শ্যাম বেনেগাল। —ফাইল ছবি
এক সময়ে তাঁকে অন্য ধারার ভারতীয় ছবির অগ্রদূত বলা হতো। ১৯৭৪ সালে প্রথম ছবি ‘অঙ্কুর’ পরিচালনা করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তখন তরুণ শ্যাম বেনেগল। তার পরে পদ্ম ভূষণ, এবং একে একে আরও অন্যান্য... কিন্তু এখনও তিনি ছবি বানাতে চান, গল্প উপহার দিতে চান তাঁর দর্শককে। যদিও ‘ওয়েল ডান আব্বা’র পরে বলিউডে আর কোনও ছবি করেননি শ্যাম। অদূর ভবিষ্যতে কোনও প্রজেক্টে কি হাত দেবেন তিনি? ‘‘করতে তো চাই। কতকগুলো স্ক্রিপ্টও আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু প্রযোজক কই? যাঁরা প্রযোজনা করতে আসেন, তাঁরাই আমার ছবিতে কাজ করতে চান। আর যাঁদের কাছে আমি দরবার করতে যাই, তাঁরা বলেন, আপনার বিষয়টা খুব ভাল। কিন্তু আপনি বরং অমুক বিষয়টা নিয়ে বানান...’’ হাসিমুখেই বললেন শ্যাম বেনেগল।
ভারতীয় ছবি কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এখন? ‘‘বলিউড ছা়ড়াও এত আঞ্চলিক ছবির ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে আমাদের এখানে! একদম প্রথমে এক রকমের ছবি হতো। তার পরে নিউ ওয়েভ এল। আমাদের মতো পরিচালকরা কাজ শুরু করলেন। মাথায় রাখতে হবে, প্রতি বছর অসংখ্য ছবি তৈরি হয় এখানে। এবং এই এত ছবির সঙ্গে সঙ্গে সময়টাও প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে। খুব স্বাভাবিক কারণেই তাই ভারতীয় ছবি একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং যাবে,’’ বলছিলেন তিনি। এই এক্সপেরিমেন্টের চলটা শুরু হয়েছিল কিন্তু তাঁদের হাত ধরেই... তিনি, কুমার সহানি, গোবিন্দ নিহালনি, কেতন মেটা। শ্যামের কথায়, ‘‘এখন অবশ্য ইন্টারনেটই সবচেয়ে বড় চ্যানেল। ওয়েবে এখন এত ধরনের কাজ হচ্ছে, এবং ওয়েবের মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমাওয়ালারা এত ধরনের জঁরের সম্মুখীন হচ্ছেন যে, এক্সপেরিমেন্ট করাটা অনিবার্য হয়ে উঠছে। আমার মতে, ভারতীয় সিনেমার এখনকার অবস্থাটা বেশ ইন্টারেস্টিং। শুধু কনটেন্টের দিক থেকে নয়, এখন টেকনিকও ভীষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের ছবিতে।’’
মূল ধারার ছবি বলতে যা বোঝায়, সেগুলো মূলত বড় প্রযোজনা সংস্থা, বড় ব্যানার থেকে তৈরি হওয়া সিনেমা। এই ছবিগুলো কি বাজারের মোনোপলির কারণেই বিষয়গত দিক থেকে প্রায় এক? শ্যাম বিশদে ব্যাখ্যা করলেন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, ‘‘বাজার দখল করতে চাইলে মোনোপলি তো থাকবেই। কিন্তু বিষয়গত মিল থাকার কারণ চিন্তার দৈন্যতা। কোনও একটা ছক পরীক্ষিত ভাবে সফল নির্ধারিত হয়ে গেলে, সেটাকে আঁকড়ে ধরার প্র্যাকটিস আমাদের বরাবরই ছিল। কিন্তু পাশাপাশি দেখতে হবে, বেশ কিছু ছোট ছোট ছবি তৈরি হচ্ছে, যেগুলো নাটকীয় ভাবে সিনেমার মূল প্রাঙ্গণে জায়গা করে নিচ্ছে। তরুণ পরিচালকরা অনেক নতুন ছবি দর্শককে উপহার দিচ্ছেন। সে ভাবে দেখতে গেলে এখন কিন্তু বড় বাজেটের, বড় ব্যানারের ছবির সংজ্ঞাটা অনেকটা পাল্টেও গিয়েছে। তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে সাফল্য কেড়ে নিচ্ছেন নতুন পরিচালকরা। এখন তো বাণিজ্য আর উৎকর্ষকেও মিলিয়ে দিচ্ছেন পরিচালকরা।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘এখন তরুণ পরিচালকদের কাছে প্রতিযোগিতার সঙ্গে সঙ্গে সুযোগও বেশি। নিজেরা যদি এক বার ঠিক করে নিতে পারেন তাঁরা আসলে কী করতে চান, সুযোগ চলে আসবেই,’’ আশাবাদী শ্যাম।
নতুন পরিচালকদের মধ্যে কার উপরে সবচেয়ে বেশি ভরসা করছেন প্রবীণ পরিচালক? ‘‘অনুরাগ কাশ্যপ তো একা হাতে অনেকটা পাল্টে দিয়েছে ভারতীয় সিনেমার চালচিত্র। কি সিনেমায়, কি ওয়েব সিরিজ়ে। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন কনটেন্ট নিয়ে ও নিজে কাজ করছে, আনকোরা অন্য পরিচালকদের সুযোগও দিচ্ছে,’’ বললেন তিনি।
সম্প্রতি মুম্বই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে (মামি) ‘এক্সেলেন্স ইন সিনেমা অ্যাওয়ার্ড ইন্ডিয়া’ পেলেন শ্যাম। কিন্তু পুরস্কার-সম্মান নিয়ে তিনি অনাগ্রহী। ‘‘বুঝতেই পারি না, কেন আমাকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়! ‘মামি’র সঙ্গে প্রথম দিন থেকে আছি বটে। কিন্তু আমিই নিজেকে যোগ্য মনে করি না... বরং নিজেকে বেশ অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় আমার এখন,’’ হাসতে হাসতে বললেন প্রৌ়ঢ়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy