মনীষা কৈরালা
প্র: মধ্য চল্লিশে নতুন করে কেরিয়ার শুরু করা কতটা কঠিন?
উ: কেরিয়ারের প্রথম দিন থেকেই শর্ত ছিল, ভাল চিত্রনাট্য ছাড়া কাজ করব না। ‘ডিয়ার মায়া’র গল্পটার মধ্যে একটা ইতিবাচক দিক ছিল। সেটাই ভাল লেগেছিল। এই বয়সে এসে নাচ-গান করতে আর ভাল লাগে না। এক সময়ে করেছি এবং উপভোগও করেছি। এখন নিজের বয়স অনুযায়ী কাজ করব। এ আর রহমানের প্রযোজনায় ‘নাইনটি নাইন সংস’ ছবি করছি। রহমানই আমাকে ছবির প্রস্তাব দেন। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কাজ করলাম।
প্র: নার্গিস দত্তর চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি কেমন ছিল?
উ: চরিত্রটার প্রস্তাব পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। তবে পরের মুহূর্তেই উপলব্ধি করি, কাজটা কত কঠিন! নার্গিসজির কিছু ছবি, ওঁর উপর তৈরি হওয়া তথ্যচিত্র দেখেছি। প্রিয়াজির (সঞ্জয়ের বোন) সঙ্গে আমার বন্ডিং খুব ভাল। যখন উনি শুনেছিলেন, আমি এই চরিত্রটা করছি, অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন আমাকে। উনি নার্গিসজিকে নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন। সেটা আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন। বাবার (সঞ্জয় দত্ত) সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পাইনি। নার্গিসজির হাঁটাচলা, চাহনি, হাসি পর্দায় ফুটিয়ে তোলা বেশ কঠিন ছিল।
প্র: দশ বছর পরে স়ঞ্জয় দত্তের সঙ্গে কাজ করছেন। অভিজ্ঞতা কী রকম?
উ: বাবার সঙ্গে কাজের অনুভূতি সব সময়ে আলাদা। আমরা ছ’টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। বাবা যে ভাবে খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, সেটা সকলে পারে না। আমি ওকে সেই সময়ে দেখেছি। তামিল ছবি ‘প্রস্থানম’-এর হিন্দি রিমেকে আমরা ফের একসঙ্গে কাজ করছি। ওই ছবিতে জ্যাকি শ্রফও আছে। জ্যাকি দাদা আর বাবার সঙ্গে আমার কমফর্ট লেভেল খুব ভাল।
প্র: বিয়ের পরে অভিনেত্রীদের ভাল চরিত্র পেতে অপেক্ষা করতে হয়। আপনার কী মত?
উ: মায়ের চরিত্রে টাইপকাস্ট হতে খুব ভয় পাই। তাই আমাকে সতর্ক থাকতে হয়। একটা-দুটো ছবিতে মায়ের চরিত্র করা যায়। কিন্তু সব সময়ের জন্য নয়। ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ খান, সলমন খান পঞ্চাশ পেরিয়েও নায়কের চরিত্র করছেন। যে দিন মধ্য চল্লিশের অভিনেত্রীরা ছবিতে লিড রোল পাবেন, সে দিন বুঝতে হবে সময় বদলেছে।
প্র: বাণিজ্যিক ও ভিন্নধারার ছবির মধ্যে আপনি সমতা রাখতে পেরেছিলেন। এক সময়ে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকও পেতেন। এখনকার নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে পারিশ্রমিকের বৈষম্য নিয়ে কী বলবেন?
উ: খুব অল্প বয়সে কাজ করতে শুরু করি। তখন নিজেকে নিয়ে বেশি সচেতন ছিলাম না। বোধ-বুদ্ধিও তেমন ছিল না। এমনও দিন গিয়েছে, যখন আমার বারোটা ছবি ফ্লোরে ছিল। দিনে তিনটে শিফটেও কাজ করেছি। ভাল পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে সব সময় ছিল। সেটা না হলে অন্তত পারিশ্রমিক যেন ভাল পাই, সে বিষয়ে বরাবর স্ট্রিক্ট ছিলাম। দীপিকা পাড়ুকোন, অনুষ্কা শর্মা, আলিয়া ভট্ট... এরা সকলেই পরিশ্রমী ও প্রতিভাবান। নায়কদের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। তবে এখনও পারিশ্রমিকের বৈষম্য কেন রয়েছে, তা ঠিক জানা নেই।
প্র: ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে সবচেয়ে কঠিন পর্ব কোনটা ছিল?
উ: আমার পরিবার, বিশেষ করে মা প্রতি পদক্ষেপে আমাকে সাহায্য করেছেন। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতাম, কান্নাকাটি করতাম। নিউ ইয়র্কে যখন চিকিৎসার জন্য ছিলাম, নিজের চোখে দেখেছি সকলে কত একলা! হতাশ হয়ে বসে থাকত। মনে মনে ঠিক করেছিলাম, নিজেকে এ ভাবে শেষ করব না। যদি মরতেই হয়, সাহসের সঙ্গে লড়াই করব। আমার চুল যখন পুরো উঠে গিয়েছিল, তখন আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। মা বোঝাতেন যে, আমি নিজেই পারব নিজের সঙ্গে লড়াই করতে। হাল ছাড়িনি। তাই হয়তো এই লড়াইয়ে জিততে পারলাম।
প্র: ডিভোর্সের পরে কখনও কি তিক্ততা গ্রাস করেছে?
উ: একদমই নয়। সিঙ্গল স্টেটাস উপভোগ করছি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে একটা জিনিস উপলব্ধি করেছি, কাজ মানুষকে সব সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে। তাই পরপর ছবি করছি। আমি এই মুহূর্তে জীবনকে দারুণ উপভোগ করছি। কোনও তিক্ততা নেই। যারা আমাকে পায়নি, সেটা তাদের অপ্রাপ্তি। আমার প্রথম ভালবাসা আমার কাজ। শেষ ভালবাসা কি না, তা অবশ্য বলতে পারব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy