বাড়ির বাইরেই রয়েছেন সাইকিয়াট্রিস্ট, যিনি সমানে দেখে চলেছেন ভিতরের মানুষদের গতিবিধি।

২৪ ঘণ্টা দেখলে আপনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবেন

বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সবাই এসে জানতে চান কলকাতার কী খবর। জানতে চান ভোট কেমন হচ্ছে? গরম কেমন? আইপিএল-এ কারা ভাল খেলছে? এগুলো তাঁদেরকে বলার সঙ্গে সঙ্গেই এই প্রতিবেদককে যথেষ্ট কড়া গলায় ‘বাইরের কিছু বলা যাবে না’ বলে ধমক দেন ‘বিগ বস’।

এর মধ্যে শিলাজিৎ-জয়জিৎরা বলেন তাঁদের বাড়ির লোকের কাছে খবর পাঠিয়ে দিতে যে, তাঁরা ভাল আছেন। এত সব কথাবার্তার মধ্যেই শুরু হয়ে যায় বিস্তর ঝামেলা। গালাগলি, অতীতের কথা তুলে ঠেস দেওয়া।

সেটা এতটাই ব্যক্তিগত যে, ঠিক মতো এডিটিং না হলে কয়েক কোটি টাকার মানহানির মামলা যখন তখন হতে পারে। যাতে কোনও মতেই এমন কোনও কথা বাইরে বেরিয়ে না যায়, তার জন্য রয়েছে কড়া নজরদারি।

‘‘এখানে যা কথা হয় সেটা ২৪ ঘণ্টা আপনি দেখলে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে বাধ্য। আমরা যারা দেখছি, তাদেরও ঘুমের ওযুধ খেতে হচ্ছে। আর কিছু কিছু ব্যাপার যা হচ্ছে তা একেবারে অ্যাডাল্ট টেলিভিশনের কনটেন্ট। সেটা দর্শক দেখতে পাচ্ছেন না ঠিকই কিন্তু বুঝতে পারছেন তো নিশ্চয়ই,’’ বলেন প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে জড়িত এক অধিকর্তা।

কলকাতা ফিরেও শিলাজিতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে না

চার পাঁচ ঘণ্টা থাকার মধ্যে কি শুধু গালাগালি, কুটকচালি আর মিখাইল বোরার গল্প শুনলাম? তা কিন্তু নয়। হল প্রচুর গানবাজনা। শিলাজিতের সঙ্গে গলা মেলালেন কমলিকা ছাড়া বাড়ির সবাই। কমলিকা আর শিলাজিতের মধ্যে যে শুধু কথাবার্তাই নেই তা নয়, চলেছে সাঙ্ঘাতিক খিস্তিখেউড়ও।

ব্যাপারটা এতটাই সিরিয়াস যে কমলিকা বলেই ফেললেন, ‘‘শিলাজিতের থেকে নোংরা
মানুষ আমি দেখিনি কোনও দিন। কলকাতা ফিরেও আর ওই মানুষটার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব না। শুধু শিলাজিৎ নয়, ঋ-র সঙ্গেও কোনও সম্পর্ক নেই আমার।’’এর মধ্যেই হল প্রচুর খাওয়াদাওয়া। ভাত-ডাল-আলু পোস্ত-ডিমের তরকারি এবং শেষ পাতে ডেজার্ট। পরিবেশ এতটাই অদ্ভুত যে, একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসলেও ক্রমাগত চলতে থাকল পরষ্পরকে গালাগালি। ঋ যেমন কমলিকার সামনেই বলেন, ‘‘সারাদিন এত ন্যাকা ন্যাকা টোনে কথা বলে যে কী বলব? আমরা সবাই বিরক্ত। কমলিকাকে আর নেওয়া যাচ্ছে না।’’

খেয়ে উঠে গল্প করার সঙ্গে সঙ্গেই আদেশ এল ‘বিগ বস’য়ের হাউস ছেড়ে বেরিয়ে আসার। চোখ বন্ধ, হাত ধরে আবার দৈনন্দিন পৃথিবীতে ফিরে আসা। প্রত্যেক রোববারে এরকম করেই এক একজন বেরিয়ে আসেন এই বাড়ি থেকে। হিন্দিতে যেমন সলমন খান, বাংলায় এই শোয়ের হোস্ট অভিনেতা জিৎ। দর্শকরাও জিতের অ্যাঙ্কারিং স্টাইলের যথেষ্ট প্রশংসা করছেন। ‘‘জিৎ শুক্রবার রাতে আসে। ওর জন্য আমরা আলাদা বাংলোর ব্যবস্থা করেছি। শনিবার সকাল থেকে শ্যুটিং করে ও কলকাতায় ফেরে,’’ বলছিলেন কালার্স বাংলা-র বিজনেস হেড সুজয় কুট্টি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে শুধু নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচলাম না, এটুকু বুঝলাম ‘বিগ বস’ কিন্তু একেবারেই স্ক্রিপ্টেড নয়। এখানে যা ঘটেছে তা একেবারে সত্যি। কোনও ডায়লগই কেউ লিখে দিচ্ছে না। কোনও ডিরেক্টরই বলে দিচ্ছে না এ বার চেঁচাতে হবে। তবে আর কি কোনও দিন ‘বিগ বস’য়ের গুহাতে নেমন্তন্ন পেলেও যাব? এই কথাটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, এমন সময় মনে পড়ল রুদ্রনীল ঘোষের কথা, যিনি আগের বার ‘বিগ বস’‌য়ের বাড়িতে আড়াই মাস ছিলেন। বেরিয়ে এসে প্রথম কথাটি তিনি বলেছিলেন, ‘‘সব রিয়্যালিটি শো বারবার, বিগ বস একবার।’’ মনে হয়, ‘বিগ বস’‌য়ের বাড়িতে যে-ই যাবেন সে-ই একই কথা বলবেন।

আরও পডুন

ওহ, আপনি মিখাইল সরি, চাকরি হবে না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bigg Boss Jeet জিৎ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE