Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সিমরনের গোড়ায় গলদ

সন্দীপ কৌরের সত্যি ঘটনার আধারে গল্প বোনা হলেও, বলিউডি তড়কার অনেকটা মাল-মশলা ছবিতে মেশানো হয়েছে। তার কতটা চিত্রনাট্যকার অপূর্ব আশরানির অবদান, আর কতটাই বা কঙ্গনা রানাওয়াতের, সে বিতর্কে না হয় না-ই গেলাম!

ছবির একটি দৃশ্য

ছবির একটি দৃশ্য

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:১০
Share: Save:

এক যে ছিল সিমরন। সেলুলয়েডে তার আবির্ভাবের বিশ বছর পার। তবে ভারতীয় মেয়েদের সিংহভাগ এখনও তার দেখানো পথেই রাজের স্বপ্ন দেখে। সেই কালজয়ী সিমরন কিনা হয়ে উঠল এক ব্যাঙ্ক ডাকাতের ভুয়ো নাম! নাহ। প্রথমেই এর জন্য কাটা গেল অনেকটা নম্বর। পরিচালক হনসল মেটার ‘সিমরন’ ছবির শীর্ষনামের সঙ্গে গল্পের যোগসূত্র এটাই। তাও জানা যায় ছবির দ্বিতীয়ার্ধে। বাকি গল্পটা আটলান্টার এক গুজরাতি বিবাহবিচ্ছিন্না, বছর তিরিশের প্রফুল্ল পটেলের।

প্রফুল্লের নামের আগে বিশেষণগুলো পরপর ব্যবহারের কারণ আছে। গুজরাতি, তাই তার ইংরাজি উচ্চারণে বিশেষ টান লক্ষ করা যায়। মা-বাবার সঙ্গে সে মাঝেমধ্যেই শুদ্ধ গুজরাতি ভাষায় কথা বলে। বিবাহবিচ্ছিন্না, তাই বাবা তাকে প্রায়শই কাটা কাটা কথা শোনায়। আর তাই হোটেলে হাউজ-কিপিংয়ের চাকুরিরতা প্রফুল্ল নিজের বাড়ি কিনতে চায়। লাস ভেগাসে জুয়া খেলায় হাতেখড়ি নায়িকার। কাঁচা টাকা হাতে পেয়ে প্রফুল্ল কিনে নেয় পছন্দের দামি ড্রেস। সঙ্গে আগামী বিপদের পাসপোর্টও। মদ্যপ প্রফুল্ল জুয়া খেলার সময়ে এক লোন শার্কের কাছে টাকা নেয়। আর তা শোধ করার চক্করেই তাকে নামতে হয় ব্যাঙ্ক-ডাকাতির খেলায়।

ব্যাঙ্ক-ডাকাতি, আক্ষরিক অর্থেই, ছবিতে খেলার স্তরে পর্যবসিত হয়েছে। সন্দীপ কৌরের সত্যি ঘটনার আধারে গল্প বোনা হলেও, বলিউডি তড়কার অনেকটা মাল-মশলা ছবিতে মেশানো হয়েছে। তার কতটা চিত্রনাট্যকার অপূর্ব আশরানির অবদান, আর কতটাই বা কঙ্গনা রানাওয়াতের, সে বিতর্কে না হয় না-ই গেলাম!

তবে কঙ্গনা এই ছবিতে কি কুইন হয়ে উঠতে পারলেন? ‘কুইন’-এর রানি আর প্রফুল্ল ভিন্ন মাটির ছাঁচে গড়া। তবে দুঃখের বিষয়, প্রফুল্লের মধ্যেও রানি সিনড্রোম ফুটে ফুটে উঠেছে। কঙ্গনা-প্রেমীদের কাছে তিনি নারীবাদের অন্যতম মুখ। আবার নিন্দুকদের চোখে, তিনি মানসিক রোগী। প্রফুল্ল চরিত্রটা নিয়েও নারীবাদীরা কাটাছেঁড়া করতে পারেন। তবে সকলেই একবাক্যে মানবেন, প্রফুল্লকে ভালবাসা যায় না। রানির মতো সে মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিতে পারে না। আদর্শ থেকে অনেক দূরে, ভাবনাচিন্তা, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে অগোছালো প্রফুল্লের চরিত্রে কঙ্গনা বিশ্বাসযোগ্য। আর এখানেই তিনি তাঁর স্বভাবোচিত ছক্কা মেরেছেন।

কঙ্গনার এই অভিনয়কে কাজে লাগাতে পারলেন না হনসল মেটা। তাঁর অপটু পরিচালনা আর অপূর্বের দুর্বল চিত্রনাট্যে ছবির দ্বিতীয়ার্ধ অসহনীয়। আমেরিকার পুলিশ আর ব্যাঙ্ককর্মীদের কার্টুন চরিত্রের মতো দেখানো হয়েছে। তবে কঙ্গনার হবু বরের চরিত্রে সোহম শাহ নজর কেড়েছেন। শচীন-জিগারের সংগীত মনোরম। তবে ‘পিঞ্জরা তোড় কে’ গানটি ফের ‘কুইন’-এর ‘জুগনি’র কথা মনে করিয়ে দেয়। অরিজিৎ সিংহের কণ্ঠে ‘মিত’ নতুন লভ অ্যানথেমের জায়গা নিতে পারে।

বলিউডে ফেমিনিজম এখন হটকেক। বিভিন্ন ধরনের মহিলা চরিত্র নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, তা মন্দ নয়। তা বলে পরিচালক যদি কঙ্গনার অফস্ক্রিন ব্যক্তিত্বকে সেলিব্রেট করার জন্য এই ছবি বানিয়ে থাকেন, তা হলে সমূহ বিপদ। আর সেই বিপদের আভাস ছবির অনেক জায়গাতেই প্রকট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE